একটা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য ভালবাসাই যথেষ্ট। রোমান্টিক সিনেমা বা ফেবু পোস্টে নিশ্চই এসব শুনেছেন। শুরুতেই জেনে রাখুন, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। যুগ-যুগ ধরে এই কথা চালু থাকলেও, বাস্তবে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে শুধু ভালবাসাই নয়, প্রয়োজন ঘনিষ্ঠতারও। আর যখন দুই সঙ্গীর যৌন চাহিদায় আকাশপাতাল ফারাক থাকে, তখনই সেই ঘনিষ্ঠতাতে বাধা সৃষ্টি হয়।
কীরকম? ধরুন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একজন একটু বেশিই ঘনিষ্ঠতা কামনা করেন। অন্য়দিকে অপরজনের সেই চাহিদা ঠিক ততটা নয়। আর এর থেকেই শুরু হয় নানা সমস্যা। তৈরি হয় মনোমালিন্য। বাইরে থেকে বোঝা না গেলেও ভিতরে-ভিতরে সম্পর্ক ক্রমেই ক্ষয়ে যেতে থাকে।
মনোবিদ যা বলছেন
ইন্ডিয়া টুডে-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মনোবিদ ও ম্যারেজ কনসাল্টেন্ট ডঃ নিশা খন্না জানালেন, 'আমাদের পরিভাষায় এই সমস্যার নাম সেক্সুয়াল ডিজায়ার ডিসক্রেপ্যান্স। অর্থাৎ, দুই সঙ্গীর যৌন চাহিদার মধ্যে ফারাক।' আমরা প্রত্যেকে আলাদা। কেউ হয়তো বারবার শারীরিক ঘনিষ্ঠতা চান। আবার কেউ তেমন আগ্রহী নন। ফলে প্রথম জনরা ভাবেন যে, তাঁকে উপেক্ষা করা হচ্ছে। আর অপরজন চাহিদা মেটাতে গিয়ে রীতিমতো টেনশনে পড়ে যান।
যৌন চাহিদা বেশি থাকাটা কোনও দোষের কিছু নয়। আবার খুব বেশি যৌন চাহিদা না থাকাটাও কোনও অপরাধ নয়। বিষয়টা শুধু শারীরিক নয়। প্রত্যেকের জীবনের অভিজ্ঞতা, পার্সোনালিটি, সম্পর্কের ধরণ ও বেড়ে ওঠার সঙ্গেই এই শারীরিক চাহিদাগুলি জড়িয়ে।
ভারতে এইসব বিষয় নিয়ে খোলাখুলি কথা একেবারে হয় না বললেই চলে। এদেশে যতই কামসূত্র বা খজুরাহো থাকুক, বাস্তবে যৌনতা এখনও অনেকের কাছে অস্বস্তির বিষয়।
এর ফলে একদিকে একজন বেশি বেশি যৌনতাই চাইতে থাকেন। অন্যদিকে যিনি কম চান, তিনি সঙ্গীর চাপ অনুভব করতে থাকেন। এর থেকে ক্রমেই তৈরি হয় অপরাধবোধ, দূরত্ব, এমনকি চিট করার পরিস্থিতিও।
ডঃ খন্নার মতে, 'যৌন ইচ্ছার এই বৈপরীত্যের পিছনে খুব সাধারণ কিছু কারণও থাকতে পারে। যেমন ধরুন, স্ট্রেস, নিজের শরীর নিয়ে হীনমন্যতা, সন্তান জন্মের পর ক্লান্তি, সম্পর্কের দূরত্ব কিংবা নিছকই কম বা বেশি লিবিডো। তাছাড়া সময়ের সঙ্গে ইচ্ছা বদলানোও স্বাভাবিক।'
অনেকে আবার শারীরিক ঘনিষ্ঠতাকেই মানসিক আকর্ষণের ভিত মনে করেন। আবার অনেকে আগে মানসিকভাবে কাছাকাছি না এলে শারীরিকভাবে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন না।
ডঃ খন্না বললেন, 'যাঁদের ইচ্ছা কম, তাঁরা নিজেকে ব্যর্থ বা দুর্বল ভাবতে শুরু করেন। কারণ আমাদের চারপাশে সমাজে খালি এই বলে বেশি যৌনতা মানেই সফল সম্পর্ক। এটাই চাপ তৈরি করে।'
কী করা উচিত?
বিশেষজ্ঞ বলছেন, সঙ্গীর অনিচ্ছায় কোনও জোরাজুরি করবেন না। একে অপরের ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে গুরুত্ব দিতে শিখুন। এই ব্যালান্সই গুরুত্বপূর্ণ।
সবচেয়ে জরুরি বিষয়টি হল, খোলা মনে কথা বলা। বিষয়টা লুকিয়ে রাখলেই ভুল বোঝাবুঝি বাড়ে। খোলাখুলি কথা বললেই মেলে সমাধান। মনে রাখবেন, শুধু যৌনতাই নয়, বোঝাপড়া, শ্রদ্ধা আর বিশ্বাসই সম্পর্কের আসল ভিত।