খারাপ জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসের কারণে মানুষ সহজে অনেক কঠিন রোগের শিকার হচ্ছে। এসব রোগের মধ্যে একটি হল উচ্চ রক্তচাপ। শুধু ভারতেই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন বিপুল সংখ্যক মানুষ। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা অনেক কারণে হতে পারে, যার মধ্যে প্রধানত একটি হল অত্যাধিক চাপযুক্ত ব্যস্ত জীবন এবং কম শারীরিক পরিশ্রম।
উচ্চ রক্তচাপ এখন একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এখন কেবল বয়স্করাই নয়, তরুণরাও ভুগছেন এই সমস্যায়। উচ্চ রক্তচাপ তখন ঘটে যখন ধমনীতে রক্ত প্রবাহের জন্য প্রয়োজনীয় চাপ স্বাভাবিকের চেয়ে ধারাবাহিকভাবে বেশি থাকে।
নীরব ঘাতক
উচ্চ রক্তচাপকে প্রায়শই নীরব ঘাতক বলা হয়। কারণ প্রাথমিকভাবে এর কোনও স্পষ্ট লক্ষণ দেখা যায় না। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি হৃদপিণ্ড, মস্তিষ্ক, কিডনি এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গগুলির গুরুতর ক্ষতি করতে পারে। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন (AHA) এবং আমেরিকান কলেজ অফ কার্ডিওলজি (ACC) প্রাপ্তবয়স্কদের উচ্চ রক্তচাপ সনাক্তকরণ এবং প্রতিরোধ করার জন্য নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে।
উচ্চ রক্তচাপ মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন এবং আমেরিকান কলেজ অফ কার্ডিওলজির নতুন নির্দেশিকাগুলিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, উচ্চ রক্তচাপ মস্তিষ্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং জ্ঞানীয় অবক্ষয় এবং ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। আপনি যদি কিছু ভুলে যান বা চিন্তাভাবনা করতে এবং বুঝতে সমস্যা হয়, তাহলে অবশ্যই আপনার রক্তচাপ পরীক্ষা করানো উচিত। যদি আপনার রক্তচাপ বেশি থাকে, তাহলে মাত্রা কমানো ভবিষ্যতে আপনার মস্তিষ্ক এবং হার্টকে রক্ষা করতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ হার্টের জন্য বিপজ্জনক
স্ট্রোকের ঝুঁকির সবচেয়ে বড় কারণ হল, উচ্চ রক্তচাপ। এর পাশাপাশি, উচ্চ রক্তচাপ করোনারি ধমনী রোগ, হার্ট ফেইলিওর এবং অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন (AFib)-র মতো গুরুতর হৃদরোগজনিত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা
গর্ভাবস্থায় বা সন্তান প্রসবের পরে মহিলাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা হতে পারে। যার মধ্যে প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার মতো বিপজ্জনক অবস্থা অন্তর্ভুক্ত। অতএব, গর্ভাবস্থায় এবং পরে আপনার নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করা উচিত। এই সময়ে, মাথাব্যথা, পেট ব্যথা, বুকে ব্যথা, পেট ফোলাভাব বা শ্বাসকষ্টের মতো লক্ষণগুলির উপর বিশেষ নজর রাখা উচিত।
স্বাভাবিক রক্তচাপ কত হওয়া উচিত?
সিস্টোলিক (উপরের সংখ্যা) ১২০-র কম এবং ডায়াস্টোলিক (নীচের সংখ্যা) ৮০-র কম হওয়া উচিত সাধারণভাবে। যদি আপনার রক্তচাপ বেশি হয়, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন। যদি সিস্টোলিক ১৮০-র বেশি হয়, অথবা ডায়াস্টোলিক ১২০-র বেশি হয়, তাহলে এটি বিপজ্জনক হতে পারে। এই সময়ে যদি আপনার বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট এবং শ্বাস নিতে অসুবিধা হয়, দুর্বলতা অনুভব করেন, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
খাদ্যাভ্যাসের প্রতি বিশেষ যত্ন
স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। লবণ কম খাওয়া, নিয়মিত ফল ও শাকসবজি, গোটা শস্য এবং বাদাম খাওয়া জরুরি। ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যায়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। লবণ এবং অ্যালকোহল গ্রহণ উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকির কারণ। তাই এই দুটি অভ্যাসই দ্রুত পরিবর্তন করা উচিত।
মনে রাখা জরুরি
* রক্তচাপ যে কোনও বয়সের ব্যক্তির উপর প্রভাব ফেলতে পারে, তাই নিয়মিত চেকআপ করা প্রয়োজন।
* সঠিক রক্তচাপ পরীক্ষা করার জন্য, সোজা হয়ে বসুন, উভয় পা মাটিতে রাখুন এবং আপনার হাত হৃদপিণ্ডের কাছে রাখুন।
* জীবনধারার পরিবর্তন যেমন সঠিক ডায়েট, প্রতিদিনের ব্যায়াম, ওজন নিয়ন্ত্রণ, অ্যালকোহল কমানো এবং মানসিক চাপ এড়ানো।
* আপনার যদি উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকে, তাহলে প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খান।
* ডায়াবেটিস, থাইরয়েড বা স্লিপ অ্যাপনিয়ার দিকেও মনোযোগ দিন, কারণ এগুলি উচ্চ রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে।