পিঠের ব্যথা বা Back pain এখন আম আদমির সমস্যা। অনিয়মিত লাইফস্টাইল, কম্পিউটার ল্যাপটপ এর সামনে বসে কাজ করা, work-from-home এর চাপ কিংবা সময়ের চাপে এক্সেরসাইজ করতে না পারা। সেইসঙ্গে কম ঘুম, দেরি করে রাতে ঘুমোতে যাওয়া, বিভিন্ন কারণে স্পন্ডেলাইটিস জাতীয় রোগ বাড়ছে। সেই সঙ্গে চাগাড় দিয়ে উঠছে পিঠের ব্যথা। ভারতে পিঠের নীচের দিকে যাদের ব্যথা হয়, এটি কিন্তু উদ্বেগজনক।
কারণ ভারতে প্রায় ৬০ শতাংশ লোক নিজের জীবনে কখনও কখনও পিঠের নীচের দিকে ব্যথা অনুভব করেছেনই। এটা হতে পারে যে ঘরের সাফাই করতে গিয়ে বা অন্য কোনও ফিজিক্যাল অ্যাকটিভিটি করার সময় পিঠে ঝটকা লেগে গিয়েছে। স্পন্ডেলাইটিস জাতীয় কোনও রোগ ধরে গিয়েছে। কখনও কখনও এ ব্যথা অসহ্য হয়ে ওঠে। লম্বা সময় থেকে যদি এ ব্যথা হতে থাকে তাহলে কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শ অবিলম্বে নেওয়া দরকার না হলে এটি ভবিষ্যতে প্রাণঘাতী পর্যন্ত হতে পারে। কিন্তু সচেতন থাকলে এটি অনেক সময় গোড়াতেই বাড়িতে সামলে নেওয়া সম্ভব।
ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের নিউরোলজিক্যাল সার্জারি ডিপার্টমেন্ট এর পাঁজরের সার্জারি ডিপার্টমেন্টের হেড উইলসন রে জানিয়েছেন ঘরোয়া উপায়ে পিঠের ব্যথার প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা সম্ভব এবং গুরুতর হওয়ার আগেই সেটিকে সামলে নেওয়া সম্ভব। তাতে আপনি ভবিষ্যতে লম্বা সময়ের ক্রনিক ডিজিজ এর মুখোমুখি হওয়ার আগেই নিজেকে শুধরে নিতে পারবেন এবং নিজের শরীর সামলে নিতে পারবেন। কীভাবে এটা করবেন, আসুন জানিয়ে দিই।
১. চলতে থাকুন
উইলসনের বক্তব্য আলাদা আলাদা সময় পিঠে ব্যথার রোগীরা সাধারণ ভুল ধারণাতে থাকেন যে তিনি অ্যাক্টিভ ভাবে চলতে পারবেন না। কিন্তু যদি আপনি আপনার অ্যাক্টিভিটি চালু রাখেন, তাহলে পিঠের ব্যথা কিন্তু কম থাকবে। পিঠে ব্যথা হচ্ছে বলে সেই অংশটি কম নাড়িয়ে তাঁকে অকেজো করে দেবেন না। রোজ কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটা চলা করুন এবং ব্যথার অংশটিকে মুভ করার চেষ্টা করুন।
২. স্ট্রেচিং এবং হেলথ এক্সেরসাইজ
পেটের কোর পেশি পিঠের পেশির সাহায্যে চলে। শক্তি এবং এলাস্টিসিটি দুটোই আপনার পেটের ব্যাথা দূর করতে এবং তা আটকাতে সাহায্য করে। এ কারণে স্ট্রেচিং এবং পিঠের এক্সারসাইজগুলি নিয়মিত করতে থাকুন। ভবিষ্যতে বড় ধরনের কিছু হওয়ার আগে থেকেই স্ট্রেচিংগুলো করুন। পিলেটস এবং তাই চি আপনাকে এবং হিপস এর আশপাশে মাংসপেশির মজবুত করতে সাহায্য করে।
৩. সঠিক ভঙ্গিতে বসা, শোয়া-দাঁড়ানো অভ্যাস রাখুন
সঠিক ভঙ্গিতে আপনি পিঠের নীচের অংশের ব্যবহার করুন। বসার সময় সোজা হয়ে বসুন। শোওয়ার সময় ঠিকমতো বাঁ কাত হয়ে শোন এবং হাঁটার সময় মেরুদণ্ড সোজা রেখে হাঁটার চেষ্টা করুন। দৌড়নোর সময় অনেকের ঝুঁকে যাওয়ার প্রবণতা আছে। সেটি মাথায় রেখে সঠিক পদ্ধতিতে কোনও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে হাঁটাচলা, দৌড়, বসা অনুশীলন চালু রাখুন।
৪. ওজন এর ভারসাম্য রাখুন
যদি কারও ওজন হঠাৎ বেড়ে যায় এবং আচমকা ওজন বাড়তে থাকে, তাহলে কিন্তু দ্রুত এক্সারসাইজ করে এবং খাদ্যাভ্যাসে বদলে নেতাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন। কারণ ওজন অপ্রয়োজনীয় জায়গায় বেড়ে গেলে তাতে হাঁটু, কোমর পিঠের মাংসপেশিতে অত্যধিক প্রভাব ফেলে এবং শরীরের মাংসগুলোকে অকেজো করে তুলতে পারে।
৫. ধূমপান ছাড়ুন
রিসার্চে জানা গিয়েছে যদি আপনি ধূমপান করেন, তাহলে সেটি অবিলম্বে ছাড়ার সময় এসে গিয়েছে। চল্লিশের পর থেকে ধূমপান না করাই ভালো। নিতান্তই ছাড়তে না পারলে একেবারে ন্যূনতমতে নিয়ে আসুন। তাতে আপনার শরীরের রক্ত সঞ্চালন ও অন্যান্য ভালো উৎসেচক গুলি ঠিকঠাক কাজ করবে। তামাক শরীরের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতি করে। তাই সুস্থ শরীরে বাঁচতে হলে তামাকের বর্জন এর কোনও বিকল্প নেই।
৬. আইস প্যাক ব্যবহার করুন
পিঠের ব্যথা হলে আপনি সবার প্রথমে বড় দিয়ে পিঠের ব্যথা ডেকে উপোস করার চেষ্টা করুন। বরফের ঠান্ডা ভাব, ব্যথা উপশম করে। আইস ব্যাগে ভরে রাখতে পারেন। তবে ব্যথা যদি না কমে তাহলে চিকিৎসকের কাছে অবিলম্বে যেতে হবে ভবিষ্যতের বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে।