লিভার আমাদের শরীরের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা প্রতিদিন প্রায় ৫০০টিরও বেশি কাজ সম্পন্ন করে। খাবার থেকে পুষ্টি শোষণ, শক্তি উৎপাদন, রক্ত পরিষ্কারকরণ, রোগ প্রতিরোধ থেকে শুরু করে রক্ত জমাট বাঁধানো, প্রতিটি কাজেই লিভারের ভূমিকা অপরিহার্য। আশ্চর্যের বিষয়, এই অঙ্গটির ৭৫ শতাংশ অপসারণ করলেও এটি নিজে থেকে পুনরায় জন্ম নিতে পারে। তবে কিছু ভুল অভ্যাস, ভাইরাস সংক্রমণ ও জীবনযাত্রার কারণে লিভার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
লিভার ক্ষতির কারণ কী কী?
বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, স্থূলতা, দীর্ঘদিন ওষুধ গ্রহণ, ভাইরাল সংক্রমণ (যেমন হেপাটাইটিস A, B, C), এবং কিছু জিনগত রোগ (যেমন হিমোক্রোমাটোসিস) লিভার বিকলের অন্যতম কারণ।
কোন লক্ষণগুলো দেখলে সাবধান হবেন?
প্রাথমিক পর্যায়ে লিভারের সমস্যা বোঝা কঠিন। তবে কয়েকটি লক্ষণ লক্ষ্য করলেই সতর্ক হওয়া জরুরি:
অতিরিক্ত ক্লান্তি, দুর্বলতা
খিদে না পাওয়া, ওজন কমে যাওয়া
পেটের ডান দিকে ব্যথা বা অস্বস্তি
ত্বক ও চোখ হলুদ হয়ে যাওয়া (জন্ডিস)
প্রস্রাবের রং গাঢ় হওয়া ও বিবর্ণ মল
এই ধরনের উপসর্গ দেখা গেলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
লিভার সুস্থ রাখবেন কীভাবে?
১. সুষম খাবার খান — ফলমূল, শাকসবজি, গোটা শস্য, চর্বিহীন প্রোটিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার লিভার ভালো রাখতে সাহায্য করে।
২. অতিরিক্ত চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন — এগুলো লিভারে চর্বি জমাতে পারে, যা নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার রোগের কারণ হয়।
৩. অ্যালকোহল ছাড়ুন— এটি লিভারের কোষ ধ্বংস করে।
৪. ওষুধ সচেতনভাবে গ্রহণ করুন — চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া দীর্ঘদিন ওষুধ খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ।
৫. নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করান — লিভার এনজাইম ও ফাংশন টেস্ট মারফত আগাম সতর্কতা পাওয়া সম্ভব।
লিভার বিকল হলে তা শুধুমাত্র শারীরিক ক্ষতির কারণ হয় না, অনেক সময় জীবননাশেরও আশঙ্কা থাকে। তাই সময় থাকতে সচেতন হোন, সঠিক জীবনযাপন অনুসরণ করুন, এবং প্রয়োজনে দেরি না করে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন। শরীর সুস্থ থাকলে, জীবনই বদলে যাবে।