সমস্ত ধর্মের মধ্যেই মৃত্যুর বেদনা সম্পর্কে কম-বেশি আলোচনা করা হয়েছে। কিছু ধর্মতে বলা হয়েছে যে মৃত্যুর সময় এতটা যন্ত্রণা হয়, যাতে জীবিত ব্যক্তি চামড়া তুলে নেওয়ার মতো যন্ত্রণা হয়। মৃত্যুর সময়ে এই সমস্যা বিশেষ করে পাপী লোকেদের সঙ্গে হয়। এটা কম করার উপায় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মৃত্যুর বেদনা সম্পর্কে ভয় দেখানোর উদ্দেশ্য হলো সম্ভবত যে লোকেরা মৃত্যুযন্ত্রণার ভয়ে ভালো কাজ এবং ন্যায়নিষ্ঠ পথে চলতে পারেন। ভালো কাজের ভালো ফল।
ভাল কাজের ফল
বলা হয় মরার পরে তারা স্বর্গবাস করবেন, বেহেশতে যাবেন, জান্নাতে যাবেন। তখন কোনওভাবে কোনও রকম অসুবিধা হবে না। শুধু আনন্দতে থাকতে পারবেন। এই আশায় অনেকে প্রভাবিত হয়ে ভালো কাজ করতে থাকেন।
পাপের ফল
উল্টোদিকে যারা পাপ করবেন তাদের নরক বা জাহান্নাম জুটবে। তাতে যন্ত্রনা এবং ব্যথার পাহাড় ভেঙে পড়বে। কি ধরণের যন্ত্রণা তা নিয়েও বিভিন্ন ধর্মে আলাদা আলাদা করে তার বীভৎসতা ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
মরার সময় কেমন অনুভূতি?
এখন প্রশ্ন উঠছে যে যদি মরার পরে কোনও ব্যক্তি যখন বেঁচে ওঠে না, তাহলে এটি কে বলবে যে মরার সময় তার কতটা ব্যথা বা যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে। পুনর্জন্ম নেওয়া কোনও ব্যক্তিও নেই যারা মরার সময় নিজের যন্ত্রণা ও ব্যথা অনুভব এর বিষয়ে বলতে পারেন। তাহলে আমরা মৃত্যুর সময়ের যন্ত্রনার ধারণা আমাদের মধ্যে কি করে চলে এল। হয়তো ছোটবেলায় গালগল্প শুনে আমরা এই ধারনা আমাদের মধ্যে ঢুকে গিয়েছে।
দার্শনিকরা কী বলছেন?
দার্শনিকরা বলেন মৃত্যু সবচেয়ে বড় বরদান। এই কারণে এটি অন্তিম সময়ের জন্য বাঁচিয়ে রাখা হয়। শত শত বছর আগে একজন বলেন, আমার মৃত্যু থেকে ভয় লাগে না। কারণ আমি যতক্ষণ বেঁচে থাকব ততক্ষণ মৃত্যু নেই। আর যখন মৃত্যু হয়ে গেছে, তখন আমার অস্তিত্বই নেই। এতো গেল জীবন দর্শনের কথা।
চিকিৎসকেরা কি বলছেন মৃত্যুযন্ত্রণা নিয়ে?
মৃত্যুর সময় কোনও ব্যথা হয় না। কিন্তু অপ্রাকৃতিক মৃত্যুর বিষয়ে এটা বলা যায় না। দুর্ঘটনা শিকার হওয়া কোনও ব্যক্তি যখন মারা যান তখন তিনি শারীরিক যন্ত্রণা ভোগ করেন এটা মেনে নিতেই হবে। তবে মৃত্যুর জন্য আলাদা করে কোনও যন্ত্রণা অনুভব হয় কিনা সেটি পরিষ্কার নয়। বলা হয় যে মৃত্যুর শেষ মুহূর্তে সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমের উপর কোনও ব্যথা যাতে অনুভব না হয় সেজন্য বিষাক্ত পদার্থ জমা হয়ে যায়। ব্যথার অভাবে মানুষ ভালো অনুভব করতে থাকে। একটা তন্দ্রা একটা অজ্ঞান, অচেতন, আধা সচেতন অবস্থার মধ্যে চলে যায় এবং শেষমেষ তিনি জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। সাধারণভাবে মৃত্যু থেকে কারও ভয় হয় না বরং মৃত্যুর পরে অনিশ্চয়তার থেকে ভয় আসে।
কখন মৃত্যু কেউ জানে না
আমরা দেখেছি কয়েকদিন আগে গায়ক কৃষ্ণকুমার কুন্নথ মঞ্চে গাইতে গাইতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। হোটেলে ফিরতেই মৃত্যু হয়ে যায়। তো সততই কখন কার কীভাবে মৃত্যু আসবে, তা বলা মুশকিল। দুঃখ জীবনের অংশ। ভেঙে যাওয়া হাড় অথবা টুকরো হওয়া হৃদয় নিয়ে মানুষ বেঁচে থাকে। এটি এতটাই আশ্চর্য যে কালকে মৃত্যু আসলে যেন মনে হয় যে আপনি যে জীবন বেঁচে নিয়েছেন। কাউকে ভালোবেসেছেন, কারও কাছ থেকে ভালোবাসা পেয়েছেন। আমরা গোটা পৃথিবীর জীবৎকাল ২৪ ঘন্টা ধরি, তাহলে এক ব্যক্তি হয়তো মিনিটখানেক বেঁচে নিয়েছেন বলে মনে করা যেতে পারে। বৈজ্ঞানিকরা মৃত্যুকে হারিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।