প্রস্রাবে ফেনা অনেকের কাছেই সাধারণ একটি ঘটনা। কিন্তু আপনি কি জানেন, এই সাধারণ মনে হওয়া লক্ষণটিই কখনও কখনও কিডনির গুরুতর রোগের ইঙ্গিত দিতে পারে? চিকিৎসকরা বলছেন, প্রস্রাবে ফেনা যদি নিয়মিত দেখা যায় বা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে বিষয়টি অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
কেন প্রস্রাবে ফেনা দেখা দেয়?
অনেক সময় প্রস্রাব দ্রুত বা জোরে প্রবাহিত হলে বাতাসের বুদবুদ তৈরি হয়, যা স্বাভাবিকভাবে কিছুক্ষণের মধ্যে মিলিয়ে যায়। কিন্তু যদি প্রতিবারই প্রস্রাবে ফেনা দেখা যায় বা তা থেকে যায়, তাহলে এর পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে শারীরিক সমস্যা। নিচে সেই কারণগুলো তুলে ধরা হলো—
১. জলের ঘাটতি (Dehydration)
যখন শরীরে পর্যাপ্ত জল থাকে না, তখন প্রস্রাব ঘন হয়ে যায় এবং এতে বর্জ্য পদার্থের ঘনত্ব বাড়ে। ফলে ফেনা বা বুদবুদ তৈরি হতে পারে। নিয়মিত পর্যাপ্ত জল পান করলে এই সমস্যা সহজেই কমে যায়।
২. প্রস্রাবে প্রোটিন (Proteinuria)
সুস্থ কিডনি সাধারণত শরীরের প্রোটিনকে প্রস্রাবে বের হতে দেয় না। কিন্তু কিডনির ফিল্টার ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রোটিন প্রস্রাবে চলে আসে, যাকে প্রোটিনিউরিয়া বলা হয়। এটি কিডনি রোগের অন্যতম প্রাথমিক লক্ষণ।
৩. কিডনি রোগ (Kidney Disease)
দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ, গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস বা নেফ্রোটিক সিনড্রোমের মতো সমস্যায় প্রস্রাবে ফেনা দেখা যেতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রথম লক্ষণ এটি। তাই নিয়মিত ফেনাযুক্ত প্রস্রাবকে উপেক্ষা করা উচিত নয়।
৪. মূত্রনালীর সংক্রমণ (UTI)
ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বা ইউটিআই প্রস্রাবের গঠন পরিবর্তন করতে পারে। এতে ফেনা, দুর্গন্ধ, প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া এবং ঘন ঘন প্রস্রাবের মতো উপসর্গ দেখা যায়।
৫. অন্যান্য কারণ
কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, অতিরিক্ত প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার, বা টয়লেট পরিষ্কারের রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শেও প্রস্রাবে ফেনা দেখা দিতে পারে।
নীচের যেকোনও উপসর্গ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন—
ফেনাযুক্ত প্রস্রাব তিন দিনের বেশি স্থায়ী হয়
প্রস্রাব ঘন বা গাঢ় হয়ে যায়
হাত, পা বা মুখ ফুলে যায়
প্রস্রাবে রক্ত দেখা যায়
ক্লান্তি, বমি বমি ভাব বা উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়
কীভাবে রোগ নির্ণয় করা হয়
ডাক্তার প্রথমে ইউরিন ডিপস্টিক টেস্ট করে প্রস্রাবে প্রোটিন আছে কি না তা পরীক্ষা করেন। প্রয়োজনে রক্ত ও ইউরিনের পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষা করে কিডনির কার্যক্ষমতা যাচাই করা হয়। সময়মতো রোগ শনাক্ত করা গেলে কিডনি সমস্যা গুরুতর হওয়ার আগেই চিকিৎসা শুরু করা যায়।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
চিকিৎসকরা বলছেন, দিনে পর্যাপ্ত জল পান, অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ থেকে বিরত থাকা, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা কিডনি সুস্থ রাখার জন্য অত্যন্ত জরুরি।