কালী পুজো প্রায় দোড়গোড়ায়। সব জায়গায় চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে হয় শ্যামা পূজা অর্থাৎ কালী পূজা। এর ঠিক আগের রাতে বাঙালিরা প্রথা অনুযায়ী পালন করেন ভূত চতুর্দশী।
ভূত চতুর্দশীতে চোদ্দ রকমের শাক খেতে হয়। সন্ধ্যাবেলা বাঙালি বাড়িতে জ্বালানো হয় চোদ্দটি প্রদীপ। ঘোর অমাবস্যার রাতে বিদেহী আত্মারা নেমে আসেন মর্ত্যলোকে। এর ঠিক পরের দিনই, চন্দ্রের তিথি নিয়ম মেনে, হয় কালীপূজা।
১৪ শাকের তাৎপর্য
বাঙালিদের ঘরে ঘরে ভূত চতুর্দশীতে যেই দুটি নিয়ম মূলত পালন করা হয়, সেক্ষত্রে অনেকে মনে করেন চোদ্দ ভুবনের অধীশ্বরী দেবীর উদ্দেশ্যে চোদ্দ শাক খাওয়া এবং চোদ্দ টি প্রদীপ জ্বালানো হয়। এর সঙ্গে যুগ যুগ ধরে জড়িয়ে রয়েছে অনেক আচার বিচার।
আবার অন্য প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে ভূত চতুর্দশীর দিনটিকে ১৪ পুরুষের জন্যে উৎসর্গ করা হয়। এই বিশেষ দিনে পূর্বপুরুষরা মর্ত্যে আসেন। প্রচলিত ধ্যানধারণা বলছে, এই ১৪ পুরুষ , জল, মাটি, বাতাস ও অগ্নির সঙ্গে মিশে রয়েছেন। আর এই জন্যেই মূলত মাটির মধ্যে জন্মানো ১৪ টি বিশেষ শাক খেয়ে ১৪ পুরুষদের উৎসর্গ করা হয় ভূত চতুর্দশীর দিনটি।
যেই ১৪ টি শাক ভূত চতুর্দশীতে খাওয়া হয়
১। ওল
২। কেঁউ
৩। বেতো
৪। সর্ষে
৫। কালকাসুন্দে
৬। জয়ন্তী
৭। নিম
৮। হেলঞ্চা
৯। শাঞ্চে
১০। গুলঞ্চ
১১। পলতা
১২। ভাঁটপাতা
১৩। শুলফা
১৪। শুষণী
নিয়ম অনুযায়ী ভূত চতুর্দশীর দিন দুপুর বেলা এই শাক খেয়ে সন্ধ্যেবেলায় ১৪ টি প্রদীপ জ্বালাতে হয়।
আবার পূরাণ মতে ভূত চতুর্দশীর রাতে শিবভক্ত বলি, মর্ত্যে আসেন পুজো নিতে। সঙ্গে আসেন তাঁর অনুচর ভূতেরা। চতুর্দশী তিথির ভরা অমাবস্যায় চারিদিক ঘুটঘুটে অন্ধকার থাকে। সেই ঘন অন্ধকারে যাতে বলি রাজার অনুচরেরা বাড়িতে ঢুকে না পড়েন, তার ব্যবস্থাই করা হত প্রাচীন কালে।
ভূত চতুর্দশীতে বাড়িতে জানালো প্রদীপ বা মোমবাতির মতো বিদেশী উৎসব হ্যালোইনেও বাড়ির চারপাশে টাঙানো হয় বিচিত্র লন্ঠন, যার অধিকাংশই কুমড়ো কেটে তৈরি। এই দুই রীতি একই ভেবে অনেকেই গুলিয়ে ফেলেন। তবে দুটি সম্পূর্ণ আলাদা।
চলতি বছরে ১৪ নভেম্বর কালীপুজো তাই এবছর ১৩ নভেম্বর পালিত হবে ভূত চতুর্দশী।