Mandarmoni Sea Beach: বাঙালি জন্মসূত্রে যে তিনটি জায়গার ভ্রমণের লিগাসি নিয়ে অবতীর্ণ হয়, তার মধ্যে দুটি সমুদ্র, একটি পাহাড়। বুঝলেন না? খোলসা করলে জলের মতো তরল হয়ে যাবে। বলছি দিপুদার কথা। দিঘা, পুরী, দার্জিলিং। গোটা জন্ম যাঁরা আর কোথাও যায় না, তাঁরা এই তিনটি জায়গায় অন্তত একবার গিয়ে নিজের পর্যটনের কোটা কমপ্লিট করে। কিন্তু সমস্য়া হল গত কয়েক দশকে তিনটি জায়গাই উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি করেছে উন্নয়নে। আর উন্নয়নের ঠেলায় হোটেল বেড়েছে, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল হয়েছে। ইন্টারনেট এসেছে। ফলে পর্যটকের ভিড়ও বেড়েছে। আর ঘিঞ্জি হয়ে উঠেছে। তাই অনেকে যাঁরা থিকথিকে ভিড়ের হুজ্জোতি পছন্দ করেন না, তাঁদের জন্য বিকল্প জায়গা খুঁজে বের করা অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছিল। পাহাড়ে যেমন দার্জিলিংয়ের বিকল্প একগুচ্ছ জায়গা তৈরি হয়ে গিয়েছে, তেমনই দীঘার সমুদ্র সৈকত বরাবর আরও বেশ কিছু সমুদ্রতট খুঁজে বের করা হয়েছে। যার ঢেউও দীঘা থেকে শান্ত, আবার এলাকাতেও ভিড় নেই বললেই চলে। তার মধ্যে অন্যতম মন্দারমণি। গত এক দশকে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও, দীঘার মতো শহরাঞ্চল না হওয়ায় ভিড় অনেক কম। ফলে শান্তির সমুদ্র বলতে যা বোঝায় নির্জনে সমস্ত সুবিধাযুক্ত সমুদ্রতট।
ভরা কোটাল
এমনিতে ঢেউয়ের নিরিখে দিঘার চেয়ে শান্ত হলেও জুন মাসের এই সময় মন্দারমণিতে চলছে ভরা কোটাল। ফলে কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে সমুদ্রের রূপ বদলে যাচ্ছে। দুপুরবেলা সমুদ্র যেখানে থাকছে, সন্ধ্যার পর থেকে সমুদ্র এগিয়ে আসছে আধ কিলোমিটার। দুপুরে যেখানে শুকনো চড়া, ভোরেই সেখানে আছড়ে পড়ছে প্রবল সমুদ্র। আর সমুদ্র সরে পিছিয়ে যেতেই বেরিয়ে আসছে লাল-কালো কাঁকড়ার দল। যদিও শীতকালে কাঁকড়া বেশি দেখা যায়, তবে তাকিয়ে থাকলে কাঁকড়ার গর্ত দেখা যাবে গোটা চর জুড়েই। প্রবল হাওয়ায় পারেও বসে থাকা দায়। তবে তার মধ্য়েই সময় কাটান ঘুরতে আসা দলগুলি। সমুদ্রের তীর বরাবর একের পর এক রিসর্ট। সবগুলির চত্বরে বা বারান্দায় দাঁড়ালেই সমুদ্রের গর্জন শোনা ও দেখা যায়। এটাই এখানকার বৈশিষ্ট্য।
মন্দারমণি
পূর্ব মেদিনীপুরের মন্দারমণি এলাকায় বঙ্গোপসাগরের উপকূলের এই জায়গাটি কলকাতা ও হাওড়ার সঙ্গে জাতীয় সড়ক দিয়ে সংযুক্ত। এর খুব কাছেই রয়েছে দিঘা। দিঘার মতো বড়-বড় ঢেউ এখানে না পেলেও নিট অ্যান্ড ক্লিন এই সাগরতট নজর কাড়বেই। লাল কাঁকড়ার জন্য বিখ্যাত জায়গা হল মন্দারমণি। মন্দারমণি জায়গাটির নাম নিয়ে এখানে একাধিক ধারণা প্রচলিত রয়েছে। তবে অধিকাংশেরই বক্তব্য, ‘মন্দার’ ফুলের নামানুসারেই এই জায়গার নাম হয়েছে মন্দারমণি।
কী কী দেখবেন?
সব সমুদ্রের মতোই মন্দারমণি তটেরও মূল আকর্ষণ সমুদ্রের ঢেউ। আপাত শান্ত, তবে একাকী বা নিতান্ত হানিমুন কাপলদের সময় কাটানোর আদর্শ। এখানে একটি বাজার আছে। সেটাই এখানকার একমাত্র জমজমাট জায়গা। প্রচুর জিনিস পাওয়া যায়। আর সমুদ্রতীরের বাজারের যে আকর্ষণ, নানা রকম মাছ ভাজা আর ফ্রাই। আশপাশে আর তেমন কোনও দোকানপাট নেই। ফলে যদি ওই মার্কেট থেকে একটু দূরে যদি হোটেল-রিসর্টে থাকেন। বেরিয়ে কিছুই পাবেন না। অটো বা গাড়িতে কয়েক কিমি দূরে মন্দারমণি মার্কেটে যেতে হবে। তবে এখানকার সব রিসর্টে সব কিছুই পাওয়া যায়।
দিন কয়েকের জন্য ছুটি কাটানোর একেবারে আদর্শ জায়গা হল মন্দারমণি। এখানে সমুদ্রে বোটিং-সহ পর্যটকদের মনোরঞ্জনের জন্য একাধিক রাইড রয়েছে। তবে সেক্ষেত্রে নিজেদের নিরাপত্তার দিকটির ব্যাপারে একশো শতাংশ নিশ্চিত হয়ে তবেই সেগুলিতে চড়া ভালো।
কীভাবে যাবেন মন্দারমণি?
হাওড়া থেকে ট্রেন ধরলে সোজা দিঘা। ধর্মতলা থেকে সরকারি-বেসরকারি প্রচুর বাস রয়েছে দিঘা পর্যন্ত সেখান থেকে গাড়ি নিয়ে চলে আসতে পারেন মন্দারমণি। দিঘা থেকে গাড়ি ভাড়া করে শঙ্করপুর, তাজপুর হয়ে সমুদ্রের ধার দিয়ে চলে আসতে পারবেন মন্দারমণি। আধ ঘন্টা থেকে ৪০ মিনিট সময় লাগে। কলকাতার দিক থেকে ট্রেনে গেলে নামতে পারেন কাঁথি স্টেশনে। মন্দারমণির সবচেয়ে কাছের রেল স্টেশন হল এই কাঁথি। কাঁথিতে নেমে গাড়িভাড়া করে আপনি পৌঁছে যেতে পারবেন মন্দারমণিতে। সড়কপথে গেলে সোজা কাঁথি থেকে ঢুকে পড়তে হবে মন্দারমণিতে। উত্তরবঙ্গ থেকে আসলে এনজেপি থেকে পাহাড়িয়া এক্সপ্রেস ধরে সোজা দিঘা। এই ট্রেনেও কাঁথিতে নেমে পড়তে পারেন। স্টেশন চত্বরেই গাড়ি ভাড়া করে পৌঁছে যান মন্দারমণি।
মন্দারমণিতে কোথায় থাকবেন?
আগে হাতেগোনা কয়েকটি হোটেল ছিল মন্দারমণিতে। তবে বর্তমানে ছোট-বড় মিলিয়ে একগুচ্ছ হোটেলে পেয়ে যাবেন। সিজনে গেলে আগে থেকে বুকিং করে যাওয়াই ভালো। তবে মন্দারমণিতে পৌঁছেও হোটেল বুক করতে পারেন। হোটেলভাড়াও নাগালের মধ্যেই। এসি-নন এসি দুই ধরনের ঘরই পেয়ে যাবেন। তাই গরম-ঠান্ডা সব সময় যেতে পারেন। তবে বাইরে ঘোরার জন্য অবশ্যই বর্ষা থেকে শীত পর্যন্ত ভাল। গরমে গরম হাওয়া বয়।