যদি আপনিও প্রায় প্রতিদিনই পায়ের ব্যথায় ব্যতিব্যস্ত থাকেন এবং বহু চেষ্টার পরেও সে ব্যথা কমাতে পারেননি, তাহলে সবার আগে আপনাকে এর পেছনের কারণ জানতে হবে। পায়ের ব্যথা যে কোনও সময় যে কোনও কারও হতে পারে। ক্লান্তি, দুর্বলতা, খুব বেশি শারীরিক পরিশ্রম বা কোনও রোগের কারণে পা ব্যথা হতে পারে। কিন্তু অনেকের এই সমস্যা প্রায়ই ভোগাতে থাকে। আবার অনেকে এমন রয়েছেন, যাঁদের সব সময় রাতে পায়ের ব্যথা হতে থাকে। তা এতটা বেড়ে যায় যে রাতে ঘুম পর্যন্ত ভেঙে যায়। আপনাকে জানিয়ে দিই যে রাতে হওয়া পায়ের ব্যথায় আপনি একাই পীড়িত তা নন, বরং লক্ষ লক্ষ লোক এই সমস্যায় ভুগছেন। আজ এই প্রতিবেদনে আপনাদের রাতে হওয়া পায়ের ব্যথার কারণ এবং তা প্রতিকার জানানোর চেষ্টা করছি। আপনি এগুলি মেনে চললে সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ Mahalaxmi Mantra: ধন-বৈভব সব পাবেন, এই সহজ মন্ত্রে মা লক্ষ্মীকে জপ করুন
প্ল্যান্টার ফ্যাসিসিটিজ (Plantar fasciitis)
পায়ের সামনের দিকের অংশ থেকে গোড়ালি পর্যন্ত যে ব্যথা হয়, সেটিকে প্ল্যান্টার ফ্যাসিসিটিজ বলে। যখন পায়ের উপর চাপ পরে, তখন তা পায়ে টান পড়লে পায়ে ব্যথা অনুভূত হয়। প্ল্যান্টার ফ্যাসিসিটিজ গোড়ালির ব্যাথার সবচেয়ে সাধারণ কারণ। এর মধ্যে একটি যদি আপনার গোড়ালিতে প্রায়ই ব্যথা হতে থাকে তাহলে হতে পারে যেটি আপনার প্ল্যান্টার ফ্যাসিসিটিজে কোনও রকমের চাপ বা টান অনুভূত হচ্ছে এবং অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে থাকলে এই ধরনের ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এটি প্রায়ই সকালের দিকে হয়।
মরটান্স নিউরোমা (Mortons Neuroma)
মরটান্স নিউরোমা একটি মারাত্মক পরিস্থিতি। যা আপনার পায়ের আঙ্গুলের রোগের আশপাশে বা ব্যথা অথবা আলপিনের মত খোঁচা অনুভব হয়। এতে জ্বালা এবং আঙুলের মধ্যে খুব ব্যথা হতে থাকে। এই ব্যথা অনেক সময় সারাদিন চলে এবং রাতেও থাকে। বিশেষ করে যখন আপনি হাঁটাচলা করেন, তখন পায়ের চাপ পড়লে ব্যথা বাড়তে থাকে।
গর্ভাবস্থা
গর্ভাবস্থার সময় আপনার শরীরের ক্যালসিয়ামের আলাদা প্রসেস শুরু হয়। ক্যালসিয়ামের স্তরে এই বদল, পায়ের গোড়ালি এবং পাতায় ব্যথা হতে পারে।
ডায়াবেটিস
ব্লাড সুগারের হাই লেভেল ধীরে ধীরে সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমকে ক্ষতি করে। এতে আপনার পায়ের রগও শামিল থাকে। পরিস্থিতি বিগড়ে গেলে এতে পায়ে খুব ব্যথা হতে শুরু করে। যা সময়ের সঙ্গে বাড়ে।
ফাইব্রোমায়লগিয়া fibromyalgia
ফাইব্রোমায়লগিয়া একটা ক্রনিক কন্ডিশন যা অত্যন্ত দ্রুত ব্যথার কারণ হয়। এর মধ্যে পাওয়া এবং অন্য অঙ্গে ব্যথা হতে পারে. অনেক সময় শরীরে চাপ পড়লে বা দীর্ঘক্ষণ শ্রম করলে এই ব্যথা তৈরি হয়। রাতে প্রায় অ্যান্টি এমপ্লয়মেন্টারি হরমোন আর্টিসোলকে লো করে দেয়। যে কারণে ব্যথা অনুভূত হয়।
ভুলভাবে ওঠাবসা করা
পায়ের ব্যাথার একটা অন্যতম এবং সাধারণ কারণ হলো আমরা ঠিকভাবে বসা বা ওঠার কাজ করি না। আমাদের জুতো পড়ার পদ্ধতি ভুল হয়। যা লম্বা সময় পর্যন্ত পড়ে থাকলে আমাদের পায়ের স্বাভাবিক গঠনের উপর চাপ পড়ে এবং ব্যাথা অনুভূত হয়। হাঁটাচলা বা দৌড়ানোর সময় পায়ে ব্যথা অনুভূত হয়। এটি কিন্তু ওষুধ খেলে ঠিক হয়ে যায়। অনেক সময় পায়ে সেঁক দিলেও এটি ঠিক হয়।
আরও পড়ুনঃ এই পাঁচ সহজ উপায়ে মা লক্ষ্মীকে চিরদিন ঘরে বেঁধে রাখুন
পায়ের গঠন
আপনি জেনে অবাক হবেন যে কিছু লোকের নিজের পায়ের গঠনের কারণে রাতে পায়ে ব্যথা অনুভব হয়। যে সমস্ত লোকেদের হাই আর্ক এবং ফ্লাট আর্কওয়ালা পা, তাদের পায়ে ব্যাথার সমস্যা তৈরি হয়। অনেকের পায়ের তলা একদম সোজা। কোনও রকম গর্ত নেই। তাদের লো আর্ক হিল বলা হয়। শরীরের উপর চাপ পড়ে এবং পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা হয়।
চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
পায়ের ব্যথার বিভিন্ন রকম মানুষকে সমস্যায় ফেলে। কিন্তু যদি আপনি লম্বা সময় এই ধরনের সমস্যায় ভুগতে থাকেন, তাহলে আপনাকে চিকিৎসকের কাছে অবশ্যই যেতে হবে। কারণ প্রত্যেকের পায়ের ব্যথার সমস্যা আলাদা হতে পারে। তবে তার আগে ঘরোয়া টোটকা করে দেখতে পারেন। সাধারণভাবে হওয়া ব্যথার জন্য আপনাকে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। যদি আপনার সমস্যা বেশি হয় তাহলে লম্বা সময় পর্যন্ত ব্যথা হতে থাকে, তাহলে চিকিৎসা কে পরামর্শ নিন। কিন্তু সাধারণভাবে কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করলেই ব্যথা অনেক সময় কমে যায়।
১. হাইড্রেশন
জল খেলে আপনার শরীর হাইড্রেট থাকে এবং মাংসপেশির গঠন ফ্লেক্সিবল থাকে। তাতে আপনার যে কোনও ধরনের ব্যথা-বিষ কম থাকে। জলের ঘাটতি তৈরি হলেই টান বা ক্র্যাম্প তৈরি হয়। ফ্লুইডস কমতে থাকায় এই সমস্যা বাড়ে। তাতে ব্যথা হয়।
২. স্ট্রেচিং
পায়ের আঙুল এবং গোড়ালিকে স্ট্রেচিং করে মাংসপেশির ব্যথা কম করতে পারেন।
৩. ব্যায়াম
কিন্তু অনেক সময় সমস্ত দিন বসে থাকলে পা ব্যথা হয়। এ কারণে আপনি যে দিনে হালকা-পলকা কসরত যদি করেন, তাহলে শরীরের অন্যান্য অঙ্গের সঙ্গে পায়ের ব্যথা কম থাকে। ব্লাড সার্কুলেশন ভাল থাকলে যে কোনও জায়গায় ব্যথা এক জায়গায় আটকে থাকে না।
৪. বরফের সেঁক
ব্যথা বেশি হলে কাপড়ের মধ্যে বরফ জড়িয়ে ব্যাথা জায়গায় ঘসলে আরাম পাওয়া যায়। মনে রাখতে হবে যে আপনার আইস ব্যাগ বা বরফকে কাপড়ের মধ্যে বেঁধেই ,তা করতে হবে। খোলা বরফ ঘষবেন না।
৫. মাসাজ
যে কোনও তেল দিয়ে পায়ের ম্যাসাজ করলে আর সার্কুলেশন ভাল থাকে। মাংসপেশি এক জায়গায় জমাট বাঁধতে পারে না। ফলে পায়ের ব্যথা অনেকটাই কম থাকে।