ইলিশের নাম শুনলে জিভে জল আসে না এমন বাঙালি বোধ হয় খুব কমই আছে। ইলিশ ভাপা, সর্ষে ইলিশ, দই ইলিশ, ইলিশ পাতুরি, ইলিশ বিরিয়ানি, ইলিশ মাছ ভাজা কিংবা ইলিশের ডিমের পদ ছাড়াও আরও একাধিক রান্না দিয়ে তালিকা অনেক লম্বা। তবে শুধু যে স্বাদ বা গন্ধে এই মাছের রাজকীয়তা তা কিন্তু নয়। ইলিশের রয়েছে নানা পুষ্টিগুণ।
ভরপুর পুষ্টিগুণ
ইলিশ মাছে রয়েছে আয়োডিন, সেলেনিয়াম, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক,সোডিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়ামের মতো একাধিক খনিজ উপাদান। ফসফরাস দাঁত এবং ক্যালসিয়াম হাড়ের পুষ্টির জন্য প্রয়োজনীয়। অন্যদিকে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও লৌহ শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং মানসিক বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
ভেজাল ইলিশ
রুপোলী ফসল সকলের প্রিয় হলেও, ইলিশ মাছেও আজকাল ভেজাল ঢুকে গেছে। ফর্মালিন দেওয়া ইলিশকে তাজা বানিয়ে বিক্রি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা। জেনে নিন কীভাবে চিনবেন বাজারের ইলিশ টাটকা না ভেজাল? তাহলে আর ঠকতে হবে না।
আসল ইলিশ চেনার উপায়
রং: ইলিশের রং চকচকে রুপালী। এর গায়ের রং দিয়েই বিচার করুন এটা তাজা না বাসি৷ রং যত বেশি উজ্জ্বল হবে, তত বোঝা যায় ইলিশ টাটকা এবং সুস্বাদু।
ওজন: টাটকা ইলিশ যথেষ্ট প্রশস্ত থাকে এবং ওজনেও ভারী হয়। মাছের আকার এবং ওজনে সাদৃশ্য থাকে। বাসি, পঁচা বা রাসায়নিক দেওয়া ইলিশ অনেকটা চুপসানো ভাব থাকে।
কানকো: ইলিশ কিনতে গেলে এর কানকো দেখে নেবেন। তাজা ইলিশের কানকো তাজা রক্তের মতো লাল হয়, এতে পিচ্ছিল ভাব থাকে। বাসি ইলিশের কানকো উজ্জ্বল লাল হবে না।
চোখ: কানকোর মতো চোখও তাজা ইলিশ চেনার আরও একটি উপায়। টাটকা ইলিশ মাছের চোখ স্বচ্ছ, নীল বা উজ্জ্বল রংয়ের হয়। কিন্তু বাসি ইলিশের চোখে এই সতেজতা পাবেন না৷
গড়ন: ইলিশ মাছের মুখ সাধারণত সরু হয়। পেটের থেকে মুখের দিকে ক্রমশ সরু হয়ে তীরের ফলার মত দেখায়। মুখ ভোঁতা হলে সেই ইলিশ কেনা থেকে বিরত থাকুন।
নরম-শক্ত: টাটকা ইলিশের গায়ে হাত দিয়ে পরীক্ষা করে দেখবেন। সদ্য ধরা ইলিশ শক্ত থাকে। বাসি ইলিশ নরম হয়ে যায়, মাছের গায়ে হাত দিয়ে টিপে বুঝতে পারবেন।
ইলিশ মাছের গুণ কী কী?
* ইলিশে ভিটামিন এ, ডি এবং ই আছে। ভিটামিন এ রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে এবং ডি, শিশুদের রিকেট রোগ থেকে রক্ষা করে। তাই এই মাছ শিশুদের জন্যেও উপকারী।
* এই মাছে প্রচুর ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, এটি হার্ট সুস্থ রাখতে কার্যকরী। সেই সঙ্গে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে ইলিশ। এতে সম্পৃক্ত চর্বি কম থাকে ফলে সুস্থ থাকে হার্ট। এছাড়া অবসাদের মোকাবিলা করতে পারে। সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিজঅর্ডার (SAD), পোস্ট ন্যাটাল ডিপ্রেশনের মতো মানসিক সমস্যাগুলি কাটাতে পারে ইলিশ মাছ।
* ইলিশে রয়েছে ভিটামিন এ,চোখ ভাল রাখতে সাহায্য করে। যাদের দৃষ্টিশক্তি কমে আসার সমস্যা থাকে, তারা ইলিশ খেয়ে উপকার পাবেন।
* সামুদ্রিক মাছ ফুসফুসের জন্য খুবই ভাল। যারা নিয়মিত ইলিশ মাছ খান, তাদের ফুসফুস অনেক বেশি শক্তিশালী হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে হাঁপানি রোধ করতে পারে ইলিশ মাছ।