এই পদটি সামনে আসা মানেই সব ডায়েট ভুলে হামলে পড়া। আর সেটা যদি হয় কলকাতার বিরিয়ানি তাহলে তো কোনও কথাই হবে না। এই শহরে বিরিয়ানি আসে ওয়াজেদ আলি শাহ-এর হাত ধরে। ভিনদেশি পদ হলেও শহরবাসীর মন জয় করে নিতে একটুও সময় নেয়নি বিরিয়ানি। নরম তুলোর মতো মাংস আর নধর একখানা আলু, মুখে পড়লেই যেন স্বর্গসুখের অনুভূতি দেয়। ইদানীং, বিরিয়ানির প্রতি বাঙালিদের টান আর ভালোবাসা যেন বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে। শহরের রাস্তাঘাটের আনাচে কানাচে, অলিতে গলিতে এখন বিরিয়ানির দোকান। দোকানের একশো মিটারের মধ্যে এসে পড়লেই নাকে বিরিয়ানির গন্ধ আর লাল কাপড়ে মোড়া বিরিয়ানির বিশাল হাঁড়ি চোখে পড়বেই। তবে লক্ষ্য করে দেখবেন বিরিয়ানির হাঁড়ি সবসময়ই লাল কাপড়ে মোড়া থাকে। অন্য কোনও রঙ কিন্তু দেখতে পারবেন না। কিন্তু কেন লাল কাপড়েই মোড়া থাকে বিরিয়ানির হাঁড়ি?
আসলে মানুষের ভাষার মতো রংয়েরও আলাদা আলাদা ভাষা রয়েছে। তার ওপর আবার লাল রঙ-এর ব্যবহার আলাদা আলাদা দেশে ভিন্ন ভিন্ন। তবে ভারতে লাল রংকে সাধারণত ধরা হয় সৌভাগ্য, উষ্ণতার, আনন্দ-উৎসব ও ভালবাসার আবেগের প্রতীক হিসেবে। হৃদয়ের রং কী? শুধু তাই নয়, উষ্ণ অভ্যর্থনা প্রকাশের ক্ষেত্রেও হৃদয়ের লাল রং ব্যবহার হয়।
তবে বিরিয়ানির হাঁড়ি লাল রঙের কাপড়ে মোড়া নিয়ে রয়েছে ইতিহাস। সেই ইতিহাস ঘাঁটলেই জানা যায় যে সম্রাট হুমায়ুনের খাদ্য পরিবেশনে 'দরবারি রীতি' অনুসরণ করা হত। সেই অনুযায়ী, রূপোলি পাত্রের খাবারগুলির জন্য লাল কাপড় ও অন্য ধাতব বা তিনামাটির পাত্রগুলিকে সাদা কাপড়ে ঢেকে নিয়ে আসা হত।
পরবর্তীকালে মুঘল দরবারেও এই একই রীতি অনুসরণ করা হয়। খাদ্য পরিবেশনের এই রীতি ও রঙের ব্যবহার লখনউয়ের নবাবরাও অনুসরণ করতেন। রীতিনীতি অনুযায়ী খাবার পরিবেশনে লাল কাপড় ব্যবহার করা হত। সেই রীতি অনুযায়ী এখনও বিরিয়ানির হাঁড়িতে লাল কাপড় ব্যবহার করা হয় । সুতরাং বলা যায় আভিজাত্য বা ঐতিহ্য রক্ষার জন্যই বিরিয়ানির হাঁড়িতে আজও লাল কাপড় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আসলে সমাজ জীবনে অভিজাত্য, বনেদি, উষ্ণতা প্রকাশে লাল বা লাল শালুর ব্যবহার চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। আর বিরিয়ানিও সেই বনেদিয়ানা বজায় রেখেছে।
আরও পড়ুন: Best Biryani Restaurants In Kolkata: কলকাতার পুজোয় রসনা বিলাশ হবে না? বিরিয়ানি খেতে ক্লিক করুন...
যদিও অনেকের মত, এর পিছনে কোনও ইতিহাস নেই। বরং দূর থেকে ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যই বিরিয়ানির হাঁড়ি লাল কাপড়ে ঢেকে রাখা হয়। এর ফলে দূর থেকেই তা ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে। তবে ইতিহাস বা ঐতিহ্যের ব্যাখ্যা যা-ই হোক না কেন, লাল কাপড়ে মোড়া বিরিয়ানির পাত্রের সঙ্গে অসংখ্য ভোজন রসিক মানুষের একটা সম্পর্ক দীর্ঘ বেশ কয়েক দশকে তৈরি হয়েছে। লাল কাপড়ে মোড়া বিরিয়ানি দেখলেই যেন ক্ষিধে বেড়ে যায় দশগুণ।