গর্ভাবস্থায় অধিকাংশ মহিলাদের যন্ত্রণা কমানোর জন্য চিকিৎসকরা 'প্যারাসিটামল' ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এই ওষুধ মোটেও এই অবস্থায় থাকা মহিলাদের জন্য ভালো নয়। কারণ, প্রেগন্যান্ট মহিলাদের ক্ষেত্রে প্যারাসিটামল (অ্যাসিটামিনোফেন) ওষুধের প্রভাব নিয়ে নতুন করে সতর্ক হওয়ার সময় এসে গিয়েছে।
এমনিতেও প্যারাসিটামল খুব বেশি খাওয়া উচিত নয়। তাতে লিভারের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে এই ওষুধ প্রেগনেন্ট অবস্থায় খেলে সমস্যা আরও বড় আকার নিতে পারে। তাই আগে থেকেই সাবধান হওয়া জরুরী।
কী হতে পারে?
গর্ভাবস্থায় এই 'সাধারণ' ওষুধটির প্রভাবে সন্তানের স্নায়বিক বিকাশে গুরুতর সমস্যা তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে এক নতুন গবেষণা। এতে বলা হয়েছে, গর্ভস্থ অবস্থায় মায়ের প্যারাসিটামল খেতে থাকলে শিশুর মধ্যে 'অটিজম' এবং অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
সাধারণত মাথাব্যথা, জ্বর বা ব্যথা নিয়ন্ত্রণে প্যারাসিটামলকে নিরাপদ মনে করা হয়। কিন্তু হার্ভার্ড ও ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ১ লক্ষেরও বেশি অংশগ্রহণকারীর উপর হওয়া ৪৬টি আন্তর্জাতিক গবেষণায় বিশ্লেষণ করে জানিয়েছেন, উচ্চমানের গবেষণাগুলিতে
গর্ভাবস্থায় প্যারাসিটামল খাওয়া ও শিশুদের নিউরোডেভলপমেন্টাল ঝুঁকির মধ্যে সুস্পষ্ট সম্পর্ক পাওয়া গিয়েছে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, প্যারাসিটামল প্লাসেন্টা পেরিয়ে ভ্রূণের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এর ফলে অক্সিডেটিভস্ট্রেস, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা এবং এপিজেনেটিক পরিবর্তন ঘটতে পারে, যা ভ্রূণের মস্তিষ্কের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। উল্লেখ্য, বিশ্বজুড়ে অটিজমের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এই গবেষণা নীতি-নির্ধারণী স্তরে নতুন ভাবনার দিক উন্মোচন করেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে গবেষকরা জানিয়েছেন, তাঁদের কাজ সরাসরি প্রমাণ করে না যে প্যারাসিটামলই এই সমস্যার কারণ। তবে প্রমাণগুলো শক্তিশালী, যা উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। গবেষক দলের পরামর্শ, চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে সীমিত সময়ের জন্যই গর্ভবতী নারীদের প্যারাসিটামল ব্যবহার করা উচিত। বিষয়টি বোঝার জন্য নতুন গবেষণার প্রয়োজনীয়তাও জোর দিয়ে বলা হয়েছে।