পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (PCOS) নারীদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ হরমোনজনিত অবস্থার মধ্যে একটি। এটি শরীরে অ্যান্ড্রোজেনের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে, যা একটি পুরুষ যৌন হরমোন, যার ফলে নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। এর অন্যতম লক্ষণ হলো ডিম্বাশয়ে ছোট ছোট সিস্ট তৈরি হওয়া। WHO-এর তথ্য অনুসারে, এই অবস্থাটি পিরিয়ড হয় এমন আনুমানিক ৮-১৩% নারীকে প্রভাবিত করে। যদিও PCOS-এর কোনো স্থায়ী প্রতিকার নেই, তবে খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রায় নির্দিষ্ট পরিবর্তন করে এটি পরিচালনা করা যেতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু ভেষজ ও মশলা সম্পর্কে যেগুলো প্রাকৃতিকভাবে PCOS কমাতে সাহায্য করে।
দারুচিনি
দারুচিনি PCOS নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি দুর্দান্ত মশলা। এতে সিনামালডিহাইড নামক একটি রাসায়নিক রয়েছে, যা নারীদের মধ্যে প্রোজেস্টেরন বাড়ায় এবং টেস্টোস্টেরন হ্রাস করে বলে প্রমাণিত হয়েছে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ (NIH) উল্লেখ করে যে, খাদ্যতালিকায় দারুচিনি যোগ করলে তা ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং মাসিক চক্র বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। দারুচিনি চা পান করে এই মশলার উপকারিতা উপভোগ করতে পারেন।
হলুদ
হলুদ বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতার সঙ্গে সম্পর্কিত, যার মধ্যে রয়েছে PCOS এর সমস্যা মোকাবিলা করা। এতে কারকিউমিন নামক একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উপস্থিতি ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং উচ্চ রক্তে শর্করার মাত্রা মোকাবিলায় সহায়তা করে। হলুদ মাসিক নিয়ন্ত্রণ এবং সামগ্রিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে।
তুলসী
তুলসীতে অ্যান্টি-অ্যান্ড্রোজেনিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা নারীদের মথ্যে পুরুষ যৌন হরমোন টেস্টোস্টেরন কমাতে এবং অতিরিক্ত চুল বৃদ্ধি এবং ব্রণের মতো লক্ষণ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। অ্যাডাপটোজেন হিসাবে, এটি কর্টিসলের মাত্রা কমাতেও সহায়তা করে, যার ফলে ইনসুলিনের মাত্রা বজায় থাকে। PCOS নিয়ন্ত্রণ করতে স্যালাদ বা চায়ে তুলসী যোগ করুন।
অশ্বগন্ধা
অশ্বগন্ধা বহু শতাব্দী ধরে একটি ঔষধি ভেষজ হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি PCOS-সম্পর্কিত সমস্যা নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করে। অ্যাডাপ্টোজেন হিসেবে এটি কর্টিসলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে, যার ফলে মানসিক চাপজনিত ওজন বৃদ্ধি হ্রাস পায়। এছাড়াও এটি মেজাজের পরিবর্তন, উদ্বেগ, ক্লান্তি এবং বিষণ্ণতার মতো লক্ষণ উপশম করতে সাহায্য করতে পারে।
মেথি
মেথি PCOS নিয়ন্ত্রণের জন্য বেশ উপকারী। বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে মেথি খেলে তা ইনসুলিনের মাত্রা এবং গ্লুকোজ ইনটলারেন্স নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। এর ফলে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। উপকারিতা পেতে কিছু মেথি সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন, পরের দিন সকালে সেদ্ধ করে ছেঁকে নিন এবং পান করুন।