বর্তমান সময় কোষ্ঠকাঠিন্য সাধারণ সমস্যা হয়ে উঠেছে। শীতকালে এই সমস্যাটা একটু বেশি বাড়ে। জীবনযাত্রা , অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, শরীরে ফাইবারের অভাব, স্ট্রেস ও আরও বেশ কিছু কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। এই সমস্যা যে কোনও বয়সের মানুষেরই হতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে পরিপাকতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং মল ত্যাগ করতে সমস্যা হয়। জানুন কীভাবে সহজে মুক্তি পাবেন এই সমস্যা থেকে।
কোষ্ঠকাঠিন্য এমন একটি সমস্যা, যা বেশিরভাগ মানুষ উপেক্ষা করে। কোনও ওষুধ, জোলাপ বা ল্যাক্সেটিভ খেয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য সাময়িক দূর করা গেলেও, এই সমস্যার সম্পূর্ণ সমাধান জরুরি। অনেকে আবার জোলাপে আসক্ত হয়ে পড়েন। কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়ার সবচেয়ে ভাল উপায় হল জীবনযাত্রার পরিবর্তন। যার মধ্যে অনেক বেশি করে জল, ফাইবার ডায়েট এবং শারীরিক কার্যকলাপ অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। এছাড়াও, যতটা সম্ভব মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকতে হবে।
স্ট্রেস
স্ট্রেস সাধারণত মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে জড়িত। তবে এটি পরিপাকতন্ত্রকেও প্রভাবিত করে। চাপে থাকলে, আমাদের বিপাককে প্রভাবিত করে। যার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়েরিয়া হতে পারে। মানসিক চাপ এড়াতে, আপনি ধ্যান করতে পারেন বা বিরতি নিতে পারেন এবং ছুটিতে যেতে পারেন।
ফাইবার
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। কিন্তু ফাইবার খুব বেশি ব্যবহার করা যাবে না। কারণ এটি কোষ্ঠকাঠিন্যের ওষুধ নয়। এমন অবস্থায় আঁশ যুক্ত খাবার খাওয়ার পাশাপাশি যতটা সম্ভব জল পান করুন।
মাংস
অনেকে ভাবেন বেশি মাংস খেলে পরিপাকতন্ত্রের উন্নতি হবে। কিন্তু বাস্তবে ঘটে উল্টোটা। মাংস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়ে। পরিপাকতন্ত্রের উন্নতির জন্য ফাইবার সমৃদ্ধ খাদ্য, গোটা শস্য, ফলমূল, শাকসবজি এবং ডাল আপনার খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
গুড় ও ঘি
পুষ্টিবিদ জানাচ্ছেন, দুপুরের খাবারের পর গুড় ও ঘি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এর জন্য এক চামচ ঘি ও এক চামচ গুঁড়ো গুড় মিশিয়ে নিন। ঘি ও গুড় একসঙ্গে খেলে শরীরের সব টক্সিন সহজেই শরীর থেকে বের হয়ে যায়।
তরমুজ
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য তরমুজকে উপকারী বলে মনে করা হয়। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে জল এবং ফাইবার রয়েছে। কিন্তু তরমুজ না থাকলে কলাও খেতে পারেন। খাওয়ার পর এটি খান।
তিল
কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য তিল খুব ভাল বলে মনে করা হয়। এতে রয়েছে ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজ যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। আপনি রুটির সঙ্গে তিল যোগ করে খেতে পারেন। এটি কোষ্ঠকাঠিন্যে জাদুর মতো কাজ করে।
পেঁপে
পেঁপেকে কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য অত্যন্ত শক্তিশালী ফল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা, আপনার পরিপাকতন্ত্রকে পরিষ্কার করতে কাজ করে এবং এটিকে শক্তিশালী করে। এছাড়াও এতে প্যাপেইন নামক একটি বিশেষ এনজাইম রয়েছে যা খাবার হজম করতে সাহায্য করে।
কিউই ও নাশপাতি
কিউইতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। প্রতিদিন কিউই খেলে পেট ভিতর থেকে পরিষ্কার হয়। প্রতিদিন মাত্র ১ বা ২ টি কিউই খেলে অনেক উপকার মিলবে। এছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসায় নাশপাতি খুবই উপকারী বলে মনে করা হয়। এতে দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয় উভয় ফাইবার রয়েছে।
কোষ্ঠকাঠিন্য গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রোগ বা ক্যান্সারের মতো গুরুতর রোগের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য থাকা মাত্রই আপনার কোনও বিরল রোগ আছে। কোষ্ঠকাঠিন্যের বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই জীবনধারা এবং খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কিত। এটি কোনও ছোট সমস্যা নয়। আপনার যদি ক্রমাগত কোষ্ঠকাঠিন্য হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।