যখন আমাদের শরীর নিজে থেকে ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না বা তৈরি হওয়া ইনসুলিন দক্ষতার সঙ্গে (কার্যকরভাবে) ব্যবহার করতে পারে না, তখন ডায়াবেটিস হয়। এটি শরীরের এমন একটি গুরুতর অবস্থা, যার ফলে রক্তে শর্করা বা গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়। টাইপ ১ এবং টাইপ ২ হল ডায়াবেটিসের দুটি সাধারণ রূপ। এছাড়া অন্যান্য ধরণেরও ডায়াবেটিস হতে পারে, যেমন গর্ভকালীন ডায়াবেটিস, নিওনাটাল ডায়াবেটিস, জেসটেসানাল ডায়াবেটিস ইত্যাদি।
সুস্থ জীবনের জন্য যোগব্যায়াম খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বলে মনে করা হয়। এক কথায় বলা যায়, উন্নত স্বাস্থ্যে ও মনের প্রশান্তির জন্য যোগব্যায়াম অপরিহার্য। অনেকে মনে করে যে, শুধুমাত্র শরীরকে নমনীয় করার জন্য যোগব্যায়াম করা হয়। কিন্তু তা একেবারে সঠিক নয়। যোগাসনের রয়েছে বহুমুখী উপকারিতা।
যোগব্যায়ামকে সঠিকভাবে ডায়াবেটিসের চিকিৎসা হিসেবে গ্রহণ করা হলে, এটি আপনার রক্তে শর্করার মাত্রাকে চমৎকারভাবে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে। রোজ নির্দিষ্ট কিছু যোগব্যায়াম করলে, স্বাস্থ্যের ঝুঁকি কমতে পারে। বিশ্বাস করা হয় যে, কিছু যোগাসন রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। জানুন কী কী...
ধনুরাসন
এই আসন পেশীকে শক্তিশালী করে, কোষ্ঠকাঠিন্যের সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্যা কমাতে পারে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। পেটের উপর শুয়ে পড়ুন। উপুড় হয়ে শুয়ে পা দুটি হাঁটুর কাছ থেকে ভাঁজ করে গোড়ালি দুটি জোড়া ভাবে নিতম্বের কাছে আনুন। এ বার দু’ হাত দিয়ে পায়ের গোছা দুটো বেশ শক্ত করে ধরে বুক এবং ঊরু মাটি থেকে ওপরের দিকে টেনে তুলুন। তলপেট মাটিতে ঠেকে থাকবে। দৃষ্টি সামনে ও ঘাড় পিছন দিকে হেলে থাকবে। স্বাভাবিক শ্বাস প্রশ্বাসে মনে মনে দশ থেকে ক্রমশ বাড়িয়ে তিরিশ গুণে তিন বার অভ্যাস করুন। প্রতি বারের পর উপুড় হয়ে শুয়ে শবাসনে বিশ্রাম নিন।
ভুজঙ্গাসন
ভুজঙ্গাসন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। এছাড়াও যাদের ব্লাড প্রেসার তাদের জন্যেও উপকারী। কোমরের ব্যথা, গ্যাসট্রাইটিস, গ্যাসট্রিক আলসার, স্পন্ডিলোসিস, শিরদাঁড়ায় বক্রতা, পিরিয়ডের সমস্যায় ভুজঙ্গাসন খুব ভাল কাজে দেয়। আপনার পেটে শুয়ে শুরু করুন। আপনার হাত আপনার কাঁধের কাছে রাখুন, হাতের তালু মাটিতে আলতো করে চাপুন। যত তাড়াতাড়ি আপনি এই অবস্থানে আসেন, সাবধানে শ্বাস নিন এবং ধীরে ধীরে আপনার উপরের শরীরকে মাটির উপরে উঠান। আপনি পেট থেকে বুক পর্যন্ত সামান্য প্রসারিত অনুভব করবেন। আরামদায়ক ভারসাম্য বজায় রেখে আপনি উত্তোলনের সঙ্গে সঙ্গে আপনার হাতগুলি আপনাকে সমর্থন করার অনুমতি দিন। এই আসনটি ২০- ৩০ সেকেন্ডের জন্য করুন।
শবাসন
প্রতি আসনের পর শবাসন অবশ্য করণীয়। অনিদ্রা, একাগ্রতার অভাব, একটুতে রেগে যাওয়া, টেনশন ও স্নায়বিক দুর্বলতা ও উত্তেজনা প্রশমনে শবাসন উপকারী। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা এবং রক্তচাপ স্থিতিশীল করে আপনার শরীর ও মনের জন্য উপকারী। চিত হয়ে শুয়ে পা দুটি লম্বা করে ছড়িয়ে দিন। হাত দুটি শরীরের দু’পাশে দেহ সংলগ্ন রাখুন। হাতের চেটো শিথিল ভাবে থাকবে। হাত, পা, দেহ অবশ হয়ে গেছে এ রূপ ভেবে মৃত ব্যক্তির মতো শুয়ে থাকুন। যে আসন যত বার ও যত ক্ষণ অভ্যাস করবেন, শবাসনেও ঠিক ততক্ষণ অবশ্যই বিশ্রাম নেবেন। শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে।
এছাড়া আরও এক প্রকারের শবাসন করা যায়। উপুড় হয়ে শুয়ে মাটিতে কান পেতে সমস্ত শরীর শিথিল করে শুয়ে থাকা। দু’হাত শরীরের দু’পাশে সংলগ্ন থাকবে। হাতের চেটো শিথিল ভাবে পাতা থাকবে। যে সকল আসন উপুড় হয়ে শুয়ে করতে হয় সে সকল আসনের পর এই শবাসন করণীয়।