ভারতে হৃদরোগীর সংখ্যা গত কয়েক বছরে উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। মুম্বাই-ভিত্তিক ফার্মার্যাকের সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২১ সালের জুনে হৃদরোগের ওষুধের বাজারমূল্য ছিল ১,৭৬১ কোটি টাকা, যা ২০২৫ সালের জুনে পৌঁছেছে ২,৬৪৫ কোটিতে। অর্থাৎ, পাঁচ বছরে হৃদরোগ-সংক্রান্ত ওষুধের বিক্রি ৫০% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা প্রতিবছর গড়ে ১০.৭% হারে বাড়ছে।
কেন বাড়ছে এই প্রবণতা?
বিশেষজ্ঞদের মতে, হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির কারণগুলো ক্রমেই বেড়ে চলেছে—উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, স্থূলতা এবং ডায়াবেটিসের মতো জীবনযাত্রা-নির্ভর সমস্যাগুলি বাড়ছে। ডঃ বিকাশ কোহলি জানিয়েছেন, বর্তমানে রোগ দ্রুত শনাক্ত হওয়ায় খুব প্রাথমিক পর্যায়েই ওষুধ ও চিকিৎসা শুরু করা হচ্ছে। স্যাকুবিট্রিল, এপলেরেনোনের মতো নতুন ওষুধের চাহিদা ৮৩% পর্যন্ত বেড়েছে। পাশাপাশি শিশুদের পালমোনারি হাইপারটেনশনের চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যামব্রিসেন্টান, সেলেক্সিপ্যাগ, ট্যাডালাফিলের মতো ওষুধের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।
পরিসংখ্যান যা চিন্তার কারণ
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ২০২১ সালে হৃদরোগে মৃত্যু হয়েছিল ২৮,৪১৩ জনের, যা ২০২২ সালে বেড়ে হয়েছে ৩২,৪৫৭। আমেরিকান লাইব্রেরি অফ মেডিসিনের ২০২৪ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শহরে করোনারি আর্টারি ডিজিজের প্রবণতা ১৯৬০-এর দশকের ১–২% থেকে আজ ১০–১২%-এ পৌঁছেছে। গ্রামে এটি ৪–৬% পর্যন্ত পৌঁছেছে।
তরুণরাও ঝুঁকিতে
হৃদরোগ এখন আর শুধু বয়স্কদের রোগ নয়। ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সী বহু মানুষই এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। কলেজ পড়ুয়াদের এক-তৃতীয়াংশের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। ২০১৯–২০২২ সালের মধ্যে স্থূলতা ৫০% বেড়েছে।
কী করা দরকার?
ডঃ কোহলির মতে, “ওষুধ দিয়ে একা এই সংকট থেকে মুক্তি সম্ভব নয়। প্রতিরোধকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।” তাই স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, নিয়মিত ব্যায়াম, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর এখনই জোর দেওয়া প্রয়োজন। অন্যথায়, ভারতের হৃদরোগের এই সংকট আরও গভীর হতে পারে।