বনজ গন্ধ। গম্ভীর পাহাড়ি স্তব্ধতা। নিঝুম। পাহাড়ি বাঁকে ভরা রাস্তাগুলিতে মাঝে মাঝে দু একজনের দেখা মেলে। সেই যেমন সত্যজিতের কাঞ্চনজঙ্ঘা ছবিতে মাঝে মাঝে রাস্তায় দেখা হয়ে যাচ্ছিল প্রতিটি চরিত্রের। কুয়াশা মাখামাখি সুউচ্চ পাইনের জঙ্গল। রাশভারী ব্যক্তিত্ব ওদের। দিগন্তে নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছেন বুদ্ধ। কাঞ্চনজঙ্ঘা। কাফেরগাঁওয়ে আপনাকে স্বাগত।
শহরের হইচই থেকে বেরিয়ে পাহাড়ের কোলে কোথাও একটা কদিন কাটিয়ে আসার খোঁজ করা এখন অনেক বেড়ে গিয়েছে। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গে সবাই খুঁজছেন অফবিট জায়গা। ভিড় নেই। দার্জিলিং অনেকেই এড়িয়ে যাচ্ছেন। ওতো হইচই ভাল লাগে না। ঘিঞ্জিও বেশ। অনেকে পুজোর ছুটিতে বা শীতকালে বেড়াতে যেতে পছন্দ করেন। কিন্তু বর্ষাতেও কাফেরগাঁও গেলে মুগ্ধ হতে হয়। আপনি হয়তো কাফেরগাঁও সম্পর্কে জানেন। অনেকেই আবার জানেন না, তাঁদের জন্যই এই প্রতিবেদন।
কীভাবে যাবেন কাফেরগাঁও?
কাফেরগাঁও কালিম্পংয়ের একটি গ্রাম। হাতেগোনা কয়েকটি পরিবার বাস করেন। তাঁদেরই হোমস্টে রয়েছে। কলকাতা থেকেই বুক করা যায়। কাফেরগাঁও যেতে হলে লোলেগাঁও থেকেই যেতে হয়। শিলিগুড়ি থেকে কাফেরগাঁও যেতে সময় লাগে প্রায় তিন ঘণ্টা। যাত্রাপথ মনোরম, আর হোমস্টের অভিজ্ঞতা একদম ঘরোয়া। শিলিগুড়ি থেকে কাফেরগাঁওয়ের জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক অপশন হল ব্যক্তিগত গাড়ি ভাড়া। আপনি চাইলে স্থানীয় ট্যাক্সি বুক করতে পারেন, ভাড়া পড়বে গড়ে ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যে, গাড়ির ধরন ও মরসুম অনুযায়ী। অনেকে কাফেরগাঁওয়ের হোমস্টেতে আগাম জানালে, তারা নিজেরাই গাড়ির ব্যবস্থা করে নেয়, যা লোলেগাঁও থেকে পর্যটকদের তুলে নেয়।
গাড়ি ভাড়ার খরচ বাঁচাতে হলে
যাঁরা কিছুটা খরচ বাঁচাতে চান, তাঁদের জন্য রয়েছে শেয়ার গাড়ির সুবিধা। শিলিগুড়ি থেকে লোলেগাঁও পর্যন্ত শেয়ার গাড়ি পাওয়া যায়, যেখানে মাথাপিছু ভাড়া ৭০০ টাকার মতো। তবে এ ক্ষেত্রেও কিছু সমস্যা থাকে, এই গাড়িগুলি নির্দিষ্ট সময়েই ছাড়ে এবং সম্পূর্ণ যাত্রী না হলে রওনা দেয় না। ফলে দেরি হয়ে যেতে পারে কাফেরগাঁও পৌঁছতে। লোলেগাঁও পৌঁছনোর পরে হোমস্টে থেকে গাড়ি পাঠিয়ে নেওয়ার সুবিধা পাওয়া যায়। তাই শেয়ার গাড়ি বেছে নিলে আগে থেকেই হোমস্টে-র সঙ্গে যোগাযোগ রাখা ভাল।
হোমস্টেতে থাকা-খাওয়ার খরচ কত?
থাকার ব্যবস্থাও যথেষ্ট আরামদায়ক। কাফেরগাঁওয়ের বেশিরভাগ হোমস্টে মাথাপিছু ১২০০ টাকায় থাকার পাশাপাশি তিন বেলার ঘরোয়া খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়। গরম ধোঁয়াওঠা ভাত, আলুভাজা, ডাল, সবজি বা দেশি মুরগির ঝোল, সব কিছুতেই মাটির গন্ধ মেলে।
ঘুম ভাঙতেই পাখির ডাক। ঠান্ডা হাওয়া আর কাঞ্চনজঙ্ঘা। ব্রেকফাস্টে ধোঁয়া ওঠা মোমো। দার্জিলিং চা। প্রকৃতি কথা বলে। কান পেতে শুনলেই হল। নীরবতাই যেখানে ভাষা।