কথায় বলে মাছে ভাতে বাঙালি। মাছ ছাড়া বাঙালিদের খাওয়া সম্পূর্ণ হয় না। ইলিশ, ভেটকি, রুই, কাতলা, চিংড়ি সব মাছই খেতে ভালবাসেন বাঙালিরা। সেরকমই সস্তা অথচ সুস্বাদু মাছ হল তেলাপিয়া। অনেকে পছন্দ না করলেও হালে বাঙালির পাতে এই মাছ বহাল তবিয়তে জায়গা করে নিয়েছে নিজের। কিন্তু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে এই মাছ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এই মাছকে গারবেজ ফিশ বা আস্তাকুঁড়ের মাছ কেন বলা হয় জানেন?
পুষ্টি থাকলেও তা ক্ষতিকর
পুষ্টিবিদদের মতে, এ মাছের পুষ্টিগুণ অসাধারণ! শুধু ভারতেই নয়, বিশ্বের ১৩৫টিরও বেশি দেশে তেলাপিয়া মাছের চাষ হয়। তেলাপিয়ায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি-১২, ফসফরাসের মতো একধিক অপরিহার্য উপাদান।
ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে
তবে সম্প্রতি একাধিক গবেষণায় তেলাপিয়া মাছের বেশ কয়েকটি ক্ষতিকর দিক সামনে এসেছে। বিজ্ঞানীদের দাবি, এর থেকে হাড়ের ক্ষয়, হাঁপানি এমনকি ক্যান্সারের মতো মারণ রোগও শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের (USDA) গবেষকদের দাবি, তেলাপিয়া মাছ খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি প্রায় ১০ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এশিয়া (আমেরিকায় আমদানি হওয়া তেলাপিয়া মাছের ৭০ শতাংশই আসে চিন থেকে) আমদানি করা তেলাপিয়া মাছের শরীরে মিলেছে মারাত্মক বিষ। গবেষকদের দাবি, মাছ চাষের সময় হাঁস, শুয়োর বা মুরগির দেহাবশেষ খেয়ে এই মাছগুলি দ্রুত বেড়ে ওঠে আর একই সঙ্গে হয়ে ওঠে বিষাক্ত।
কেন একে আর্বজনার মাছ বলা হয়
একে আবর্জনা মাছ বলার মূল কারণ হচ্ছে এটি সব খায় এবং যে কোনও পরিবেশে এই মাছের চাষ করা সম্ভব হয়। সঠিকভাবে চাষ করা তেলাপিয়াকে পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর করার জন্য সয়াবিন এবং ভুট্টা জাতীয় খাবার খাওয়ানো হয়। তবে সঠিক এবং স্বাস্থ্যকর চাষের অনুপস্থিতিতে, এই মাছ শ্যাওলা, পোকামাকড় এবং এমনকী হাঁস বা মুরগির মলও খেয়ে থাকে। ঠিক এই কারণেই বেশিরভাগ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে এই মাছটি খাওয়ার জন্য নিরাপদ নয়। যখন বন্য এবং অস্বাস্থ্যকর পুকুর বা খামার থেকে এই মাছ আহরণ করা হয় তা মোটেই স্বাস্থ্যের জন্য ভাল নয়।
কীভাবে খাওয়া উচিত এই মাছ
এই মাছ খাওয়ার আগে প্রথমে নিজের স্বাস্থ্যের কথা ভাবতে হবে। এমনভাবে এই মাছ খেতে হবে যাতে এই মাছ খাওয়ার পর কোনও শারীরিক সমস্যা না হয়। তাই বিশ্বস্ত এবং চেনা জায়গা ছাড়া এই মাছ কেনা উচিত নয়। মাছ কেনার পরে গরম জল দিয়ে এই মাছ ভাল করে ধুয়ে নিতে হবে। তারপর নুন ও হলুদ দিয়ে ম্যারিনেট করতে হবে। নুন ও হলুদ দিয়ে ম্যারিনেট করলে মাছে রোগ-জীবাণু থাকলে সেটা দূর হবে। হলুদে অ্যান্টিসেপটিক গুণ আছে, তাই হলুদ দিতেই হবে। এই মাছ ভাজা, প্যান ফ্রায়েড বা বেক করা যেতে পারে। তবে স্বাস্থ্য ও খাদ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে খাওয়ার আগে এই মাছ ভাল করে রান্না করে নিতে হবে। যে মাছ অস্বাস্থ্যকর জায়গায় থেকে এসেছে তার পেটে অনেক ময়লা ও জীবাণু থাকতে পারে। এই জীবাণুগুলো অনেক সময় যায় না। সেটা খাবার পরে পেটের সমস্যা হতে পারে। এই বিষয়ে সচেতন থাকলে তেলাপিয়া নিয়ে কোনও শারীরিক অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।