
একসময় পিঠের ব্যথা ছিল বয়স্কদের সমস্যা, কিন্তু এখন এই যন্ত্রণায় কাতর তরুণ প্রজন্ম। প্রযুক্তিনির্ভর জীবনযাপন, ঘন্টার পর ঘন্টা স্ক্রিনে চোখ রেখে কাজ করা এবং শারীরিক নড়াচড়ার অভাব আজ ২০ বছর বয়সীদেরও এনে দিচ্ছে ৬০ বছরের ব্যথা। বিশেষজ্ঞদের মতে, অবহেলা করলে এই সমস্যাই ভবিষ্যতে মেরুদণ্ডের গুরুতর রোগে পরিণত হতে পারে।
গবেষণায় উদ্বেগজনক তথ্য
২০২৫ সালের রিসার্চগেট প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতে প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ মেরুদণ্ডজনিত আঘাতে ভুগছেন। গ্লোবাল বার্ডেন অফ ডিজিজ (২০২৩) অনুসারে, কোমরের ব্যথা বিশ্বজুড়ে অকাল মৃত্যু এবং কর্মক্ষমতা হ্রাসের অন্যতম কারণ। ভারতে মেরুদণ্ডের আঘাতের সংখ্যা চিনের পরে দ্বিতীয় স্থানে। ২০২৪ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ই-লার্নিং ডিভাইস ব্যবহারকারী ৬১% স্কুল শিক্ষার্থী ঘাড় ব্যথার অভিযোগ করেছেন। অন্যদিকে, ৬০% কর্মজীবী মানুষ পিঠে ব্যথা নিয়ে ভুগছেন।
তরুণদের পিঠে ব্যথার প্রধান কারণ
বেঙ্গালুরুর মণিপাল হাসপাতালের মেরুদণ্ড সার্জারির প্রধান ডা. বিদ্যাসাগর এস. বলেন, 'যদি তরুণ বয়সেই ক্রমাগত পিঠে ব্যথা শুরু হয়, তাহলে ৪০ বছর নাগাদ ঝুঁকি ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।'
১. সার্ভিকাল স্পন্ডিলোসিস (ঘাড়ের আর্থ্রাইটিস):
অতিরিক্ত মোবাইল ও ল্যাপটপ ব্যবহারের ফলে ঘাড়ের পেশী দুর্বল হয়ে যায়। একসময় এটি ৫০ বছর পর দেখা দিত, এখন ২০-৩০ বছর বয়সীদের মধ্যেও হচ্ছে।
২. অস্টিওপোরোসিস:
ভিটামিন ডি-এর অভাব, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস ও অতিরিক্ত ডায়েটিং তরুণদের হাড় দুর্বল করছে।
৩. স্পাইনাল স্টেনোসিস (মেরুদণ্ডের ক্যানেল সংকোচন):
ভুল ব্যায়াম বা ভারোত্তোলনের ফলে তরুণদের মেরুদণ্ডে চাপ পড়ছে, তৈরি হচ্ছে ব্যথা ও স্নায়ু সমস্যা।
৪. ফেসেট জয়েন্ট আর্থ্রাইটিস:
অতিরিক্ত ওজন ও অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রা তরুণদের মেরুদণ্ডে আর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
৫. লাম্বার ডিস্ক অবক্ষয়:
অফিসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকা, ব্যায়ামের অভাব ও স্থূলতা মেরুদণ্ডের ডিস্ক ক্ষয় করছে, যা ব্যথার মূল কারণ।
কীভাবে রাখবেন মেরুদণ্ডকে সুস্থ
দিল্লির স্যার গঙ্গা রাম হাসপাতালের ডাঃ রমন কাপুরের মতে, “এক জায়গায় দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা নয়, বরং শরীরকে সক্রিয় রাখা এবং সুষম জীবনযাপনই মেরুদণ্ডের স্বাস্থ্য রক্ষা করে।”
দিনে কয়েকবার অবস্থান পরিবর্তন করুন, কখনও বসে, কখনও দাঁড়িয়ে বা হাঁটাচলা করুন।
প্রতিদিন কিছু কোর এক্সারসাইজ (যেমন প্ল্যাঙ্ক, ব্রিজ, সাঁতার) করুন।
সঠিক চেয়ার ও ডেস্ক ব্যবহার করুন, যাতে পিঠে চাপ না পড়ে।
ভারী জিনিস তোলার সময় সাবধান থাকুন।
যদি ঘন ঘন ব্যথা, শক্ত হওয়া বা ঝিনঝিন ভাব অনুভব করেন, অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।