অ্যাডাইভাইজারি নাকি নির্দেশিকা, এই সবের মধ্যে আর না-ই বা ঢুকলাম। মোদ্দা বিষয়, জিভের আরামের সঙ্গে স্বাস্থ্যের চিরকালীন দ্বন্দ্ব। কিন্তু নোটিশ এল তো এল, একেবারে বর্ষাকালে! ঝমঝম করে বৃষ্টি বাইরে। সামনে ধোঁয়া ওঠা শিঙাড়া, জিলিপি। এককাপ দুধ চা। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের কথায় 'চাঁটি মারা চা', অর্থাত্ এক চুমুক দিলেই একেবারে মাথা যন্ত্রণা সেরে যায়। রামকৃষ্ণ পরমহংস জিলিপি বড় ভালোবাসতেন। তিনি বলতেন, 'জিলিপির গাঁটে গাঁটে রস'।
আবার সৈয়দ মুস্তফা আলি তাঁর ভ্রমণ কাহিনি 'জলে ডাঙায়'-তে লিখছেন, 'আমরা তেঁতো, নোনা, ঝাল, টক, মিষ্টি এই পাঁচ রস দিয়ে ভোজন করি। ইংরেজরা খায় মিষ্টি আর নোনা, ঝাল সামান্য, টক তার চেয়ে কম এবং তেঁতো জিনিস যে খাওয়া যায় ইংরেজের সেটা জানা নেই। তাই ইংরেজি রান্না আমাদের কাছে ভোঁতা এবং বিস্বাদ বলে মনে হয়। অবশ্য ইংরেজ ভাল কেক-পেস্ট্রি-পুডিং বানাতে জানে –তাও সে গিয়েছে ইতালিয়ানদের কাছ থেকে এবং একথাও বলবো আমাদের সন্দেশ রসগোল্লার তুলনায় এসব জিনিস এমনকি, যে নাম শুনে মুর্ছা যাবো।'
কেন্দ্র ঠিক নোটিশ জারি করেছে?
প্রথমেই একটু স্পষ্ট হয়ে নেওয়া যাক, কেন্দ্রীয় সরকার কিন্তু এই সব খেতে বারণ করেনি। স্রেফ সতর্কতা নোটিশ ঝোলানো হবে। বাকি আপনার ব্যাপার। ঠিক যেমন তামাকে হয়। বিড়ি-সিগারেট-গুটখায় ক্যান্সার, ফুসফুস নিয়ে সতর্ক করা হয়। তারপর আপনি বিড়ি টানতেই পারেন! নিজের দায়িত্বে। কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। ঠিক কী বলেছে কেন্দ্র? কেন্দ্রের অধীনস্থ ‘অয়েল অ্যান্ড ফ্যাট বোর্ড’ নোটিফিকেশন জারি করে জানিয়েছে, শিঙাড়া, জিলিপি, গুলাবজামুন, বড়াপাও, পকোড়া, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিপসের মতো ফ্যাট ও সুগার নির্ভর খাবারে কত পরিমাণ তেল কিংবা শর্করা রয়েছে, তার উল্লেখ করতে হবে ৷ এ থেকে মানবদেহের কী ক্ষতি হতে পারে, তা নিয়েও ক্রেতাদের সতর্ক করতে হবে।
সোশ্যাল মিডিয়ার স্টেটাস চেক করি। শরীরের স্টেটাস চেক করি না।
শরীরের স্টেটাসটাই চেক করি না: কুণাল সরকার
bangla.aajtak.in এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলল বিখ্যাত কার্ডিওলজিস্ট ডাক্তার কুণাল সরকারের সঙ্গে। তাঁর কথায়, 'সরকারের উচিত, দেশের প্রতিটি নাগরিকের বছরে অন্তত একবার বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করার মতো কোনও স্কিম আনা। অনেক মানুষ আসেন, যাঁরা বছরের পর বছর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান না, তারপর যখন ডাক্তারের কাছে যান, তখন একাধিক রোগ ধরা পড়ে। একটা বিষয় মাথায় রাখতেই হবে, দোকানে যে শিঙাড়া, জিলিপি ভাজা হয়, তা একই তেলে বারবার ভাজা হয়। ফলে সেই তেল পেটে গেলে ট্রান্সফ্যাট তৈরি হয়। সেই ফ্যাট শরীরে জমে। তারপর স্থূলতা, ফ্যাটি লিভার, কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস। তাই আমি বলব, কেন্দ্রের এই ধরনের উদ্যোগ তো ভালই। অন্তত মানুষ একটু সচেতন হবেন।' কুণাল সরকার বলছেন, 'নিজের ওজন সম্পর্কে উদাসীনতা, মাঝ তিরিশে পৌঁছে গিয়েও নির্দিষ্ট সময়ান্তর ব্লাড প্রেসার বা সুগার না মাপানো , ক্ষতি ডেকে আনে। ভিতরে ভিতরে ক্ষতি হয়ে যায়। মানুষের খেয়ালই হয় না। আমরা অবসরে সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্ধুবান্ধবের স্টেটাস দেখি, তা নিয়ে আলোচনা করি, কিন্তু সময় মতো নিজের শরীরের স্টেটাসটাই চেক করি না।'
শ্যাম রাখি না কূল! জিভকে আরাম দেবেন নাকি স্বাস্থ্য?
কিন্তু যা-ই বলুন, বাঙালি কিন্তু আটকে যাচ্ছে ওই জিলিপি, শিঙাড়াতেই। ডিপ ফ্রায়েড কচুরি, লুচিও রয়েছে। মিহিদানা, লুচি কিংবা রাবড়ি দিয়ে জিলিপি, আহা! ধরুন, দোকানে মুখে পুরতে গিয়েই হঠাত্ চোখে পড়ল, ওই ওয়ার্নিং। ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, স্থূলতা, সব মগজে জড়ো হয়ে গেল। 'এবার তোমার পরীক্ষা ভগবান'। শ্যাম রাখি না কূল! জিভকে আরাম দেবেন নাকি স্বাস্থ্য? জিলিপি, কচুরিতে ইনভেস্ট করবেন, নাকি ওষুধে? আপনি ভাবতে থাকুন। এখানেও আবার সেই ভাবা প্র্যাক্টিস।