জীবনযাত্রা, স্ট্রেস, দূষণ ইত্যাদি নানা কারণে বর্তমান পিরিয়ডসের নানা সমস্যায় ভুগছেন বহু মহিলারা। এই সমস্যা মূলত দেখা যায় ১৫ থেকে ৩৮৫ বছর বয়সীদের মধ্যে। কেউ ভুগছেন অনিয়মিত পিরিয়ডসের সমস্যায়, তো কারও আবার দেখা দিচ্ছে অতিরিক্ত রক্তপাত। এর মধ্যে বর্তমানে বহু মহিলা ভোগেন পলিসিস্টিক ওভারি ডিসঅর্ডার (Polycystic Ovary Disorder/ PCOD) বা পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (Polycystic Ovary Syndrome/ PCOS)। গত কয়েক বছরে নারীদের মধ্যে এই সমস্যা দ্রুত বেড়েছে। এই দুই হরমোনজনিত সমস্যাই প্রাথমিকভাবে সনাক্ত না করা হলে, পরে গুরুতর রূপ নিতে পারে।
পিসিওএস (PCOS) একটি খুবই সাধারণ হরমোনজনিত ব্যাধি যা বিশ্বব্যাপী মহিলাদের প্রভাবিত করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, এই সমস্যাটি ৬ থেকে ১৩ শতাংশ মহিলাকে প্রভাবিত করে বলে মনে করা হয়। তবে ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে চিকিৎসা করা হয় না। পিসিওএস-এ আক্রান্ত মহিলাদের ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে ওজন বাড়ালে, তা কমানো খুবই কঠিন।
মহিলারা তাদের বর্ধিত ওজন নিয়ে খুব চিন্তিত থাকেন। তবে, যদি আপনি পিসিওএস-এ আক্রান্ত হন এবং ওজন কমাতে চান, তাহলে এর জন্য আপনাকে জীবনযাত্রায় বড় পরিবর্তন আনতে হবে এবং কঠোর পরিশ্রম ও নিষ্ঠার সঙ্গে তা অনুসরণ করতে হবে।
নিয়মিত ব্যায়াম
পিসিওএস-এ আক্রান্ত মহিলাদের জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের স্বাস্থ্যের জন্য তাদের এই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। প্রাপ্তবয়স্কদের দিনে কমপক্ষে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করা উচিত। ওজন নিয়ন্ত্রণ সহ শারীরিক কার্যকলাপ সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি। যদিও ওজন হ্রাস ধীরে ধীরে শুরু হতে পারে, ব্যায়াম অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে।
স্বাস্থ্যকর চর্বি গ্রহণ বৃদ্ধি
খাবারে বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্যকর চর্বি অন্তর্ভুক্ত করলে মহিলাদের খাওয়ার পরে পেট ভরে যাওয়ার অনুভূতি হয়। এটি আপনাকে অতিরিক্ত খাওয়া এড়াতে সাহায্য করতে পারে। আপনার খাদ্যতালিকায় অ্যাভোকাডো, অলিভ অয়েল, নারকেল তেল এবং পিনাট বাটারের মতো স্বাস্থ্যকর চর্বি সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন।
কার্বস কমানো
কম কার্বোহাইড্রেট খাওয়া পিসিওএস রোগীদের ওজন কমাতে এবং তাদের বিপাক বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারে। তবে এর অর্থ এই নয় যে, আপনি আপনার খাদ্যতালিকা থেকে কার্বোহাইড্রেট সম্পূর্ণরূপে বাদ দেবেন। ডায়েটে প্রোটিন এবং শাকসবজি অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি, গমের রুটি খান, যা ফাইবার এবং অন্যান্য খনিজে সমৃদ্ধ।
প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে দূরে
অতিরিক্ত চিনিযুক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে এবং ওজনও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করতে পারে। কেক, পেস্ট্রি, মিষ্টিতে প্রচুর পরিমাণে চিনি এবং প্রক্রিয়াজাত কার্বোহাইড্রেট থাকে।
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ
মানসিক চাপ ওজন বৃদ্ধির একটি কারণ হতে পারে। চাপ আপনার শরীরে কর্টিসল নামক একটি হরমোন বৃদ্ধি করে, যা অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি দ্বারা উৎপাদিত হয়। যদি দীর্ঘ সময় ধরে কর্টিসলের মাত্রা বেশি থাকে, তাহলে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে এবং শরীরে ইনসুলিন সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, যাকে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বলা হয়। প্রতিদিন কিছুক্ষণ ধ্যান করার চেষ্টা করুন এবং কর্টিসলের মাত্রা বজায় রাখার জন্য সঠিক পরিমাণে ঘুমান।