পুজোর ছুটিতে কাছেপিঠে বেড়িয়ে আসার পরিকল্পনা থাকে অনেকেরই। আর কাছেপিঠে বেড়ানো মানেই বাঙালির পছন্দের তালিকায় সবা উপরেই থাকে দার্জিলিং। ভ্যাপসা গরমের হাত থেকে রেহাই পেতে অনেকেই শৈলশহর যাওয়ার প্ল্যান করেন বেশিরভাগ ট্যুরিস্ট। কিন্তু পুজোর ভিড়ে টিকিট বুকিং করতে গিয়েই নাজেহাল অবস্থা হয়। অগত্যা দার্জিলিং বেড়ানো না গেলে ঘুরে আসতে পারেন 'মিনি দার্জিলিং'। কোথায় রয়েছে এই ট্যুরিস্ট স্পট? কীভাবে যেতে হবে? সব প্রশ্নের হদিশ দিচ্ছে bangla.aajtak.in.
কোন শহরকে বলা হয় 'মিনি দার্জিলিং'?
পশ্চিমবঙ্গের একদম নাকের ডগাতেই রয়েছে 'মিনি দার্জিলিং'। যেখানে রয়েছে সবুজে ঘেরা পাহাড় এবং মনোরম আবহাওয়া। দার্জিলিং না গিয়েও শৈলশহরে বেড়ানোর মতোই অনুভূতি হবে পর্যটকদের। স্থানটির নাম পূর্ণিয়া। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা এই অঞ্চলটি রয়েছে পড়শি রাজ্য বিহারে।
পূর্ণিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রয়েছে চা বাগান। এক ঝলকে দেখলে অনেকেই দার্জিলিং বলে ভুল করবেন। ১৯৯২ সাল থেকে চা উৎপাদন করা হয় সেখানে। 'বিহারি টি' নামে পূর্ণিয়ার চা-এর ব্র্যান্ডিং করা হয়। কেবলমাত্র দেশের মধ্যে নয়, ১২টি দেশে রফতানি করা হয় এই 'বিহারি টি'।
পূর্ণিয়ার আবহাওয়াও বেশ মনোরম। শৈলশহরের সঙ্গে এর মিল রয়েছে। গরমকালে আর্দ্রতা বেশি থাকলেও বিহারের অন্যান্য রাজ্যগুলির মতো ততটা গলদঘর্ম দশা হয় না এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের। আবারল বিহারের মধ্যে সর্বাধিক বৃষ্টিপাত হওয়ার রেকর্ডও রয়েছে পূর্ণিয়ারই।
মূলত নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে 'মিনি দার্জিলিং'-এ বেড়ানোর জন্য আদর্শ সময়। জানুয়ারি মাসে পূর্ণিয়ায় সাধারণত ৫ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করে।
কোথায় কোথায় ঘুরবেন?
বিহারের পূর্ণিয়া জেলা বরাবরই বাঙালি অধ্যুষিত। বাঙালিদের নিজস্ব কমিউনিটি রয়েছে সেখানে। হয় দুর্গাপুজোও। রয়েছে রামকৃষ্ণ মিশন। একটা সময়ে বাঙালি অধ্যুষিত এই পূর্ণয়ার অংশবিশেষ পশ্চিমবঙ্গে অন্তর্ভূক্তির দাবিতে ২২ দিন অনশন করেছিলেন বৈদ্যনাথ ভৌমিক। সে কাহিনি কার্যত ইতিহাস থেকে উবে গিয়েছে। পূর্ণিয়ার সবচেয়ে আকর্ষণীয় ট্যুরিস্ট স্পট জালালগড় কেল্লা। এছাড়াও পূরাণ দেবী মন্দির, কালী বাড়ি মন্দির জনপ্রিয়। ঐতিহাসিক স্থানগুলির মধ্যে রয়েছে ফরবেসগঞ্জ এবং কাজহা কোঠি বা শাস্ত্রী পার্ক। এছাড়াও পর্যটকরা বেড়িয়ে আসতে পারেন কোশী নদীর পাড় থেকে।
কীভাবে যাবেন?
কলকাতা থেকে পূর্ণিয়ার দূরত্ব ৪৩৭ কিলোমিটার। ট্রেনে যেতে সময় লাগে আনুমানিক ৯ ঘণ্টা। পূর্ণিয়া থেকে প্রচুর মানুষ এ রাজ্যে যাতায়াত করেন। বিমানবন্দর না থাকায় নিকটবর্তী এয়ারপোর্ট থেকে ফ্লাইট ধরে বাগডোগরা হয়ে ঘুরপথে কলকাতা পৌঁছতে হতো তাদের। তবে এবার মুশকিল আসান। পূর্ণিয়া বিমানবন্দর থেকে এবার সরাসরি বিমানে চড়ে কলকাতা আসা যাবে। এর আগে পূর্ণিয়া থেকে কমার্শিয়াল ফ্লাইট চালুর চেষ্টা করা হলেও তা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। তবে এবার সপ্তাহে ৩ দিন করে পূর্ণিয়া থেকে কলকাতা পর্যন্ত উড়ান চলবে বলে জানিয়েছে ইন্ডিগো এয়ারলাইন্স। ভৌগলিক দিক থেকেও পূর্ণিয়ার গুরুত্ব অপরিসীম বলে জানিয়েছেন এয়ারলাইন্স কর্তারা। জানা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের বালুরঘাট এবং মালদা থেকে ফ্লাইট ধরতে গেলে যেতে হয় বাগডোগরা। অথচ সীমান্ত লাগোয়া পূর্ণিয়া বিমানবন্দরে তার চেয়েও কম সময়ে পৌঁছে যেতে পারবেন এ রাজ্যের এই দুই জেলার বাসিন্দারা। এছাড়াও বিমানবন্দরে গিয়ে উড়ান ধরতে পারবেন ভাগলপুরের বাসিন্দারাও। ৫০টি আসনের এটিআর বিমান আপাতত উড়বে পূর্ণিয়া বিমানবন্দর থেকে। সোম, বুধ এবং শুক্র অর্থাৎ সপ্তাহে ৩ দিন কলকাতা ও পূর্ণিয়ার মধ্যে ডিরেক্ট ফ্লাইট চলবে। যাত্রীদের প্রতিক্রিয়ার উপর নির্ভর করে পরিষেবা বাড়ানো হতে পারে বলেও খবর।