পার্টিতে 'চিয়ার্স' (Cheers) না থাকা ফোনে কথা বলার সময় 'হ্যালো' না বলার মতোই অসম্পূর্ণ। 'চিয়ার্স' বলার এই প্রথা বহু শতাব্দী ধরে চলে আসছে, যার জন্য ধর্মীয় থেকে বৈজ্ঞানিক বিভিন্ন কারণ রয়েছে বলেও দাবি করা হয়। আপনি নিশ্চয়ই কিছু লোককে মদ খাওয়ার আগে মাটিতে কিছুটা ছিটিয়ে দিতে দেখেন। এটা বিশ্বাস করা হয় যে এই মদের ছিটেতেই তেষ্টা মেটে অতৃপ্তদের। অন্যদিকে, জার্মানিতে একটি বিশ্বাস রয়েছে যে মদ্যপানের সময় গ্লাসের আওয়াজ করলে অশুভ আত্মা দূরে চলে যায়। প্রাচীন গ্রিসের বিশ্বাস অনুসারে, সুখের পরিবেশে মদের গ্লাস উপরের দিকে তোলা হল ঈশ্বরকে উৎসর্গ করার একটি অঙ্গভঙ্গি।
মানুষ কেন 'চিয়ার্স' করে (Why do people do 'cheers')?
ককটেল ইন্ডিয়া ইউটিউব চ্যানেলের প্রতিষ্ঠাতা সঞ্জয় ঘোষ ওরফে দাদা বারটেন্ডার মদ খাওয়ার আগে 'চিয়ার্স' করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে একটি খুব আকর্ষণীয় বিষয় বলেছেন। তাঁর মতে, একজন মানুষের পাঁচটি ইন্দ্রিয় আছে- চোখ, নাক, কান, জিহ্বা এবং ত্বক। যখন লোকেরা মদ খাওয়ার জন্য একটি গ্লাস তুলে নেন, তাঁরা প্রথমে এটি স্পর্শ করে। খাওয়ার করার সময় আমরা আমাদের জিহ্বা দিয়ে সেই পানীয়ের স্বাদ অনুভব করি। এই সময়, নাক দিয়ে সেই পানীয়ের সুগন্ধ বা গন্ধ অনুভব করা হয়। ঘোষের মতে, মদ্যপানের এই পুরো প্রক্রিয়ায় শুধু কান ব্যবহার করা হয় না। এই অভাব পূরণ করার জন্য আমরা কানের আনন্দের জন্য 'চিয়ার্স' করি। এটা বিশ্বাস করা হয় যে এইভাবে মদ খেলে পাঁচটি ইন্দ্রিয় সম্পূর্ণরূপে ব্যবহৃত হয় এবং মদ পান করার অনুভূতি আরও আনন্দদায়ক হয়।
শ্যাম্পেন কী?
শ্যাম্পেনও (champagne) এক ধরনের ওয়াইন। আসলে, সাধারণ ওয়াইনে কোন বুদবুদ বা ফেনা নেই। যে মদে ফেনা ও বুদবুদ থাকে, তখন এই মদটি শ্যাম্পেনের বিভাগে পড়ে। যখন সাধারণ জলে কার্বন ডাই অক্সাইড যোগ করা হয়, তখন এটি সোডা বা স্পার্কিং ওয়াটারে পরিণত হয়। এখানে বোঝার বিষয় হল সমস্ত শ্যাম্পেন এক ধরণের স্পার্কিং ওয়াইন, তবে সমস্ত স্পার্কিং ওয়াইনকে শ্যাম্পেন বলা যায় না। ঘোষের মতে, ফ্রান্সে এমন একটি অঞ্চল রয়েছে যেখানে শুধুমাত্র স্পার্কিং ওয়াইন তৈরি করা হয়। তাকে শ্যাম্পেন বলা হয়। অর্থাৎ, ফ্রান্সের 'শ্যাম্পেন অঞ্চলে' তৈরি স্পার্কলিং ওয়াইনের বোতলের উপরই শুধু শ্যাম্পেন লেখা যাবে। এই পার্থক্য ব্যাখ্যা করার জন্য ঘোষ একটি খুব সহজ উদাহরণ দিয়েছেন। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে যত ভাল চা পাওয়া যায়, তবে সেগুলিকে দার্জিলিং চা বলা যাবে না। দার্জিলিং চায়ের যেমন বাংলার একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে, তেমনি ফ্রান্সের একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের সঙ্গে শ্যাম্পেনের সংযোগ রয়েছে। সম্ভবত সে কারণেই ইতালিতে তৈরি স্পার্কিং ওয়াইনকে প্রসেকো বলা হয়, শ্যাম্পেন নয়। একইভাবে, স্পেনে তৈরি স্পার্কিং ওয়াইনকেও কাভা বলা হয়, শ্যাম্পেন নয়।
শ্যাম্পেন কীভাবে তৈরি হয় (How champagne is made)?
শ্যাম্পেন তৈরি করতে কিছু বিশেষ নিয়ম ও পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। শ্যাম্পেন একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়ার পরেই স্পার্কিং ওয়াইন থেকে প্রস্তুত করা হয়। ঘোষের মতে, শ্যাম্পেন তৈরি করতে প্রধানত তিন ধরনের আঙুরের প্রয়োজন হয়। তারপর দুই রাউন্ড গাঁজন করার পর বোতলে ভরে ৫ থেকে ১০ মাসের জন্য কাত করে রেখে দেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়া চলাকালীনই শ্যাম্পেনে বুদবুদ তৈরি হয়। এর পরে, চূড়ান্ত শ্যাম্পেন আরও কিছু প্রক্রিয়া এবং পরিপক্ক হওয়ার প্রক্রিয়ার বছরগুলি অতিক্রম করার পরে প্রস্তুত করা হয়। গাঁজন প্রক্রিয়া চলাকালীন বোতলের ভিতরে উচ্চ চাপের কার্বন ডাই অক্সাইড তৈরি হয়। এ কারণেই যখন লোকেরা শ্যাম্পেন বোতল থেকে কর্ক অপসারণ করে, এটি খুব দ্রুত বেরিয়ে আসে।