Sleeping on dead skin or pillow: আরামদায়ক ঘুমের জন্য নরম বালিশ যতটা প্রয়োজনীয়, সময়মতো বালিশ ও বালিশের কভার পরিবর্তন না করলে তা হয়ে উঠতে পারে নানা রোগের উৎস। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নোংরা বালিশে জমা মৃত ত্বকের কোষ, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ছত্রাক থেকে শুরু করে চর্মরোগ, শ্বাসকষ্ট এমনকি বিষণ্ণতাও হতে পারে।
ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশনের তথ্যানুযায়ী, আমরা জীবনের এক-তৃতীয়াংশ সময় বিছানায় কাটাই। এই সময়ের মধ্যে শরীর থেকে প্রতিদিন কোটি কোটি মৃত ত্বকের কোষ ঝরে পড়ে, যার অধিকাংশ জমে থাকে বিছানার চাদর ও বালিশে। ২০১৩ সালে আমেরিসলিপের এক পরীক্ষায় দেখা যায়, মাত্র এক সপ্তাহ ধোয়া হয়নি এমন একটি বালিশের কভারে প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে প্রায় ৩০ লক্ষ ব্যাকটেরিয়া ছিল, যা একটি গড় টয়লেট সিটের তুলনায় প্রায় ১৭,০০০ গুণ বেশি।
চিকিৎসকদের মতে মূল ঝুঁকিগুলি
১. ত্বকের সমস্যা ও ব্রণ
ব্যাঙ্গালোরের ফোর্টিস হাসপাতালের কনসালট্যান্ট ডার্মাটোলজিস্ট ডাঃ রশ্মি শ্রীরাম জানান, নোংরা বালিশের কভার তেল, ঘাম ও মৃত ত্বকের কোষ জমিয়ে ব্যাকটেরিয়ার জন্ম দেয়, যা ছিদ্র বন্ধ করে ব্রণ ও ফুসকুড়ি তৈরি করে।
২. ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের বৃদ্ধি
মাত্র ৭–১০ দিনের মধ্যেই বালিশে ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে শুরু করে। বিশেষ করে যারা ঘুমের সময় বেশি ঘামেন বা লালা ঝরান, তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি।
৩. শ্বাসকষ্ট ও অ্যালার্জি
ডাস্ট মাইট ও ব্যাকটেরিয়া হাঁপানি, সাইনোসাইটিস ও অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের মতো সমস্যা বাড়াতে পারে। হাঁচি, নাক বন্ধ, কাশি ও শ্বাসকষ্ট এর প্রধান লক্ষণ।
৪. মানসিক ও শারীরিক প্রভাব
অস্বস্তিকর বা নোংরা বালিশ ঘুমের মান কমিয়ে মাইগ্রেন, ক্লান্তি ও দীর্ঘমেয়াদে বিষণ্ণতা তৈরি করতে পারে।
৫. চুল পড়া ও সংক্রমণ
জয়পুরের ডাঃ রোহিত শর্মা ও দিল্লির ডাঃ গৌরাঙ্গ কৃষ্ণ উভয়েই জানিয়েছেন, নোংরা বালিশে জমা ধুলো, তেল ও আর্দ্রতা চুলের ফলিকল দুর্বল করে দেয়। ছত্রাক সংক্রমণে খুশকি বেড়ে চুল পড়তে পারে, ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে চুলের গোড়ায় স্থায়ী ক্ষতিও হতে পারে।
পরিষ্কার রাখার পরামর্শ
বালিশের কভার প্রতি ৩–৪ দিন অন্তর ধোয়া উচিত।
ধোয়া যায় এমন বালিশ ৩–৬ মাস অন্তর ধুতে হবে অথবা অন্তত প্রতি বছর একবার পরিবর্তন করতে হবে।
গরম জলে বিছানার চাদর ধোয়া ও সুরক্ষামূলক কভার ব্যবহার ধুলোর মাইটের সংস্পর্শ কমাতে সাহায্য করবে।
চিকিৎসকরা সতর্ক করেছেন— এক মাস বালিশের কভার না বদলালে আপনি মূলত মৃত ত্বকের স্তূপে মুখ গুঁজে ঘুমাচ্ছেন। তাই সময়মতো বালিশ ও কভার পরিবর্তন শুধু আরামের জন্য নয়, সুস্থতার জন্যও অত্যন্ত জরুরি।