সম্প্রতি প্রকাশিত লিভিং প্ল্যানেট রিপোর্ট ভারতের খাদ্যাভ্যাসের পরিবেশ-বান্ধবতা এবং টেকসইতা সম্পর্কে বিশদভাবে আলোচনা করেছে। এই গবেষণায় বলা হয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তুলনায় ভারতের খাদ্যাভ্যাস জলবায়ুর ওপর অনেক কম ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে G20 অর্থনীতির দেশগুলির মধ্যে ভারতের খাদ্য গ্রহণের ধরণ সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব হিসেবে স্থান পেয়েছে। ২০৫০ সালের মধ্যে, যদি অন্যান্য দেশও ভারতের মতো খাদ্য উৎপাদন ও ব্যবহারের প্রতি মনোযোগ দেয়, তাহলে তা পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা পালন করতে পারে বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে।
ভারতের খাদ্যাভ্যাসের প্রশংসা
ভারতের খাদ্যাভ্যাসের বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে প্রধানত স্থানীয় ও মৌসুমি খাবারের প্রাধান্য রয়েছে, যা পরিবেশের ওপর কম চাপ ফেলে। ভারতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণে বাজরা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর শস্য ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে বাজরা খাদ্যের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। ২০২৩ সালকে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে "মিলেটস ইয়ার" ঘোষণা করার পর ভারতও তার জাতীয় মিলেট মিশন এবং অন্যান্য উদ্যোগের মাধ্যমে বাজরার প্রচারণা বাড়িয়েছে। এই প্রচারাভিযানগুলি জনগণকে বাজরার উপকারিতা সম্পর্কে সচেতন করছে, যা কেবল স্বাস্থ্যগত দিক থেকেই নয় বরং আবহাওয়া এবং পরিবেশের জন্যও উপকারী।
ভারতের খাদ্যাভ্যাসে নিরামিষ এবং আমিষ উভয় ধরনের খাবারের মিশ্রণ পাওয়া যায়। উত্তর ভারতের রুটি-ডাল এবং দক্ষিণ ভারতের ভাত-ভিত্তিক খাবার যেমন ইডলি, দোসা এবং সাম্বার এখানকার খাদ্য সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে দেশের পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের মাছ ভাত এবং নানান ধরনের ঋতুভিত্তিক খাবার।
বাজরার ভূমিকা
ভারত হলো বিশ্বের বৃহত্তম বাজরা উৎপাদনকারী দেশ, যেখানে বৈশ্বিক উৎপাদনের ৪১ শতাংশ বাজরার উৎপাদন হয়। ভারতের খাদ্যাভ্যাসে বাজরার মতো শস্যের স্থান গুরুত্বপূর্ণ। বাজরা স্বল্প জলবায়ুর চাপে বেড়ে ওঠে এবং প্রচুর পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ যেমন জাতীয় মিলেট মিশন এবং খরা প্রশমন প্রকল্প বাজরার ব্যবহার বাড়ানোর চেষ্টা করছে, যা কৃষি ও পরিবেশ উভয়ের জন্য উপকারী।
অন্য দেশের খাদ্যাভ্যাসের সমস্যা
এই গবেষণায় ভারতের পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়া এবং চীনের খাদ্যাভ্যাসকেও তুলনামূলকভাবে টেকসই হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। তবে আমেরিকা, আর্জেন্টিনা এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলির খাদ্যাভ্যাসকে সবচেয়ে খারাপ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব দেশে চর্বি ও চিনিযুক্ত খাবারের অতিরিক্ত গ্রহণের কারণে স্থূলতার হার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই দেশগুলিতে আনুমানিক ২.৫ বিলিয়ন মানুষ অতিরিক্ত ওজনের এবং প্রায় ৮৯০ মিলিয়ন মানুষ স্থূলতায় ভুগছেন।
টেকসই খাদ্যাভ্যাসের গুরুত্ব
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, টেকসই খাদ্যাভ্যাসের জন্য প্রক্রিয়াজাত খাবারের ব্যবহার কমাতে হবে এবং নিরামিষ খাবারের দিকে ঝোঁক দিতে হবে। এতে খাদ্য অপচয়ের পরিমাণও কমে আসবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট ক্ষতির পরিমাণও অনেকটা হ্রাস পাবে।
লিভিং প্ল্যানেট রিপোর্ট স্পষ্টভাবে বলেছে, ২০৫০ সালের মধ্যে যদি অন্যান্য দেশ ভারতের মতো খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ করে, তাহলে বৈশ্বিক খাদ্য সংকট, পরিবেশগত ক্ষতি এবং প্রাকৃতিক সম্পদের হ্রাস অনেকটাই কমে যাবে। এজন্য প্রাকৃতিক, মৌসুমি এবং পরিবেশবান্ধব খাদ্য গ্রহণের ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন।