ঘুম মানবদেহের সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীর ও মনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। অনেকে ব্যস্ততার কারণে কম ঘুমান, আবার কেউ কেউ বেশি ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তোলেন। তবে চিকিৎসকদের মতে, কম বা অতিরিক্ত ঘুম—দুটিই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই বয়স অনুযায়ী নির্দিষ্ট ঘুমের সময় মেনে চলা জরুরি।
কম ঘুমের ক্ষতিকর প্রভাব
নিয়মিত কম ঘুম শরীরে নানাবিধ সমস্যা সৃষ্টি করে। রেসমেডের এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকার চিকিৎসা বিষয়ক প্রধান ডাঃ শিবাশিষ দে জানিয়েছেন, কম ঘুম স্লিপ অ্যাপনিয়ার মতো গুরুতর সমস্যার জন্ম দিতে পারে। স্লিপ অ্যাপনিয়া হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে ঘুমের মধ্যে বারবার শ্বাস নিতে সমস্যা হয়, যা জীবনহানিকরও হতে পারে।
কম ঘুমের কারণে হতে পারে:
স্মৃতিশক্তি হ্রাস: হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমের সময় মস্তিষ্ক স্মৃতি সংরক্ষণ করে। কম ঘুমের ফলে স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যায়।
ওজন বৃদ্ধি: ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথের গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ৬ ঘণ্টার কম ঘুমানো ব্যক্তিদের স্থূলতার আশঙ্কা ৩০% বেশি থাকে।
হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস: সিডিসি (সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল)-এর গবেষণায় বলা হয়েছে, অনিয়মিত ঘুম রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করে, যা ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়।
মেজাজের পরিবর্তন ও বিষণ্ণতা: স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ৬ ঘণ্টার কম ঘুম বিষণ্ণতা ও উদ্বেগের ঝুঁকি দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়।
বয়স অনুযায়ী ঘুমের প্রয়োজনীয়তা
ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশন এবং হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের বিশেষজ্ঞদের মতে, বিভিন্ন বয়সের মানুষের ঘুমের চাহিদা ভিন্ন হয়ে থাকে:
নবজাতক (০-৩ মাস): ১৪-১৭ ঘণ্টা
শিশু (৪-১১ মাস): ১২-১৫ ঘণ্টা
কিশোর (১-২ বছর): ১১-১৪ ঘণ্টা
প্রাক-স্কুল (৩-৫ বছর): ১০-১৩ ঘণ্টা
স্কুলগামী শিশু (৬-১৩ বছর): ৯-১১ ঘণ্টা
কিশোর (১৪-১৭ বছর): ৮-১০ ঘণ্টা
প্রাপ্তবয়স্ক (১৮-৬৪ বছর): ৭-৯ ঘণ্টা
প্রবীণ (৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে): ৭-৮ ঘণ্টা
অতিরিক্ত ঘুমের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
অনেকেই মনে করেন বেশি ঘুম স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত ঘুমও শরীরের ক্ষতি করতে পারে। ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, যারা প্রতিদিন ৯ ঘণ্টার বেশি ঘুমান, তাদের স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ২০% বেশি থাকে।
অতিরিক্ত ঘুমের কারণে হতে পারে:
বিপাক ক্রিয়া ধীর হয়ে যায়: বেশি ঘুমালে শরীরের মেটাবলিজম ধীর হয়, ফলে ওজন বৃদ্ধি পায়।
অলসতা ও ক্লান্তি: সারাদিন ঘুমিয়ে থাকলে শরীর অলস ও ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
জৈবিক ঘড়ির ব্যাঘাত: অতিরিক্ত ঘুম শরীরের ন্যাচারাল ক্লক বা বায়োলজিক্যাল রিদমে ব্যাঘাত ঘটায়, ফলে ঘুমের গুণগত মান কমে যায়।