First Living Heritage Festival At Buxa Tiger Reserve: পর্যটকদের কাছে বক্সার জঙ্গলের (Buxa Tiger Reserve) দুটি প্রধান আকর্ষণ। প্রথমত রয়্যাল বেঙ্গল আর দ্বিতীয়ত ঐতিহাসিক বক্সা দুর্গ (Buxa Fort)। পর্যটকরা মূলত এর টানেই আসেন। কিন্তু ঘটনাচক্রে দুটি আকর্ষণই পর্যটকদের কাছে অধরা রয়েছে সাম্প্রতিককালে। কারণ রয়্যাল বেঙ্গল কালে ভদ্রে দেখা মেলে। তাও বহু বছর পর তার হদিশ মিলেছে জঙ্গলে। অন্যদিকে বক্সা দুর্গ (Buxa Hill) আপাতত সংস্কার চলছে। তাই বাইরে থেকেই দেখতে হচ্ছে আপাতত। তবে তা ছাড়াও যাতে বক্সার জঙ্গলে ঘোরার আকর্ষণ পর্যটকদের কাছে বিন্দুমাত্র না কমে, সে বিষয়টি মাথায় রেখে বক্সার পাহাড়ি গ্রামগুলিতে কমিউনিটি ট্যুরিজম শুরু করা হয়েছে কয়েক বছর থেকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। এবার বক্সায় শুরু হয়েছে 'লিভিং হেরিটেজ ফেস্টিভ্যাল' (Living Heritage Festival)।
মূলত স্থানীয় লুপ্তপ্রায় ডুকপা জনজাতির সংস্কৃতিকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে প্রথমবার বক্সায় ডুকপা লিভিং হেরিটেজ ফেস্টিভালের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে ডুকপাদের নিজস্ব পদ রান্নার পাশাপাশি থাকছে ছোটদের ফ্যাশন শো, তিরন্দাজি প্রতিযোগিতা। আগামী ১৫ নভেম্বর থেকে তিনদিন ধরে বক্সা ফোর্টের মাঠের কাছে এই অনুষ্ঠানটি হবে। কারণ সেখানে যাতায়াতে সব এলাকার বাসিন্দাদের সুবিধা। এছাড়া কেউ রাত্রিবাস করতে চাইলে লেপচাখায় সেই সুযোগও রয়েছে।
অ্যাসোসিয়েশন ফর কনজারভেশন অ্যান্ড ট্যুরিজম সংগঠনের সহযোগিতায় স্থানীয়রা এই অনুষ্ঠানটির আয়োজন করছেন। অনুষ্ঠানের অন্যতম উদ্যোক্তা পিনছো ডুকপা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘প্রথমবার পাহাড়ে এরকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। সবাই বেশ আগ্রহী এই অনুষ্ঠান নিয়ে। তিনদিন ধরে নানা ধরনের প্রতিযোগিতা, সংস্কৃতিচর্চা করা হবে। পর্যটকদেরও ভাল লাগবে অনুষ্ঠান। এর আগে লোসার উৎসব ব্যাপক সাফল্য পেয়েছিল।
কী থাকবে উৎসবে?
উৎসবের প্রথমদিন খুব বেশি কর্মসূচি রাখা হয়নি। জানা গেল, সেদিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর অতিথিবরণ এবং কিছু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান রয়েছে। দ্বিতীয় দিন খুরু (ডার্ট) টুর্নামেন্ট হবে। এছাড়া, থাকছে রান্নার প্রতিযোগিতা। সেখানে ডুকপা জনজাতির নিজস্ব পদ রান্না করবেন অংশগ্রহণকারীরা। বিকেলে ডুকপা জনজাতির শিশুরা ফ্যাশন শোয়ে অংশ নেবে। সেখানে বাচ্চারা নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে হাঁটবে। পাশাপাশি নাচগানেরও বিভিন্ন অনুষ্ঠান রয়েছে। তিনদিনের উৎসব ঘিরে বক্সা পাহাড়ে এখন সাজোসাজো রব। কীভাবে অনুষ্ঠান সফল করা যায়, তা নিয়ে চিন্তা করছেন উদ্যোক্তারা। অন্যদিকে, প্রথমবার এমন ফেস্টিভালে শামিল হতে উদ্গ্রীব সকলে।
এর আগে জানুয়ারিতে বক্সায় হয়েছে লোসার (Losar Festival) উৎসব। এই উৎসব চলবে ৭ দিন ধরে। বক্সা পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় সব থেকে বড় আকারে লোসার উৎসব কিন্তু পালন হয় লেপচাখায় (Lepchakha)। মূলত বক্সার ডুকপা (Dukpa) জনজাতির বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের (Buddhist) মানুষ এই উৎসবে শামিল হন। এই উৎসব এই চত্বরের সবচেয়ে বড় উৎসব।
বক্সা নিয়ে পর্যটক সহ ইতিহাসপ্রিয় মানুষের উৎসাহ এবং আগ্রহের শেষ নেই। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় বক্সা দুর্গ প্রায় ২৭০০ ফুট উঁচু। এটি জেলার অন্যতম ঐতিহাসিক জায়গা। রাজ্যের ঐতিহাসিক সৌধগুলির মধ্যে একটি। যেখানে জড়িয়ে রয়েছে অনেক রক্ত, ঘাম, জল জড়ানো স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস। তার আগেও অবশ্যই এর ঐতিহাসিক ভ্যালু ছিল। ভুটান রাজার হাত থেকে কোচ রাজারা নেয়। সেখান থেকে ব্রিটিশদের হাতে আসে।ভারতে তিব্বতিদের শরণার্থী শিবিরের সাক্ষী এই বক্সা ফোর্ট। ব্রিটিশদের দখলে আসার পর থেকে এটিকে কারাগার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। বহু স্বাধীনতা-সংগ্রামীদের এখানে বন্দী করে রাখা হয়েছিল। দুর্গ সংস্কারের জন্য প্রথম ধাপে প্রায় তিন কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল রাজ্য সরকার। বক্সা, অফিস, বন্দী শিবির, সৈন্য ব্যারাক সংস্কার হয়েছে। পুরনো তিনটি রাস্তা ও নিকাশি ব্যবস্থা আগের রূপে ফেরানো হয়েছে। বিগত বছর জুন মাসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম ধাপের কাজের উদ্বোধন এবং দ্বিতীয় ধাপের কাজের রান্না করেছিলেন। দ্বিতীয় ধাপের জন্য প্রায় দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। সেই কাজে চলছে।