বিশ্বের অনেক জায়গায় ভাত খাওয়া হয় তবে সবচেয়ে বেশি ভাত খাওয়া হয় ভারতে। ভাত প্রস্তুত ও হজম করা সহজ। ভাতের নিজস্ব কোনো স্বাদ না থাকলেও ডাল বা সবজির সঙ্গে খেলে স্বাদ বেড়ে যায়। আমরা অনেকেই মনে করি ভাত খাওয়া হয় শুধু পেট ভরানোর জন্য। এটি স্বাস্থ্যের দিক থেকে বিশেষ উপকারী নয়। ভাত খেলে পেট বেরিয়ে যাবে বা ভুঁড়ি হবে ভেবেও অনেকে ভাত খাওয়া থেকে বিরত থাকেন। ভারতীয় রন্ধনপ্রণালীর একটি প্রধান উপাদান হওয়া সত্ত্বেও, ভাতের স্বাস্থ্য উপকারিতা নিয়ে তেমন চর্চা নেই। আমাদের বাড়িতে প্রতিদিন ভাত তৈরি করা হয় তবে শুধুমাত্র এটি খাদ্যের অংশ হিসেবে ভাবা হয়। খুব কম মানুষই আছেন যারা এটিকে স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে খেতে পছন্দ করেন। কিন্তু আপনি জেনে অবাক হবেন যে, যে খাবারটিকে বাকিদের তুলনায় পিছিয়ে রাখা হয় তার অনেক উপকারিতা রয়েছে।
অনেকেই ভাতকে স্থূলতা এবং অলসতার কারণ বলে মনে করেন, তবে ভাত খেলে শরীরের জন্য অনেক উপকার হয়। ভাতে এমন অনেক পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়, যা শরীরের ভালো কার্যকারিতার জন্য প্রয়োজনীয়। আসুন জেনে নেই ভাত খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
আপনি যদি দীর্ঘদিন ধরে ওজন কমানোর জন্য চেষ্টা করতে থাকেন, তাহলে ভাত আপনার জন্য উপকারী হতে পারে। কারণ ভাতে চর্বি এবং সোডিয়াম কম এবং ফাইবার বেশি, যা ওজন কমানোর জন্য একটি দুর্দান্ত বিকল্প। এটা প্রমাণিত হয়েছে যে যারা ব্রাউন রাইস খান তাদের ওজন কমার প্রবণতা থাকে এবং অতিরিক্ত ওজন বাড়ার সম্ভাবনা কম থাকে। তবে , যখন সাদা ভাতের কথা আসে, ওজন কমানোর ক্ষেত্রে এটি কম কার্যকর হতে পারে।
আপনাকে তরুণ রাখে
জাপানি মহিলারা তাদের ত্বক মসৃণ এবং তারুণ্য ধরে রাখতে চালের জল বা মাড় ব্যবহার করেন। নিয়মিত ভাত খেয়ে ত্বক তরুণ রাখতে পারেন। ভাতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা আপনার ত্বকের কোষকে ফ্রি র্যাডিক্যাল ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং বিদ্যমান বলিরেখা কমাতে পারে।
হার্টকে সুস্থ রাখে
নিয়মিত ভাত খাওয়া আপনার হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতির একটি প্রাকৃতিক এবং সুস্বাদু উপায়। এটি রক্তনালীগুলির ভিতরে ময়লা প্রবেশ করতে বাধা দেয় এবং হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের মতো কিছু হার্টের অবস্থার ঝুঁকি কমায়। এতে ফ্ল্যাভোনয়েডও পাওয়া যায়।
ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে
ভাত খাওয়া রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণের একটি ভালো উপায়। তবে এর জন্য ব্রাউন রাইসই ভালো। কারণ এতে প্রায় ৩ গুণ বেশি ফাইবার রয়েছে এবং প্রোটিনের পরিমাণ বেশি। সাদা ভাতের ক্ষেত্রে, দিনে মাত্র ৭ আউন্স (২০০ গ্রাম) খাওয়া আপনার রক্তে শর্করাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করতে পারে।
হজমশক্তি ভালো রাখে
ভাতে উচ্চ ফাইবার থাকায় এটি কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা এড়াতে সাহায্য করে। এটি পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখে। কারণ এটি একটি প্রাকৃতিক মূত্রবর্ধক হিসাবে কাজ করে, এটি আপনার শরীরকে পরিষ্কার করে এবং আপনার সিস্টেম থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয় যা আপনার কিডনির জন্যও লাভজনক।
স্নায়ুতন্ত্রকে সুস্থ রাখে
আপনি যদি নিয়মিত ভাত খান তাহলে আপনার স্নায়ুতন্ত্র সুস্থ থাকতে পারে। শরীরের স্নায়ুতন্ত্রের সুস্থ থাকার জন্য বিভিন্ন ভিটামিনের প্রয়োজন হয় এবং ভাতে বিভিন্ন ধরনের বি ভিটামিন থাকে বলে এটি এর জৈবিক প্রক্রিয়াগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
শক্তির আরও ভাল উৎস
ওয়ার্কআউট কেবল শক্তি পাওয়ার উপায় নয়, আপনি এর জন্য ভাতও খেতে পারেন। চাল শক্তি বৃদ্ধির অন্যতম স্বাস্থ্যকর উপায়। শরীরে কার্বোহাইড্রেটের প্রয়োজন যা শক্তিতে রূপান্তরুত হবে। আর ভাত স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ, এটি আপনার জন্য একটি ভাল অপশন হতে পারে। কারণ এক বাটি ভাত খেলে শরীর যে পরিমাণ শক্তি পায় তা অন্য যেকোনো খাবারের চেয়ে বেশি। এর ফলে শরীর প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট পায়। মস্তিষ্ক ভালো কাজ করে। এর সাথে, আপনার শরীরে মেটাবলিজম সক্রিয় থাকে এবং আপনি প্রচুর শক্তি পান।
আলঝেইমার নিরাময়ে সহায়ক
আলঝেইমার রোগে ভাত খুবই উপকারী। এটি খাওয়া আপনার মস্তিষ্কে নিউরোট্রান্সমিটারের বিকাশকে ত্বরান্বিত করবে, যা আলঝেইমার রোগীদের রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়ক।
ব্রাউন রাইস খান
ব্রাউন রাইস সাদা চালের চেয়ে অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর। এতে উপস্থিত উপাদানগুলো শরীরের জন্য খুবই উপকারী। তবে মনে রাখবেন, সাদা ভাত খেলে হজমশক্তি ঠিক থাকে, ক্যান্সার থেকে রক্ষা পাওয়া যায় এবং রক্তচাপও ঠিক থাকে। সর্বোপরি, এটি শরীরের চাহিদা অনুযায়ী খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।