বাঙালি আর চায়ের মধ্যে সম্পর্ক বহু পুরনো। কফি-ল্যাটের যুগে আজও চায়ের জায়গা সকলের কাছে অন্যরকম। অফিসে কাজের চাপ দূর করতে হোক অথবা পাড়ার রকের আড্ডা চা ছাড়া কিছুই ঠিকভাবে জমে ওঠে না। তবে অনেকেই আছেন যাদের পেটপুরে কিছু খাওয়ার পরপরই এক কাপ গরম চা না হলে হয় না। আসলে, পেট ভরা থাকলে বা ভারী খাবারের পর অনেকের ঘুম ঘুম ভাব হয় কিংবা আলস্য চলে আসে। তাই এই আলস্য দূর করতে কেউ এক কাপ চা নেন কিংবা সিগারেটে টান দেন। তাঁরা ভাবেন, এতে খাবার হজম হবে কিংবা ঝিমুনি-ভাব দূর হবে।
দুপুরে খাবার খাওয়ার পর চা পান কী ঠিক
তবে এই যে দুপুরে খাবার খাওয়ার পর চা খান এটা কী আদৌও স্বাস্থ্যসম্মত? বিশেষজ্ঞরা বলছেন একেবারেই নয়। রাতের বা দুপুরে যে সময়েই হোক না কেন, ভারী খাবার খাওয়ার পর চা পান করা ক্ষতিকর। বিজ্ঞানীরা বলছেন, উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার গ্রহণের ঠিক পরপরই চা পান করা উচিত নয়। এতে হজমে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।
স্বাস্থ্যকর নয় চা খাওয়া
গবেষকরা বলছেন, চায়ের মধ্যে ট্যানিন খাবারের প্রোটিনের সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে এক ধরনের জটিল রাসায়নিক যৌগ তৈরি করে। এই রাসায়নিক যৌগ হজমে সমস্যার সৃষ্টি করে এবং আয়রন শোষণে বাধা দেয়।
উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওার পর চা খাবেন না
বিশেষত উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার গ্রহণের ঠিক পরপরই চা খেলে তা বিপাক প্রক্রিয়া ও হজমের মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। আর হজমের সমস্যা হওয়া মানেই শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হওয়া। এতে একসময় শরীর অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ভুগতে থাকে।
হজম প্রক্রিয়া ব্যহত হয়
এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, প্রোটিনজাতীয় খাবারের পর চা গ্রহণ করলে খাদ্য হজমের প্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয় এবং তা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। তবে এ সমস্যা শুধু দুপুরের খাবার কিংবা রাতের খাবার গ্রহণ করলেই হবে সেটি নয়, অন্যান্য সময়ও যদি উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার খান, যেমন মাংসের কাবাব কিংবা মাংস দিয়ে তৈরি এমন কিছু খাওয়ার ঠিক আগে কিংবা ঠিক পরেই চা পান করলে একই ধরনের বিপত্তি হবে। মাংস ও মাছের মধ্যে উচ্চ মাত্রার প্রোটিন থাকে। তবে মাংসের সঙ্গে চা পানেই সমস্যাটা বেশি হচ্ছে। আবার চায়ের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ট্যানিনের উপস্থিতির কারণে শুধু লিকার চায়ের ক্ষেত্রে এই সমস্যা আরও বেশি হয়।
কখন চা খাওয়া উচিত
খাবারের অন্তত এক ঘণ্টা পর চা পান করুন। এছাড়া এক ঘণ্টা আগেও চা পান করবেন না। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে প্রোটিন বা আমিষযুক্ত খাবারের সঙ্গে চা পানের কারণে তেমন কোনো সমস্যা দেখা না দিলেও নীরব অপুষ্টি তাদের ক্রমান্বয়ে গ্রাস করতে থাকে। তাদের শরীর প্রয়োজনীয় মিনারেল থেকে বঞ্চিত হতে থাকে।