এক মা ও তাঁর গর্ভে থাকা ভ্রুণের জন্য প্রেগন্যান্সি থেকে ডেলিভারি পর্যন্তের সময় খুবই কঠিন হয়ে থাকে। তাই চিকিৎসকেরা সবসময় হবু মায়েদের বিশেষ যত্ন নেওয়ার কথা এবং ভাল পুষ্টিকর খাওয়া-দাওয়া করার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। যাতে প্রসবের সময় মা ও বাচ্চার উভয়ই সুস্থ থাকে। তবে ভারত সহ একাধিক দেশে এই নিয়ম মানা হলেও চিনে এই প্রেগন্যান্সি নিয়ে এমন কিছু প্রচলিত কথা রয়েছে যা শুনলে আপনার মাা ঘুরে যেতে পারে। চিনের সংস্কৃতিতে প্রেগন্যান্ট হওয়ার থেকে শিশুর জন্ম পর্যন্ত, গর্ভবতী মহিলাদের যত্নের জন্য কিছু উদ্ভট পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে। চিনের প্রাচীন সাহিত্য তাইচাংশুতেও এই ধরনের প্রতিকারের কথা বলা হয়েছে।
বলা হয় যে এই সাহিত্যটি ১৬৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আবিষ্কৃত হয়েছিল। এতে গর্ভাবস্থার ১০ মাস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়েছে। এটি বলে যে গর্ভাবস্থায় ডাক্তার এবং মায়ের কী কী যত্ন নেওয়া উচিত। তাদের খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রা কেমন হওয়া উচিত এবং কীভাবে তাদের সন্তানের জন্ম দেওয়া উচিত?
এই বই অনুসারে, গর্ভাবস্থার চতুর্থ মাসে ভ্রূণকে জল দেওয়া হয় এবং প্রথমে রক্ত গঠন শুরু হয়। এ পর্যায়ে কাদায় বসবাসকারী ধান, গম ও ঢেল সবচেয়ে ভালো খাবার হিসাবে মনে করা হয়। এর মধ্যে থাকা পুষ্টিগুণ রক্ত পরিশোধন ও চোখের চমক তৈরি করতে সহায়ক।
কুকুরের মাথা খাওয়ার উপকারিতা
জেন্ডার লি নামে এক গবেষক তাঁর চাইল্ড বার্থ ইন আর্লি ইম্পেরিয়াল চায়না (২০০৫) গবেষণায় চিনে প্রচলিত এই ধরনের পৌরাণিক কাহিনী উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, গর্ভবতী মহিলাদের বায়মুগো (সাদা লোমের কুকুর)-র মাথা সেদ্ধ করে খাওয়া উচিত। এটা খেলে সেই মহিলার সন্তান আরও সুন্দর হবে আর সে আরও ভাল করে বিকশিত হতে পারবে। বর্তমান সময়ে কোনও চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞ গর্ভবতী মহিলাদের সাদা লোমের কুকুরের মাথা খাওয়ার পরামর্শ দেবে না। গর্ভাবস্থায় ও প্রসবের সঙ্গে যুক্ত আরও অনেক কুসংস্কার রয়েছে, যেটা চিনের সংস্কৃতিতে বহু যুগ ধরে চলে আসছে। কুইনি সে ১৯০৮ সালে দ্য চায়না মেডিক্যাল জার্নাল-এর একটি সংখ্যায় লেখেন, মাতৃত্ব প্রক্রিয়ার সঙ্গে অনেক কুসংস্কার ও ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। তবে এই ধরনে পুরনো রীতি ঠিক নয়। অন্ধবিশ্বাস অনুযায়ী, গর্ভবতী মহিলাদের সন্ধ্যার সময় খাবারে ছোট বাটির ভাত খাওয়া দরকার। এতে সন্তানের মাথা ছোট হয়। শুধু তাই নয়, এটাও বলেছে যে দইয়ের সঙ্গে শুকনো মটরশুঁটি খেলে গর্ভে থাকা ভ্রুণের ঝিল্লি বেশি মোটা হয় না।
ছুরি দিয়ে অশুভ আত্মার বিনাশ
চিনের প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, প্রসবের সময় যিনি প্রসব করাতে আসবেন, তাকে প্রথমে রান্নাঘরে যেতে হবে। আর ছুরি ছুঁতে হয়। যাতে রান্নাঘরের দেব-দেবী যিনি প্রসব করবেন তিনি যাতে ভাল থাকেন এবং অশুভ আত্মাও দূরে থাকে। আর শিশুর জন্ম যাতে তাড়াতাড়ি হয়। চিনে আজও এই ধরনের কুসংস্কার মেনে চলেন।
কালো খাবার থেকে দূরে
চিনের অনেক জায়গাতে কালো তিল, কফি বা সোয়া সসের মতো কালো খাবার থেকে গর্ভবতী মহিলাদের দূরে রাখা হয়। কারণ এগুলো খেলে ত্বকের রং কালো হতে পারে। অপরদিকে, দুধ, বাদাম ও শুকনো সোয়া পেস্ট খেলে শিশুদের রং ফর্সা হয়।
ভেড়া বা মাটন খাওয়া নিষেধ
কিছু অন্ধবিশ্বাস অনুযায়ী, প্রেগন্যান্ট মহিলাদের ভেড়ার মাংস বা মাটন খাওয়া থেকেও দূরে থাকা দরকার। কারণ এখানে মাংসকে ইয়াং বলা হয় এবং মৃগী রোগকে ফাট ইয়াং বলা হয়। যদিও এই দুটি শব্দ যা একই রকম দেখায় তাদের ভিন্ন অর্থ রয়েছে। এমনই একটি ভুল ধারণা হল যে ঠোঁট ফাটা নিয়ে জন্ম নেওয়া শিশুদের খরগোশের মাংস খাওয়া উচিত নয়। এটা সম্পূর্ণ কুসংস্কার যে ভেড়ার মাংস খেলে শিশু মৃগীরোগের শিকার হবে।