ভারতে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণে প্লাস্টিক ব্যবহার হয়। প্লাস্টিকের জনপ্রিয়তার পেছনে অন্যতম কারণ হল এর সস্তা দাম, দীর্ঘস্থায়ীতা এবং সহজলভ্যতা। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা জানাচ্ছে, এই সুবিধার আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে এক গভীর স্বাস্থ্যঝুঁকি। বিশেষ করে পুরুষের উর্বরতা এবং হরমোন ভারসাম্যের উপর।
মাইক্রোপ্লাস্টিক: অদৃশ্য অথচ ক্ষতিকর
প্লাস্টিক ব্যবহারের ফলে শরীরে প্রবেশ করছে মাইক্রোপ্লাস্টিক, যা ৫ মিমি বা তার চেয়েও ছোট ক্ষুদ্র কণা। এগুলি এতটাই ক্ষুদ্র যে সহজেই মানুষের রক্ত, ফুসফুস, হৃদপিণ্ড, প্লাসেন্টা, এমনকি শুক্রাণুতেও প্রবেশ করছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।
বেশিরভাগ মাইক্রোপ্লাস্টিকে থাকে EDC (Endocrine Disrupting Chemicals), যা শরীরের প্রাকৃতিক হরমোন যেমন ইস্ট্রোজেন, টেস্টোস্টেরন, থাইরয়েড এবং কর্টিসলের কার্যকারিতা ব্যাহত করে। ফলে দেখা দিচ্ছে একাধিক শারীরিক সমস্যা—যার মধ্যে সবচেয়ে উদ্বেগজনক হলো উর্বরতা হ্রাস এবং ক্যান্সারের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি।
প্লাস্টিকের রাসায়নিক উপাদান ও তাদের প্রভাব
BPA ও BPS: ব্যবহৃত হয় জলের বোতল, খাবারের পাত্র এবং থার্মাল পেপারে।
Phthalates: প্লাস্টিক নরম করতে ব্যবহৃত হয়; পাওয়া যায় প্রসাধনী, খেলনা ও মেডিক্যাল টিউবে।
PFAS: ব্যবহৃত হয় ফুড প্যাকেজিং ও নন-স্টিক কুকওয়্যারে।
গবেষণার ভয়াবহ চিত্র
চিন ও ভারতে যৌথভাবে পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, বীর্যে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি স্পষ্টভাবে শুক্রাণুর সংখ্যা, ঘনত্ব এবং গতিশীলতা কমিয়ে দেয়। BPA ও phthalates-এর সংস্পর্শে শরীরে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা হ্রাস পায় এবং LH হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। যা এন্ডোক্রাইন ডিসঅর্ডার এবং বন্ধ্যাত্বের সম্ভাবনা বাড়ায়।
২০২৩ সালে Food and Chemical Toxicology জার্নালে প্রকাশিত একটি প্রাণী-ভিত্তিক গবেষণায় দেখা গেছে, এমনকি স্বল্পমাত্রার (২০ μg/লিটার) পলিস্টাইরিন মাইক্রোপ্লাস্টিকও শুক্রাণু উৎপাদন ও হরমোন ব্যালান্স ব্যাহত করে। শুধু পুরুষই নয়, নারীদের ক্ষেত্রেও ডিম্বাশয়ে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ও কোষের ক্ষতির ঝুঁকি বেড়ে যায়।