বর্তমান সময়ে অনিয়মের জীবনযাপন ও মশলাদার-তেলঝালের খাবারের কারণে ৪০ বছর বয়সেই শরীরে নানা ধরনের রোগ আমাদের ঘিরে ফেলে। তাই আগে থেকেই স্বাস্থ্যের বিশেষ যত্ন নেওয়া দরকার। সুষম খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত শরীরচর্চা করলে সুস্বাস্থ্য ধরে রাখা সম্ভব। ৪০ পেরোলেও নিরোগ জীবনযাপন করতে পারেন। তবে ৪০ পেরোনোর পর কয়েকটি স্বাস্থ্য পরীক্ষা মাস্ট। নিয়মিত চেকআপও আবশ্যিক। আসলে শরীরের উপর নজরদারি করাটা জরুরি। যাতে শুরুতেই অসুখ ধরা সম্ভব। কারণ এই পরীক্ষাগুলির মাধ্যমে ডাক্তার আপনার স্বাস্থ্য এবং যে কোনও জেনেটিক রোগ অনেকাংশে জানতে পারবেন। এই চেকআপগুলির মাধ্যমে সম্ভাব্য স্বাস্থ্য সমস্যা সম্পর্কেও দ্রুত জানতে পারবেন।
ব্লাড প্রেসারের পরীক্ষা- উচ্চ রক্তচাপ এমন একটি রোগ, যা নীরবেই আপনার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি করে মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। এর কারণে আপনি হৃদরোগ, কিডনি এবং অন্যান্য গুরুতর রোগের শিকার হতে পারেন। রক্তচাপ নিয়মিত পরীক্ষা করলে রক্তচাপের মাত্রা সম্পর্কে জানতে পারবেন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, রক্তচাপ ১২০/৮০ mmHg-এর কম হওয়া উচিত। যদি আপনার রক্তচাপ ক্রমাগত বাড়তে থাকে, তাহলে আপনার উচিত জীবনযাত্রার পরিবর্তনগুলি যেমন স্বাস্থ্যকর খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম এবং মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করা।
কোলেস্টেরলের মাত্রা- কোলেস্টেরল হল একটি চর্বিযুক্ত পদার্থ যা আপনার লিভার তৈরি করে। নির্দিষ্ট কিছু খাবার থেকে পাওয়া যায়। বিভিন্ন শারীরিক ক্রিয়াকলাপের জন্য অপরিহার্য কোলেস্টেরল। এলডিএল কোলেস্টেরলকে খারাপ কোলেস্টেরল বলা হয়। শরীরে এর মাত্রা বেশি হলে ধমনীতে প্লাক জমতে পারে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। অন্যদিকে এইচডিএল কোলেস্টেরল, যাকে বলা হয় ভালো কোলেস্টেরল। এটি রক্ত সঞ্চালন থেকে LDL কোলেস্টেরল অপসারণ করতে সাহায্য করে। কোলেস্টেরল, এলডিএল কোলেস্টেরল, এইচডিএল কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা জানার জন্য লিপিড প্রোফাইল টেস্ট করান। এর পাশাপাশি শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমাতে স্বাস্থ্যকর খাবারের পাশাপাশি শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে।
রক্তে সুগারের পরীক্ষা- ডায়াবেটিস একটি দুরারোগ্য রোগ যা বুঝিয়ে দেয় আপনার রক্তে শর্করার (গ্লুকোজ) মাত্রা বেড়েছে । হৃদরোগ, কিডনি, স্নায়ু এবং চোখের অসুখ-সহ বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। রক্তের গ্লুকোজের নিয়মিত পরীক্ষা ডায়াবেটিস বা প্রিডায়াবেটিস নির্ণয় করতে সাহায্য করতে পারে। আপনার ওজন দ্রুত বাড়তে থাকলে বা পরিবারের কোনও সদস্যের ডায়াবেটিসের ইতিহাস থাকলে, অতিরিক্ত তৃষ্ণা, ঘন ঘন প্রস্রাব ইত্যাদির মতো লক্ষণগুলি দেখতে পেলে অবিলম্বে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত। এর পাশাপাশি ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সারা জীবন খাবারের প্রতি বিশেষ যত্ন নিন এবং ব্যায়াম, যোগাসনের করতে পারেন।
প্রোস্টেট ক্যান্সার স্ক্রিনিং- প্রোস্টেট ক্যান্সার পুরুষদের মধ্যে সাধারণ অসুখে পরিণত হয়েছে। প্রোস্টেট ক্যান্সার স্ক্রিনিং করানো দরকার। সাধারণত স্ক্রিনিংয়ে প্রোস্টেট-নির্দিষ্ট অ্যান্টিজেন (PSA) রক্ত পরীক্ষা বা একটি ডিজিটাল রেকটাল পরীক্ষা (DRI) অন্তর্ভুক্ত থাকে। PSA হল প্রোস্টেট গ্রন্থি দ্বারা উত্পাদিত একটি প্রোটিন এবং উচ্চ মাত্রা প্রোস্টেট ক্যান্সার বা অন্যান্য প্রোস্টেট রোগের লক্ষণ হতে পারে। ডিআরই-এর সাহায্যে ডাক্তার কোনও অস্বাভাবিকতা শনাক্ত করতে প্রোস্টেট গ্রন্থির শারীরিক পরীক্ষা করতে পারেন। স্ক্রিনিং প্রাথমিক পর্যায়ে প্রোস্টেট ক্যান্সার সনাক্ত করতে সাহায্য করতে পারে।
আর কী কী পরীক্ষা করাবেন-
ব্লাড ইউরিয়া নাইট্রোজেন- রক্তে নাইট্রোজেনের পরিমাণ দেখায় এই টেস্ট। যা কিডনি ঠিক আছে কিনা জানিয়ে দেয়।
ক্রিটিনিন- কিডনি ঠিক আছে কিনা তা বোঝায়। রক্তে থাকা দূষিত পদার্থ ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা জানায়।
ইউরিক অ্যাসিড- ৪০-র পর বাড়ে ইউরিক অ্যাসিড। গাঁটে গাঁটে ব্যথা হয়। কিডনির স্বাস্থ্যেও প্রভাব ফেলে। তাই পরীক্ষা করে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ জেনে নেওয়া দরকার।
HbA1c-শেষ দুই থেকে তিন মাসে গড় রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা মূল্যায়ন করে। ডায়াবেটিস আগাম বলে দেয়।