অনেকেই জানেন যে একজন প্রাপ্তবয়স্কের রাতে অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন। কিন্তু এটা কি জানতেন যে, একজন মহিলার ঘুমের প্রয়োজন পুরুষদের চেয়ে অনেক বেশি হয়?
পুরুষদের ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমেই বিশ্রাম হলেও, মহিলাদের ক্ষেত্রে কিন্তু সময়টা আরও বেশি লাগে। এই বিষয়ে মুম্বইয়ের ডঃ বাবাসাহেব আম্বেদকর হাসপাতালের ডাঃ সোনম সিম্পতওয়ার ইন্ডিয়া টুডেকে বলেন, 'একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ হিসাবে, আমি বলতে পারি, বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের সাধারণত বেশি ঘুমের প্রয়োজন হয়।'
পর্যাপ্ত ঘুম কেন গুরুত্বপূর্ণ?
ম্যাগনিফ্লেক্স ইন্ডিয়ার ঘুম বিশেষজ্ঞ(স্লিপ এক্সপার্ট) ডাঃ নিবেদিতা কুমার বলেন, ঘুম সুস্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভাল ঘুম মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা উন্নত করে। হৃদরোগ, পরিপাক, ত্বক ও চুলের গুণমান এবং দীর্ঘায়ুর জন্য রোজ পর্যাপ্ত ঘুম অত্যন্ত জরুরি। ভাল ঘুম হলে তা আবেগকে আরও ভালভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ভাল করে ঘুমালোই অ্যাংসাইটি ও ডিপ্রেশনের মাত্রা হ্রাস পেতে পারে। পড়াশোনা, কাজ ও খেলাধুলার ক্ষেত্রেও পারফর্ম্যান্স বাড়ে। এদিকে যাঁরা দীর্ঘ সময় ধরে কম ঘুমাচ্ছেন, তাঁদের ডিমেনশিয়া এবং আলঝাইমারের মতো স্নায়ুগত রোগ হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে এর ফলে স্থূলতা, হৃদরোগ এবং স্ট্রোক হতে পারে।
আর্টেমিস হাসপাতালের পালমোনোলজি এবং ঘুমের ওষুধের বিশেষজ্ঞ ডাঃ অরুণ কোটারুর ব্যাখ্যা, ঘুমের সময় শরীর টিস্যু মেরামত করে। এই সময়েই পেশি বৃদ্ধি এবং হরমোন নিয়ন্ত্রণের মতো প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
ঘুমের প্রয়োজন বয়সের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়
নবজাতক এবং শিশুদের সবচেয়ে বেশি ঘুমের প্রয়োজন। প্রাপ্তবয়স্কদের সাধারণত প্রতি রাতে ৭-৯ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন হয়। যদিও বয়সের সঙ্গে ঘুমের চাহিদা কিছুটা কমতে পারে। তা সত্ত্বেও বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদেরও প্রতি রাতে প্রায় অন্তত ৭ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করা উচিত।
ডাঃ নিবেদিতা কুমার বলেন, 'সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের প্রায় ২০ মিনিট অতিরিক্ত ঘুমের প্রয়োজন। 'মহিলাদের ঘুম এবং নিদ্রাভাব সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য নেই। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দৈনন্দিন হিসাবে পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের বেশি ঘুমের প্রয়োজন হতে পারে,' জানান চিকিৎসক।
মহিলাদের মস্তিষ্ক পুরুষদের তুলনায় আরও জটিল। মহিলারা অনেকসময়েই একসঙ্গে একাধিক কাজ করেন এবং তাঁদের মস্তিষ্কের বেশি ব্যবহার করেন। ফলে সেই কারণেই পুরুষদের তুলনায় তাঁদের বেশি ঘুমের প্রয়োজন হতে পারে।
স্লিপ ফাউন্ডেশনের তথ্যানুযায়ী, একজন প্রাপ্তবয়স্কের প্রতি রাতে অন্তত ৭ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। মহিলাদের গড়ে ১১ মিনিট অতিরিক্ত ঘুমের প্রয়োজন।
এর পাশাপাশি, মহিলাদের অনিদ্রা, অ্যাংসাইটি এবং ডিপ্রেশন অনুভব করার সম্ভাবনা বেশি। এর ফলে তাঁদের ঘুমের সমস্যা হতে পারে। পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের অনিদ্রার ঝুঁকি প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি।
এর পেছনে কি হরমোনের প্রভাব আছে?
মহিলাদের ঘুম হরমোনের পরিবর্তন দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। মাসিক চক্র জুড়ে ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের মতো হরমোনের ওঠানামা ঘুম ব্যাহত করতে পারে। মাসিকের আগে আরও বেশি করে এর প্রভাব পড়তে পারে।
তাছাড়া, গর্ভাবস্থায়, শারীরিক অস্বস্তির পাশাপাশি হরমোনের পরিবর্তন ঘটে। এতেও ঘুম ব্যাহত হতে পারে। মেনোপজ ট্রানজিশনের সময়েও ঘুম প্রভাবিত হয়।
তথ্য সৌজন্যে: মেহক মালহোত্রা