'ফিট থাকতে হলে রোজ ১০ হাজার পা হাঁটুন,' আজকাল অনেক ফিটনেস ইনফ্লুয়েন্সারদেরই এমনটা বলতে শোনা যায়। স্মার্টওয়াচেও অনেক সময় ১০ হাজার স্টেপ হচ্ছে কিনা, তার একটা কাউন্টডাউন 'ইন-বিল্ট' করা থাকে। একজন সাধারণ ব্যক্তির, মাঝারি স্পিডে হাঁটলেও ১০ হাজার পা যেতে অন্তত ১০০ মিনিট সময় লাগে। বলাই বাহুল্য, এখনকার ব্যস্ত রুটিনে তা সবার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে এই নিয়ে বেশি চিন্তিত হওয়ারও কিছু নেই। কেন? কারণ এক সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা বলছে, সুস্থ থাকতে রোজ যে ১০ হাজার পা-ই হাঁটতে হবে, এমন কোনও মানে নেই। বরং ৭ হাজার পা হাঁটলেও উপকার পাবেন। শরীর ভাল থাকবে, সুস্থ থাকবেন। এমনকি হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও ডিপ্রেশনের ঝুঁকিও অনেকটাই কমবে। ৭ হাজার পা হাঁটতে সময়ও অনেক কম লাগবে। ১ ঘণ্টা ১৭ মিনিট গড়ে। ফলে ৪০ মিনিট মর্নিং বা ইভিনিং ওয়াক, আর বাকি সারাদিনের হাঁটাহাঁটিতেই টার্গেট পূরণ হয়ে যাবে।
১০ হাজার পা নয়, ৭ হাজারই যথেষ্ট!
এতদিন বিশেষজ্ঞরা মনে করতেন, দিনে ১০,০০০ পা হাঁটলে শরীর ভালো থাকে। কিন্তু ‘The Lancet Public Health’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা বলছে, এতটা হাঁটার দরকার নেই।
প্রায় ১.৬ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্কদের ওপর ৫৭টি স্টাডি বিশ্লেষণ করেই এমনটা বলা হচ্ছে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে,
দিনে ৭,০০০ কদম হাঁটাই যথেষ্ট।
এতেই হৃদরোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, ডিমেনশিয়া, ডিপ্রেশনের লক্ষণ কমে।
সেই সঙ্গে অকাল মৃত্যুর সম্ভাবনাও প্রায় ৪৭ শতাংশ কমে যায়।
হাঁটার উপরেই উপকার নির্ভর করছে
গবেষকরা বলছেন,
৫ থেকে ৭ হাজার পা হাঁটুন। তাতেই শরীরে ইতিবাচক পরিবর্তন খেয়াল করবেন।
কেউ যদি এর চেয়ে বেশি হাঁটতে পারেন, তাতে কোনও সমস্যা নেই। বরং আরও বাড়তি লাভ হবে।
তবে ৭,০০০ পা অন্তত হাঁটতে হবেই।
৭ হাজার পা হাঁটলে কী লাভ হবে?
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দিনে ৭,০০০ পা হাঁটলে দারুণ উপকার পাবেন। এতে-
অকাল মৃত্যুর আশঙ্কা ৪৭% কমবে
হার্ট অ্যাটাক ও হৃদরোগের ঝুঁকি ২৫% কমে
হৃদরোগে মৃত্যু ৪৭% কমে
ক্যানসারে মৃত্যু ৩৭% কমে
টাইপ-২ ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা ১৪% কমে
ডিমেনশিয়ার সম্ভাবনা ৩৮% কমে
ডিপ্রেশন সম্ভাবনা ২২% কমে
পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ২৮% কমে
এমনকি যারা দিনে মাত্র ৪,০০০ স্টেপও হাঁটেন, তাঁদেরও মৃত্যু ঝুঁকি ২,০০০ কদম হাঁটা ব্যক্তিদের তুলনায় ৩৬% কম।
এছাড়াও নিয়মিত হাঁটলে
হার্ট ভাল থাকে: হাঁটলে ব্লাড প্রেসার ও কোলেস্টেরল কমে, ফলে হৃদরোগের আশঙ্কা কমে যায়।
মস্তিষ্কের উন্নতি: স্মৃতিশক্তি বাড়ে, মন ভাল থাকে, ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমে।
ওজন কমে: হাঁটলে ক্যালোরি বার্ন হয়, ফলে ওজন কমে।
পেশি ও জয়েন্টে জোর বাড়ে: বয়স্করা নিয়মিত হাঁটলে হাঁটুর ব্যথা, বাতের সম্ভাবনা কমবে।
স্ট্রেস কমে: পার্ক বা গাছগাছালি ঘেরা কোথাও হাঁটুন। এতে মন শান্ত হবে। দুশ্চিন্তা দূর হবে।
ঘুম ভাল হয়: নিয়মিত হাঁটলে ঘুম আরও গভীর হবে। তবে রাতে শুতে যাওয়ার ৪ ঘণ্টার মধ্যে খুব বেশি জোরে হাঁটাহাঁটি করবেন না। তাতে হিতে বিপরীত হবে।