মাছ শুধু বাঙালিদেরই প্রধান খাদ্য, এমনট নয়। দক্ষিণ ভারত, মহারাষ্ট্র সহ সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলিতে মাছ খাওয়ার চল রয়েছে ব্যাপকভাবে। তবে বাঙালিরা একচু বেশি মাছ ভক্ত হন। মেছো বাঙালিদের পাতে ইলিশ, পাবদা, পার্শে না পড়লেই অনেকেরই মুখ ভার হয়ে যায়। এমনকি স্বাস্থ্যের জন্য মাছ খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরাও। প্রতিদিন পাতে মাছ রাখলে দূরে রাখা যায় আরও অনেক সমস্যা। কিন্তু বাজারে গিয়ে মাছ কেনার সময় সাধারণত চেনা মাছের দিকেই ঝোঁকেন সবাই। বিশেষ করে মাছের ক্ষেত্রে বাঙালির সবসময়ের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে থাকে ইলিশ, রুই, কাতলা, পাবদা, পার্শের মতো মাছ। তবে সস্তার কিছু মাছও রয়েছে, যেগুলোর গুণ চমৎকারী। স্বাদ কম অথচ দামে দামি মাছের থেকেও এই সব অনেক কম দামি মাছ আপনার সুস্থ থাকায় দুর্দান্ত প্রভাব রাখতে পারে।
ভোলা ভেটকির গুণ
এমনই একটি আশ্চর্য স্বাস্থ্য গুণ সম্পন্ন মাছ হল 'বার মুটান মাছ'। এই মাছকে বাংলায় বলা হয় দেশি ভেটকি বা কোরাল মাছ। ঝকঝকে সাদা রঙের এই মাছ অনেক চিকিৎসা উপকারিতা প্রদান করে যা অনেকেরই অজানা। চিকিৎসক ও গবেষকদের মতে, বার মুটান মাছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। প্রদাহ, ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে এই মাছের জুড়ি নেই। ধমনীতে প্লাক জমার গতিকে ধীর করে এই মাছটি। প্রতিদিন কমপক্ষে ২৫০ মিলিগ্রাম ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড গ্রহণ করলে হঠাৎ হৃদরোগে মৃত্যুর ঝুঁকি ৩৫% কমাতে সাহায্য করতে পারে এই ধরণের মাছ। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড গ্রহণের অন্যান্য সুবিধার মধ্যে রয়েছে আর্থ্রাইটিস , বিষণ্ণতা এবং স্মৃতিশক্তি হ্রাস। এই মাছের পুষ্টিগুণ এতটাই যা যেমন হৃদপিণ্ড, জয়েন্ট এবং রক্তচাপের মতো সমস্যা প্রতিরোধ করে।
কেমন দেখতে
'বার মুটান মাছ' বা এই 'কোরাল' মাছের দেহ দুধের মতো সাদা, মসৃণ, দেহ চ্যাপ্টা, লেজ কালচে এবং পেট ও লেজের মাঝখানে একটি কালো দাগ থাকে। মাছের বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এর শরীরের কালো দাগগুলি কিন্তু পরিবর্তিত হয়। এর অনন্য বৈশিষ্ট্য হল এর মুখের উপরের অংশের নীল রঙ, যা অন্য কোনও মাছের মধ্যে পাওয়া যায় না। মাছের উপরের অংশ গোলাপি রঙের। ম্যাকেরেল পরিবারের অন্তর্ভুক্ত কোরাল বা দেশি ভেটকি বা ভোলা ভেটকি মাছকে দেশের অন্য প্রান্তে আবার বারমাউথ মাছও বলা হয় কারণ এরা প্রচুর পাথর এবং কাদাযুক্ত এলাকায় বাস করে।
দামে কম
এই মাছের খাদ্যতালিকায় রয়েছে ছোট মাছ, চিংড়ি পোনা এবং শৈবাল। এটি একটি বাজেট-ফ্রেন্ডলি মাছ যা অত্যন্ত সুস্বাদু। বাজারে এই মাছগুলি প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়।
উপকারিতা
হৃদপিণ্ডকে কোলেস্টেরল থেকে দূরে রাখে এই মাছ। কারণ এতে স্যাচুরেটেড অ্যাসিড এবং পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। স্ট্রোক, এথেরোস্ক্লেরোসিস এবং হার্ট অ্যাটাক থেকে রক্ষা পাওয়া যায় নিয়মটি এই মাছ খেলে। এই মাছে চর্বি কম এবং প্রোটিন বেশি থাকে, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। এতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ভিটামিন বি-৩ হাত ও পায়ের আর্থ্রাইটিস প্রতিরোধ করে।