'আমি সব নিয়ম জানি। তাই আমাকে এখন নিয়ম বোঝাতে বসবেন না যেন।' এই কথা বলেই ভাইরাল 'কৌন বানেগা ক্রোড়পতি'-তে অংশগ্রহণকারী ঈশিত ভট্ট। পঞ্চম শ্রেণির ঈশিতকে নিয়ে চারিদিকে নিন্দার ঝড়। অনেকেই তার আচরণের জন্য 'পাকা বাচ্চা' বলতেও পিছপা হচ্ছেন না।
কী বলে ঈশিত?
এ দিনে শুরুতেই অমিতাভ বচ্চনকে 'সম্মান না দিয়েই' সে বলে, 'আমি সব নিয়ম জানি। তাই আমাকে এখন নিয়ম বোঝাতে বসবেন না যেন।' এখানেই শেষ নয়, এর পর তাকে প্রশ্নের পর বলতে শোনা যায়, 'আরে, অপশন দাও!' এছাড়াও একাধিক বার নিজের মতো করে ঔদ্ধত্বের পরিচয় দেয় ঈশিত। আর সেই কারণেই তাকে নিয়ে খাপ্পা সোশ্যাল মিডিয়া। সকলেই তাকে 'পাকা বাচ্চা', 'অত্যধিক স্মার্ট বাচ্চা' বলতে আগ্রহী।
আর এমন চর্চাবহুল সময়ে বাচ্চাটির মানসিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে বাংলা.আজতক.ইন-এর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করেছিলাম কলকাতার বিশিষ্ট সাইকিয়াট্রিস্ট ডাঃ দেবাঞ্জন পানের সঙ্গে।
কী বললেন তিনি?
'বাচ্চাটির মধ্যে ওভারকনফিডেন্স স্পষ্টতই লক্ষ হচ্ছে। সে প্রশ্ন শোনার আগেই উত্তর দিয়ে দিচ্ছে। আর এটা একটা বিশেষ মানসিক পরিস্থিতির দিকে ইঙ্গিত করে। এর পিছনে থাকতে পারে আচরণগত সমস্যা। পাশাপাশি অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস এবং ঔদ্ধত্বও আছে ওর মধ্যে। আর এই সব কিছু মিলিয়ে মিশিয়েই বাচ্চাটির অমিতাভ বচ্চনের মতো একজন লেজেন্ডের সামনে বসে এই আচরণ লক্ষ্য করা গিয়েছে।', এমনটাই বললেন ডাঃ পান।
এটা কি কোনও রোগের লক্ষণ?
'এভাবে টিভিতে দেখেই কারও রোগ নিয়ে কথা বলা ঠিক নয়। কারণ, এমন আচরণের পিছনে হাজার কারণ থাকতে পারে।', নিজের বক্তব্যে এমনটাই বলেন তিনি।
অভিভাবকদের নিতে হবে দায়িত্ব
এই প্রসঙ্গে ডাঃ পান বলেন, 'বড়দের সম্মান করার বিষয়টা আমরা পরিবারের কাছে শিখি। বাবা-মা, পরিবারের অন্যান্যরা এই শিক্ষা দেয় আমাদের। তবে বর্তমানে নিউক্লিয়ার পরিবারে এই সম্মান দেওয়ার কৌশলটা শেখানোর লোক নেই। তাই বাচ্চারা সম্মান করতে শিখছে না। বড়দের সামনে ঔদ্ধত্বপূর্ণ আচরণ করছে। তাই এই বিষয়টার দিকে বাবা-মায়েদেরও নজর দিতে হবে। তাকে শেখাতে হবে বড়দের কীভাবে সম্মান করতে হয়। নিজেরাও বিনয়ী হতে হবে। সকলের সঙ্গে বিনয়ের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তাহলেই তো বাচ্চার মধ্যে রোপিত হবে সুঅভ্যাস।'
ট্রোলিং বন্ধ হোক
সোশ্যাল মিডিয়া একটা ভয়ঙ্কর জায়গা। এখানে যেমন মেলে প্রশংসা। তেমনই কিছু খারাপ হলে টেনে নীচে নামিয়ে আনা হয়। আর এই জায়গাটাতেই আপত্তি ডাঃ পানের। তাঁর মতে, এই বালকের বয়স এখন অনেক কম। এই যে ট্রোলিং হচ্ছে, তার প্রভাব বাচ্চাটির মনের উপর দীর্ঘস্থায়ী ছাপ ফেলতে পারে। সে সারাজীবনের মতো এই ক্ষত পুষে রাখতে পারে। যেটা একবারেই কাম্য নয়। তাই এই ট্রোলিং দ্রুত বন্ধ করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।