Holong Tourist Lodge: ৬৮ বছরের পুরনো ডুয়ার্সের মাদারিহাটের জলদাপাড়ায় ভিনটেজ হলং বনবাংলো পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে কয়েকদিন আগেই। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু থেকে শুরু করে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রিয় ছিল এই বাংলো। এ ছাড়াও বহু সাধারণ মানুষ, পর্যটনপ্রেমী ও বিখ্যাত ব্যক্তিরা এখানকার ঢাউস উইন্ডো দিয়ে জন্তু-জানোয়ারের আনাগোনা দেখেননি এমন নয়। বাংলো পুড়ে যাওয়ার পরেও পছন্দের স্থাপত্যটির পুড়ে যাওয়া ধ্বংসস্তুপ দেখতেও ভিড় করেছিলেন পর্যটকদের একটা বড় অংশ। সেই সঙ্গে সকলের মনে এই প্রশ্ন ছিল, ঐতিহ্য ও সৌন্দর্যের মিশ্রণএই বাংলোটিকে আবার আগের মতো পাওয়া যাবে কি না। নাকি অনেক বাংলোর মতো পাকা করে দেওয়া হবে আধুনিক করে।
সংস্কারের ক্ষেত্রে আশার কথা শুনিয়েছেন রাজ্যের বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা (Birbaha Hansda)। বিধানসভায় তিনি জানিয়েছেন, শীঘ্রই হলং বনবাংলো সংস্কারের কাজ শুরু হবে। আর সংস্কারের ক্ষেত্রে বাংলোর পুরোনো আদলই ধরে রাখা হবে। যার পর খুশির আমেজ উত্তরের তথা গোটা রাজ্যের পর্যটন মহলে। বনমন্ত্রী এই বনবাংলোর সঙ্গে উত্তরবঙ্গবাসীর আবেগ ও স্মৃতির কথা মনে করিয়ে দিয়ে পুরনো স্থাপত্যশৈলী অটুট রাখা হবে বলে জানিয়েছেন বিধানসভায়।
কবে কাজ শুরু হবে?
পুজোর পরেই পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হতে পারে এই বাংলো। উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল ভাস্কর জেভি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, পুড়ে যাওয়া বাংলো দ্রুত পরিষ্কার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেভাবেই কাজ শুরু হয়েছে। এরপর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী পরবর্তী কাজ হবে। তবে বন দফতর সূত্রের খবর দ্রুত কাজ শেষ করে পুজদোর আগেই পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। রাজ্য়ের জঙ্গলগুলি খুলবে ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে। তখন থেকেই যেন সবাই থাকতে পারে ও বুকিং করতে পারে সে বিষয়ে দ্রুত গতিতে কাজ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্রাভেল ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সম্পাদক সম্রাট সান্যাল জানিয়েছেন, এটি একটি আবেগের জায়গা। হলং বনবাংলোতে যায়নি এমন বাঙালি মেলা ভার। এখানে বুকিং পাওয়া অত্যন্ত কঠিন। একই রকম আদলে গড়ে তুললে পর্যটক আকর্ষণ বজায় থাকবে বলে তিনি মনে করছেন। পর্যটন ব্যবসায়ী তাপস সাধন রায় জানিয়েছেন, রাজ্যের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই, এত দ্রুত এই সিদ্ধান্ত ও কাজ করার জন্য ধন্যবাদ প্রাপ্য।
হলং নদীর তীরে এই বাংলোটি বানানো হয়েছিল সম্পূর্ণ কাঠ দিয়ে। পুরোনো সেই আদল ফুটিয়ে তোলার জন্য দক্ষ কাঠের কারিগর খোঁজাটাই এখন বন দফতরেরের কাছে চ্যালেঞ্জ। এর আগে সংস্কারের ক্ষেত্রে শাল-সেগুন কাঠ ব্যবহার করা হয়েছিল। এবারেও যেন ভালো মানের কাঠ দিয়েই কাজ করা হয়, সেই দাবিও উঠেছে।
১৯৬৭ সালে মাদারিহাটে জলদাপাড়া জঙ্গলের ভিতর বাংলোটি তৈরি হয়। বিভিন্ন বন্যজন্তু ও পাখিদের সান্নিধ্য উপভোগ করার জন্য দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত প্রিয় ছিল এই বনবাংলো। জঙ্গলের নিস্তব্ধতায় কিছুটা সময় কাটাতে এসেছেন অনেক নামী-দামি মানুষ। প্রায় ৬৮ বছর ধরে এই বাংলোটিতে অজস্র পর্যটক এসে থেকেছেন। বাংলোটি পুড়ে যাওয়ার খবরে পর্যটনমহলেও মন খারাপ। সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি এই বন বাংলোটি যেন আগের মতো করেই গড়ে তোলা হয়, সেই দাবি তুলছেন সকলে। অন্যদিকে, হলং বনবাংলোয় আগুন নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অভিযোগ জানাবেন বলে দাবি করেছেন আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ মনোজ টিগ্গা।