এই বাংলায় বারো মাসে তেরো পার্বন। মরশুমের পালাবদলের সঙ্গে আছে খাবার-দাবারে নানা পরিবর্তন। আর শীতকাল আসা মাত্রই ধুম পড়ে যায় পিঠে-পুলি খাওয়ার। পিঠে বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অংশ। পিঠের প্রধান উপাদান হলো চালের গুঁড়ো, গুড়, ময়দা, নারকেল, তেল, ঘি, বাদাম, দুধ ইত্যাদি। পিঠের ধরনের ওপর বেশ কিছু উপাদান নির্ভর করে। কিছু পিঠে মিষ্টি আবার কিছু নোনতা, কিছু নরম আবার কিছু শক্ত। শীতের সময় হরেক ধরনের পিঠে তৈরি হয়। দুধপুলি থেকে শুরু করে পাটিসাপটা, রসবড়া, ভাপা পিঠে, সরু চাকলি, চুষি পিঠে। তবে এই পিঠে খাওয়ারও রয়েছে স্বাস্থ্যগুণ। জেনে নিন পিঠের কোন উপকরণে কত পুষ্টি; সঙ্গে জেনে রাখুন কে কোন পিঠে খাবেন বা খাবেন না।
পিঠের কোন উপকরণে রয়েছে কত পুষ্টি
-শীতের প্রায় সব পিঠের প্রধান উপকরণ আতপ চালের গুঁড়ো। এতে আছে প্রচুর শর্করা, কিছু প্রোটিন আর খুব অল্প পরিমাণে ফ্যাট। এতে থাকা শর্করা শরীরে শক্তি জোগায়। এ ছাড়া ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন ইত্যাদি উপাদানও পাওয়া যায় আতপ চালে।
-খনিজ, আঁশ, ক্যালরি, ভিটামিনের ভালো উৎস গুড়। খেজুর ও আখের গুড়—দুটিই উপকারী। প্রতি ১০০ গ্রামে থাকে প্রায় ১৫৮ ক্যালরি।
-নারকেল পিঠে অবিচ্ছেদ্য এক উপাদান। একটি মাঝারি আকারের নারকেলে থাকে ১ হাজার ৪০৫ ক্যালরি, জল থাকে ১০০ থেকে ১৫০ মিলিলিটার। এতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা সম্পৃক্ত চর্বি এবং আঁশও মেলে। পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেশিয়াম ও জিংকের মতো খনিজেরও দুর্দান্ত উৎস।
-অনেক পিঠে সুস্বাদু করতে বাদাম দেওয়া হয়। তা ছাড়া পায়েস ও ফিরনিতেও বাদামের ব্যবহার করি আমরা। খনিজ, ফ্যাট, ভিটামিন, ফ্যাটি অ্যাসিডের উৎস এই বাদাম।
-পিঠে তৈরিতে দুধও ব্যবহার করা হয়। প্রতি ১০০ গ্রাম দুধে খাদ্যশক্তি আছে ৬৭ কিলোক্যালরি; প্রোটিন ও ক্যালসিয়ামের ভাল উৎস। এ ছাড়া ১ গ্রাম তেলে পাওয়া যায় ৯ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি।
কারা পিঠে খাবেন না
ডায়াবেটিস রোগীরা পিঠাপুলি খেতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন। স্থূলতা ও হৃদ্রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরাও পিঠে খেতে ভয় পান। পিঠেয় ব্যবহৃত চালের গুঁড়া, খেজুরের রস বা গুড় খেয়ে রক্তে চিনির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। আবার যাঁরা কিডনির জটিলতায় ভুগছেন, তাঁরা পিঠে খাবেন তাঁদের ক্লিনিক্যাল প্যারামিটারগুলো, যেমন পটাশিয়াম, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম দেখে। তবে ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ বা কিডনি রোগীদের দুধ, গুড় ও নারকেল দিয়ে তৈরি পিঠে না খাওয়াই ভালো। দুধ-চিতইয়ের পরিবর্তে শুধু চিতই পিঠে, সরু চাকলি খেতে পারেন। ঝাল পাটিসাপটা খাওয়াতেও কোনও অসুবিধে নেই।