বেশিরভাগ করোনা আক্রান্ত বাড়িতেই আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা করাচ্ছেন। গুরুতর সমস্যা হলে হাসপাতালের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। তবে করোনা আক্রান্তদের ডায়েটের ক্ষেত্রে সব সময় বিশেষ ভাবে সতর্ক থাকতে হবে। করোনা ভাইরাস শরীরের নানা অঙ্গে নানা ইমব্যালান্স তৈরি করছে। তারতম্য ঘটছে পটাসিয়ামের মাত্রাতেও। তাই ডায়েটের দিকে খেয়াল রাখা অত্যন্ত আবশ্যিক। ছোটখাটো ভুলের জন্য বড় সমস্যা তৈরি হতে পারে। জেনে নিন, এ সময়ে কী খাবেন বা খাবেন না। পরামর্শ দিচ্ছেন ক্লিনিকাল ডায়েটিশিয়ান রাখি চট্টোপাধ্যায়।
প্রশ্ন: যে রোগীরা হোম আইসোলেশনে রয়েছেন তাঁদের কী ধরনের ডায়েট প্ল্যান মেনে চলা উচিত?
উত্তর: অনেকেরই ধারণা হচ্ছে, প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে। তা কিন্তু নয়। অনেকেই বেশি করে খেতে গিয়ে বিপদ ডাকছেন। প্রায় সমস্ত করোনা রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে তাঁদের পটাসিয়াম লেভেলে তারতম্য ঘটছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত থাকছে। এ সময় যদি কেউ বেশি করে ফল খেয়ে ফেলেন তবে অজান্তেই বিপদ ডাকবেন। সবুজ শাকসব্জি, ফলে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম থাকে। ফলে বুঝে খেতে হবে।
প্রশ্ন: বলা হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে হবে। কী ধরনের প্রোটিন ডায়েট করলে রোগী সুস্থ থাকবেন?
উত্তর: এ ক্ষেত্রেও বেশিরভাগ মানুষের ধারণা যে প্রোটিন মানেই প্রাণীজ প্রোটিন। অর্থাৎ মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদি। এর সঙ্গে দুধ, ছানা, পনির, সয়াবিন, নানা ধরনের ডালও যে ভালো প্রোটিনের উৎস হতে পারে সেটা খেয়াল রাখতে হবে। ব্যালান্স ডায়েট রাখতে হবে। প্রতি দিন প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। দিনে যত বার খাবেন, সব সময় খানিকটা প্রোটিন যুক্ত খাবার যেন ডায়েটে মজুত থাকে। অনেকের দুধ খেতে সমস্যা হয়, তাঁরা ছানা বা পনির খেতে পারেন।
প্রশ্ন: দিনে ক'বার খাওয়া উচিত?
উত্তর: দিনে অন্তত ৪ বার খেতে হবে। প্রত্যেক বার খাবারের মাঝে অন্তত আড়াই ঘণ্টার গ্যাপ রাখতে হবে।
প্রশ্ন: অনেক রোগী জানিয়েছেন তাঁদের পেট খারাপের সমস্যা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে কী করা যেতে পারে?
উত্তর: ওভার নিউট্রিশনও কিন্তু খারাপ। কেউ মনে করলেন আমার ২ দিন ডিম খাওযা হয়নি, ফলে এক সঙ্গে ২-৩টে ডিম খেয়ে ফেললাম, সেটা কিন্তু করবেন না। ডায়েটে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রাখতে হবে। অনেকেরই এ সময় স্ট্রেস লেভেল বেড়ে যায়। দুশ্চিন্তার ফলে ব্লাড সুগার লেভেলও সমস্যা তৈরি করতে পারে। এটা যদিও সকলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। শুধুমাত্র করোনা রোগী নন, সকলেই এটা মাথায় রাখবেন, স্টেস বাড়লে কিন্তু চিনি খাওয়া বন্ধ করুন বা একেবারে কমিয়ে দিন। রোজকার খাবারে প্রয়োজনীয় গ্লুকোজ পেয়ে যায় আমাদের শরীর।
প্রশ্ন: কোন কোন খাবার ডায়েটে রাখতেই হবে?
উত্তর: প্রতি দিন টক দই এবং হেলদি নাটস যেমন আমন্ড, ওয়ালনাট, কাজু ইত্যাদি রাখুন। যাদের ডায়াবিটিসের সমস্যা নেই তাঁরা খেজুর রাখতে পারেন। যে সমস্ত উপকারি সিডস আছে, যেমন ফ্ল্যাক্স সিড, চিয়া সিড ইত্যাদি রাখতে পারেন। এতে প্রচুর প্রোটিন আছে। তার সঙ্গে প্রয়োজনীয় ফাইবারের জোগান দেবে। হার্বাল চা খান। রিসার্চে দেখা গিয়েছে, হার্বাল চা ফুসফুসকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে। তবে গুজবে কান দিয়ে যা খুশি না খাওয়াই ভালো। এর সঙ্গে যে কোনও অঙ্কুরিত ছোলা বা ডাল খেতে পারেন। ভিটামিন, প্রোটিন, ফাইবারে ভরপুর। এটা শরীর পক্ষে ভীষণ ভালো। তবে হেল্থ সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার আগে অবশ্যই ডায়েটিশিয়ানের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন।
প্রশ্ন: কী কী দিয়ে হার্বাল চা বানানো যেতে পারে?
উত্তর: রান্না ঘরেই সব মজুত থাকে। যেমন দারচিনি, লবঙ্গ, গোলমরিচ ইত্যাদি। তার সঙ্গে তুলসি পাতা, মধু, আদা ইত্যাদি যোগ করতে পারেন। চা পাতা ছাড়াও এগুলো শুধু ফুটিয়ে এমনি খেতে পারেন দিনে দুবার। উপকার পাবেন। এ ছাড়া রোগীদের স্টেরয়েড জাতীয় ড্রাগ দেওয়া হচ্ছে তাই প্রচুর ডিহাইড্রেশনও হচ্ছে। ফলে দিনে অন্তত সাড়ে তিন থেকে চার লিটার জল খেতে হবে। জলের মধ্যে পুদিনা পাতা, শসা কুঁচি দেওয়া যেতে পারে। এটা রিফ্রেশিং হবে। এর সঙ্গে একটু প্রাণায়াম এবং মেডিটেশন করুন। এটা শরীরের সঙ্গে সঙ্গে মনকেও ভালো রাখবে।