বড়দিন ও ইংরেজি নতুন বছরে দুই মেগা ইভেন্টেই পর্যটক হারিয়েছে বিখ্যাত বক্সা টাইগার রিজার্ভ (Buxa Tiger Reserve)। বক্সা টাইগার রিজার্ভের রিসর্ট, হোমস্টে বন্ধের উপর হাইকোর্টের স্টে অর্ডার উঠে যেতেই ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবিউনালের আগের রায় কার্যকর হওয়ায় সিঁদুরে মেঘ দেখেছিল গোটা বক্সা টাইগার রিজার্ভের পর্যটন ব্যবসায়ী মহল। সেই সমস্যা এখনও কাটেনি। ফলে বক্সায় রাত্রিবাস এখনও বন্ধ। বিপাকে এলাকার পর্যটন।
আগে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত বুকিং বাতিল ছিল বক্সায়। এরপরও খোলেনি ভরা পর্যটন মরশুমেও। এখনও আরও অন্তত ১৮ দিন বক্সা ব্যাঘ্র-প্রকল্পের বনে রাত্রিবাস নিষিদ্ধ করা রয়েছে। খোলা যাবে না হোমস্টে, রিসর্ট কিংবা বাংলোর দরজা। হোমস্টে, রিসর্ট খুলতে সক্রিয়তার জন্য রাজ্য সরকারকে কার্যত ভর্ৎসনা করেছেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু।
বাঘ সংরক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট জঙ্গলে কীভাবে পর্যটন ভিলেজ তৈরি করা হল? তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে আদালত। আদালত নির্দেশ দেয়, ‘সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে রাজ্য সরকারকে। রাজ্যের তরফে অবশ্য যুক্তি দেওয়া হয়, বনাঞ্চলের একদিক ব্যবহৃত হলেও সংরক্ষিত এলাকা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়নি। হোমস্টে, রিসর্ট মালিকদের আইনজীবীরা দাবি করেন, পরিবেশ আদালতের গঠিত কমিটি যথাযথ নিয়ম মেনে তৈরি করা হয়নি। মালিকদের পক্ষে আইনজীবী মহম্মদ শামিম এবং বিশ্বরূপ ভট্টাচার্যরা বলেন, ‘ওই কমিটির গঠন অসাংবিধানিক। হোমস্টে বন্ধ করে দেওয়া ঠিক হবে না।’
১৮ জানুয়ারি মামলার পরবর্তী শুনানির দিন পর্যন্ত বক্সা বনে রিসর্ট, হোমস্টে, বাংলো বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয় শুক্রবার। মূল নিষেধাজ্ঞাটি ছিল জাতীয় গ্রিন ট্রাইবিউনালের। তা সত্ত্বেও অবাধে পর্যটকদের রাত্রিবাস চলছিল একটি স্থগিতাদেশের সুযোগ নিয়ে। হাইকোর্ট সেই আদেশ তুলে নেওয়ায় বড়দিনের ছুটির আগে ১৭ ডিসেম্বর থেকে আবার হোমস্টে, রিসর্ট বন্ধের নোটিশ দেয় বন দফতর। সেই নোটিশকে চ্যালেঞ্জ করে যে মামলা করেছিল হোমস্টে, রিসর্ট মালিকদের সংগঠন, শুক্রবার তারই শুনানি ছিল।
আলিপুরদুয়ার ডিস্ট্রিক্ট ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের তরফে দাবি, আরও ১৮ দিন অপেক্ষা করতে হবে। এটা পর্যটনের মারাত্মক ক্ষতি। হোমস্টে মালিকরা বলছেন, ১৮ দিন অপেক্ষার পরেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হলে পথে বসতে হবে।
বক্সা টাইগার রিজার্ভে সব মিলিয়ে ১৫০টির মতো হোটেল, রিসর্ট এবং হোমস্টে রয়েছে। পর্যটন ব্যবসায় যুক্ত রয়েছেন ১০ হাজারের বেশি মানুষ। শুক্রবার বক্সা, জয়ন্তীতে বেড়াতে এসে পর্যটকদের নিরাশ হয়ে ফিরে যেতে হয়েছে। তার ওপরে রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ হওয়ার জেরে ২৩ ডিসেম্বরের পরেও নতুন করে বক্সার কোনও এলাকাতেই হোমস্টে বা রিসর্টে বুকিং করার সাহস পাচ্ছেন না পর্যটকরা। পরিবর্তে অন্য পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে চলে যাচ্ছেন তাঁরা।