খাবারের স্বাদ বাড়াতে লবণ অপরিহার্য হলেও এর অতিরিক্ত ব্যবহার যে প্রাণঘাতী হতে পারে, তা আবারও স্পষ্ট করল ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ (ICMR)। তাদের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ এপিডেমিওলজির সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ভারতীয়রা প্রতিদিন যে পরিমাণ লবণ খাচ্ছেন, তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) নির্ধারিত সীমার চেয়ে অনেক বেশি।
WHO অনুযায়ী, একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক লবণ গ্রহণের নিরাপদ মাত্রা ৫ গ্রামের কম। কিন্তু ICMR-এর তথ্য বলছে, শহুরে ভারতের মানুষ প্রতিদিন গড়ে ৯.২ গ্রাম লবণ খাচ্ছেন, আর গ্রামীণ এলাকায় এই মাত্রা ৫.৬ গ্রাম। অর্থাৎ, দুই ক্ষেত্রেই লবণের ব্যবহার নিরাপদ সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
অতিরিক্ত লবণ গ্রহণের ফলে উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, হৃদরোগ ও কিডনি সমস্যার মতো নিঃশব্দ মহামারী ছড়িয়ে পড়ছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এনআইই-এর সিনিয়র বিজ্ঞানী ড. শরণ মুরালির কথায়, “লবণের সোডিয়াম কমিয়ে আনলে রক্তচাপ গড়ে ৭/৪ মিমিএইচজি পর্যন্ত কমানো সম্ভব। এটা ছোট পরিবর্তন হলেও ফলাফল বড়।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু খাবারে সরাসরি লবণ কমালেই হবে না। প্যাকেটজাত, টিনজাত ও রেস্তোরাঁর খাবারে লুকিয়ে থাকা সোডিয়ামের মাত্রাও নজরে রাখতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে, দৈনন্দিন খাদ্যে যে সোডিয়াম ঢুকে পড়ে, তার ৭০ শতাংশেরও বেশি আসে প্রক্রিয়াজাত বা প্রস্তুত খাবার থেকে।
টেবিল লবণের মাত্রা সহজে বোঝার জন্য বলা হচ্ছে—১ চা চামচ লবণে থাকে প্রায় ২,৪০০ মিগ্রা সোডিয়াম। লেবেলে বিভিন্ন নামে লেখা সোডিয়াম যেমন মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট, সোডিয়াম নাইট্রেট ইত্যাদির দিকেও নজর দিতে হবে।
ICMR-এর পরামর্শ, বাড়িতে রান্না করুন, কম সোডিয়ামযুক্ত লবণ ব্যবহার করুন, আর দৈনিক ৫ গ্রামের মধ্যে লবণ গ্রহণ সীমিত রাখুন। এতে হৃদ্স্বাস্থ্যের ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব।