বাংলার গ্রামীণ রান্নাঘরে মাছ, চিংড়ি আর মাংস যতই আভিজাত্যের গন্ধ ছড়াক, জলাভূমি আর পুকুরের গভীরে লুকিয়ে আছে পুষ্টিকর খাদ্য গেঁড়ি গুগলি। বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তে ‘পেরিউইঙ্কল’ নামে পরিচিত এই শামুক, বাংলার গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে 'গরিবের মাংস' নামে খ্যাত।
পুকুর থেকে রান্নাঘর
কাদা মাখা অগভীর জলাশয়, সেখানেই গেঁড়ি গুগলির স্বর্গরাজ্য। স্থানীয়রা দক্ষ হাতে সেগুলো সংগ্রহ করে আনে। রান্নার আগে একাধিকবার ঘষে ধুয়ে নেওয়া হয়, যাতে মাটি ও স্বতন্ত্র গন্ধ সরে যায়। এই ধাপটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ—না হলে খাবারে কাঁচা গন্ধ থেকে যায়।
কেন ‘গরিবের মাংস’?
শহরের বাজারে গেঁড়ি গুগলির দেখা মেলে না বললেই চলে। এর কারণ বাণিজ্যিক চাহিদা কম, সঙ্গে খোসার ঘোলাটে রূপ ও তীব্র গন্ধ অনেকের অনীহা বাড়ায়। তবে গ্রামীণ পরিবারের কাছে এটি সুলভ প্রোটিনের অন্যতম উৎস—মুরগি বা খাসির বিকল্প হিসেবে নির্ভরযোগ্য খাবার।
রান্নার কৌশল
গেঁড়ি গুগলি রান্না একপ্রকার ধৈর্যের পরীক্ষা। সেদ্ধ করার পর খোলস থেকে মাংস বের করে আলু, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ ও টমেটো দিয়ে সরিষার তেলে কষানো হয়। পোস্তো সহযোগে রান্না করলে তৈরি হয় স্বাদে ভরপুর ‘পোস্তো গুগলি’—যা ভাতের সঙ্গে দারুণ মানায়। অতিরিক্ত রান্না করলে মাংস রাবারের মতো হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
শহুরে রান্নায় প্রবেশ
যেখানে গেঁড়ি গুগলি দীর্ঘদিন গ্রামীণ রান্নার গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ ছিল, সেখানে কলকাতার রাঁধুনিরা এখন এটিকে আধুনিক খাবারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করছেন।
ঐতিহ্যের প্রতীক
গেঁড়ি গুগলি শুধু খাবার নয়, এটি বাংলার ঐতিহ্যবাহী পোস্তো-সংস্কৃতির প্রতিফলন, যেখানে প্রকৃতির সহজ উপহারকে সৃজনশীলতা ও পরিশ্রমে রূপান্তরিত করা হয় পুষ্টিতে। বিশ্ব যখন টেকসই খাদ্যের পথে হাঁটছে, গেঁড়ি গুগলি মনে করিয়ে দেয়—ভালো খাবার মানেই সবসময় বিলাসিতা নয়।