শ্রীমদ্ভগবত গীতায় জীবনের প্রতিটি সমস্যার সমাধান শ্রীকৃষ্ণ। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধক্ষেত্রে অর্জুনকে গীতার জ্ঞান দিয়ে এসেছিলেন মাধব। গীতায় বলা হয়েছে, কর্মযোগের কথা। আত্মবিশ্বাস হারিয়ে অর্জুন কর্মবিমুখ হতে চাইছিলেন। তাঁকে কর্মের পথে ফিরিয়ে আনেন শ্রীকৃষ্ণ। তাই গীতা জীবনের পাঠ। গীতার শ্লোক আত্মস্থ করতে পারলে জীবনে আর কোনও সমস্যা থাকবে না। অবসাদ কাটাতেও পথ দেখাতে শ্রীকৃষ্ণের উপদেশ সম্বলিত গীতা। জীবনে সুখী হওয়ার পথও খুঁজে পাবেন।
শ্লোক- কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন মা কর্মফলহেতুর্ভূর্মা তে সঙ্গোহস্ত্বকর্মণি।।
অর্থ- এই শ্লোকে শ্রী কৃষ্ণ বলছেন যে ফলের ইচ্ছা করে কর্ম করা উচিত নয়।
সারমর্ম- ফলের আশা করে কখনও কোনও কাজ করা উচিত নয়। কারণ ফল কারও হাতে নেই। কেন ফলের আশা করতে না বলছেন শ্রীকৃষ্ণ? কারণ কাজে প্রত্যাশামতো ফল না পেলে মানসিক চাপ, কষ্ট বাড়ে। ব্যর্থতা মানুষকে অবসাদে ফেলে দেয়। তাই ফলের চিন্তা বা আশা না থাকলে ব্যর্থ হলেও মন ভাঙবে না। কর্ম অনুসারে ফল না পাওয়া মানুষের দুঃখের কারণ। কিন্তু মানুষকে বুঝতে হবে, পরিশ্রম সে করতে পারে, তবে ফল তার হাতে নেই। অনেক সময় পরিশ্রম করেও সুফল মেলে না। এটাই জীবন।
শ্লোক- সুখদুঃখে সমে কৃত্বা লাভালাভৌ জয়াজয়ৌ, ততো যুদ্ধায় যুজ্যস্ব নৈবং পাপমবাপ্স্যসি।।
অর্থ- শ্রী কৃষ্ণ বলেছেন, সুখ-দুঃখ, লাভ-ক্ষতি ও জয়-পরাজয়কে সমান জ্ঞান করে যুদ্ধে নামো। যুদ্ধবিমুখ হলে পাপের ভাগীদার হতে হবে।
সারমর্ম- সুখ ও দুঃখ, লাভ-ক্ষতি ও জয়-পরাজয়কে সমান মনে করতে হবে। হারলেও মন যেন শান্ত থাকে। আবার জিতলেও আবেগ যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে। অহংকার যেন মাথায় না চড়ে বসে। জেতার পরও কর্ম করে চলতে হবে। আবার হারলে কারণ খুঁজে বের করে নতুন করে ঝাঁপাতে হবে। হার-জিত যেন মনে কোনও প্রভাব না ফেলে। মানুষের কাজ কর্ম করে চলা। পিছন ফিরে তাকালেই সে আটকে যাবে। এই শ্লোক মাথায় রাখলে জীবনে কখনও অবসাদ হাসবে না। হার-জিতকে সমান জ্ঞান করে এগিয়ে চলুন। হারলেও মনকে বিচলিত করবেন না।
শ্লোক- ধ্যায়তো বিষয়ান্ পুংসঃ সঙ্গস্তেষূপজায়তে, সঙ্গাৎ সঞ্জায়তে কামঃ কামাৎ ক্রোধোহভিজায়তে।।
অর্থ- যে কোনও বিষয়ে খুব বেশি চিন্তা করলে সেই বস্তুর প্রতি আসক্তি এবং আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়।
সারমর্ম- কোনও বস্তুর প্রতি আসক্তি থেকে জন্ম নেওয়া ইচ্ছাপূরণ না হলে তা ক্রোধ ও বিষণ্ণতার জন্ম দেয়। যেমন প্রেমে একে অপরের প্রতি নির্ভরশীলতা তৈরি হয়। সেই সম্পর্ক ভাঙে বুক ফেটে যায়। শ্রীকৃষ্ণ বলছেন, বিশ্বের কোনও জিনিসের প্রতিই অতিরিক্ত আবেগ বা মায়া রাখতে নেই। যে কোনও বিষয়ে খুব বেশি চিন্তা করলে তার প্রতি আসক্তি তৈরি হয়। কিন্তু সেই বস্তু না পেলে মন ভেঙে যায়। তাই কখনও কোনও জিনিসের প্রতি আসক্ত হবেন না।
শ্লোক- শ্রদ্ধাবান্ লভতে জ্ঞানং তৎপরঃ সংযতেন্দ্রিয়ঃ। জ্ঞানং লব্ধ্বা পরাং শান্তিমচিরেণাধিগচ্ছতি।।
অর্থ- যাঁরা ব্রহ্মের উপর বিশ্বাস ও ভক্তির রাখে এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ করে তাঁরাই জ্ঞান অর্জন করে।
সারমর্ম- প্রতিটি পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধরে রাখা জরুরি। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, ঈশ্বরের প্রতি আস্থা হারাবেন না। আত্মনিয়ন্ত্রণ করতে পারলে জীবনে কখনও কোনও সমস্যা আসে না।