Advertisement

Bangladesh Elections 2026: বাংলাদেশের রাজনীতি কি নতুন জটিলতায় ঢুকে যাচ্ছে? ভোট ঘিরে কেন এখনও সংশয়?

যে কারণে ছাত্রদলের কয়েক নেতা এবং বিএনপির মূল নেতা তারেক রহমান নির্বাচনে বিজয়ীদের অভিনন্দন জানালেও, একটি অংশ নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। বিএনপির কয়েক বড় নেতা, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মীদের বিপুল ভোটে ছাত্র শিবির বিজয়ী হয়েছে বলে নানান বক্তব্যে বলছেন।

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বিশ্লেষণবাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বিশ্লেষণ
Aajtak Bangla
  • ঢাকা,
  • 23 Sep 2025,
  • अपडेटेड 9:25 PM IST
  • বিএনপির সঙ্গে ছোটখাটো কিছু বাম দলও নির্বাচন চায়
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সব সময়ই দেশের রাজনৈতিক আন্দোলনে বড় ভূমিকা রাখে
  • নির্বাচন নিয়ে সংশয় আরও বেড়ে যাচ্ছে

বাংলাদেশে ফেব্রুয়ারি মাসে একটি নির্বাচন হবে বলে সরকার ঘোষণা দিয়েছে। সরকারের এ ঘোষণাকে অনেকে বিশ্বাস করেছে, অনেকে সংশয়ের মধ্যে আছে, অনেকে এ ঘোষণা সরকারের কৌশলের অংশ হিসেবে মনে করে।

ফেব্রুয়ারির এই নির্বাচন নিয়ে দেশে ৯ সেপ্টেম্বরের পূর্ব অবধি সব থেকে বেশি আগ্রহী ছিল বিএনপি। বিএনপি ছাড়া এ মুহূর্তে বাংলাদেশের ইন্টারিম সরকারের ঘনিষ্ঠ যে কয়টি রাজনৈতিক দল -তার ভেতর যারা অনেক বেশি ইন্টারিম সরকার সমর্থক, জামায়াত-এ- ইসলামী বাংলাদেশ, এবং জুলাই আন্দোলনের ছাত্রদের দিয়ে তৈরি দল- ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি) এরা এ মুহূর্তে নির্বাচন চায় না। নির্বাচন চায় না আরো কিছু ইসলামিক দল। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম এখন প্রশাসনিক আদেশে নিষিদ্ধ। বিএনপির সঙ্গে ছোটখাটো কিছু বাম দলও নির্বাচন চায়।

নির্বাচন নিয়ে এক শ্রেণীর মানুষের সংশয় ও অবিশ্বাসের বড় কারণ, সরকারের সব থেকে ঘনিষ্ঠ সমর্থক জামায়াত-এ- ইসলামী এবং সরকারে আনুকূলে তৈরি দল এনসিপি এবং কিছু প্রবাসী ডিজিটাল ইনফ্লুয়েন্সার, যাদের মুখ দিয়ে অনেক সময় আগেই সরকারের চাওয়াটা পরোক্ষভাবে বেরিয়ে আসে- তারা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চায় না। জামায়াত-এ- ইসলামী, এনসিপি ও ওই ইনফ্লুয়েন্সার গ্রুপের সমীকরণ থেকে একটি শ্রেণীর মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে সংশয়টি বাড়িয়ে তুলেছিল।

এ পরিস্থিতিতে ৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ল্যান্ডস্লাইড বিজয় পেয়েছে জামায়াত-এ- ইসলামি’র ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সব সময়ই দেশের রাজনৈতিক আন্দোলনে বড় ভূমিকা রাখে, এমনকি শেখ হাসিনার পতনের আন্দোলনের টার্নিং পয়েন্টটিও এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হয়েছিল। বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল এখানে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকলেও তারা ছাত্র শিবিরের এক তৃতীয়াংশ ভোট পায়নি।

যে কারণে ছাত্রদলের কয়েক নেতা এবং বিএনপির মূল নেতা তারেক রহমান নির্বাচনে বিজয়ীদের অভিনন্দন জানালেও, একটি অংশ নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। বিএনপির কয়েক বড় নেতা, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মীদের বিপুল ভোটে ছাত্র শিবির বিজয়ী হয়েছে বলে নানান বক্তব্যে বলছেন। এছাড়া নির্বাচনের দিন, ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের সামনে নির্বাচন নিয়ে বেশ কিছু অনিয়ম ও প্রশাসনের পক্ষপাতিত্ব তুলে ধরেন। তারপরেও এই নির্বাচনের পরে কর্মীদের মনোবল ধরে রাখার জন্য তারেক রহমান তার বিবৃতিতে বলেছেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না।

Advertisement

তারেক রহমানের এই অভিনন্দন ও নেতাকর্মীদের মনোবল ধরে রাখার আশ্বাসের বাণীর পরেও ১০ তারিখে বাংলাদেশের আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা অদূরেই তার অবস্থান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন শুরু হবার এক ঘন্টার মধ্যেই নির্বাচনে প্রশাসনের ভূমিকা ও ছাত্র শিবিরের প্রতি গোপন সহযোগিতার অভিযোগ তোলে ছাত্রদল। এরপরে ১.৩০ মিনিটে তারা সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে। এবং নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শেষ হবার দুই ঘণ্টা চার মিনিট আগে ছাত্রদল নির্বাচন বয়কট করে। নির্বাচন বয়কট করার পরে সোশ্যাল মিডিয়ার ভিডিওতে দেখা যায়, মব ভায়োলেন্স প্রতিরোধ করে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করতে হচ্ছে।

এই দুটি ঘটনার পরে বিএনপি নেতারা বাস্তবে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য রেখে যাচ্ছেন। অন্যদিকে মিডিয়ার বড় বড় সম্পাদক যারা বিএনপির সমর্থক সেই সব ব্যক্তি থেকে শুরু করে বিএনপির মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের মধ্যে ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের স্বচ্ছতা শুধু নয়, ফেব্রুয়ারির নির্বাচন নিয়ে বেশ কিছু সংশয় দেখা দিয়েছে। যেমন, সরকার আদৌ ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন দেবে কিনা, জামায়াত-এ- ইসলামী ও এনসিপির দাবি, পিআর (PR) পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণের জন্যে আইন সংস্কারের বিষয়টি আরো জোরালোভাবে সামনে আসবে কিনা - বা সরকার এই নির্বাচন পদ্ধতি বদলানোর স্বপক্ষে আরো বেশি শক্ত অবস্থানে যাবার সুযোগ পাবে? কারণ, জামায়াত ডাকসুতে বিজয়ের মাধ্যমে একটি শক্ত অবস্থান পেয়েছে। যার ভেতর দিয়ে নির্বাচনের দাবীতে থাকা বিএনপি একটা বড় ধাক্কা খেয়েছে। এমনকি ডাকসু নির্বাচনে বিজয়ের পরে জামায়াত-এ- ইসলামী’র জেনারেল সেক্রেটারি বলেছেন, জুলাই সনদ (যা মূলত জুলাই এর সরকার বিরোধী আন্দোলনকারীদের আইনত প্রটেকশন দেয়ার জন্য ঘোষিত হয়েছে)-এর রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে সাংবিধানিক ভিত্তি তৈরি ও নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তনের আগে নির্বাচন নয়।

অন্যদিকে ঠিক একই দিন বাংলাদেশের ইন্টারিম ব্যবস্থার প্রধান মুহম্মদ ইউনূস বলেছেন, লোকাল গভর্নমেন্টকে আরো বেশি ডেসেন্ট্রালাইজড (Decentralized) করতে হবে। লোকাল গভর্নমেন্টকে ডেসেন্ট্রালাইজড করার জন্য সবার আগে প্রয়োজন লোকাল গভর্নমেন্ট নির্বাচন। বর্তমানের ইন্টারিম সরকার ক্ষমতা নেবার আগে মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্য অনুযায়ী তাদের সরকারের নিয়োগদাতা জুলাইয়ের ছাত্র নেতা- যারা উপদেষ্টা হয়েছে তাদের বক্তব্য ছিল জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে হবে। জামায়াত-এ- ইসলামী’র দাবীও ছিল লোকাল গভর্নমেন্ট নির্বাচন আগে করতে হবে। তখন প্রকাশ্যে থাকা একমাত্র বড় দল বিএনপির দাবী ছিল জাতীয় নির্বাচন আগে করতে হবে। আবার যারা লোকাল গভর্নমেন্ট নির্বাচন আগে চেয়েছিল, তাদের পক্ষ থেকে ওই সময়ে একটি সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইন দেখা যায়, ইউনূস সরকারকে অন্তত পাঁচ বছর দরকার। ঠিক এ সময়ে ইউনূস জাপানের Nikkei Asia Forum-এ বক্তব্য রাখতে গিয়ে সেখানকার মিডিয়াকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, একটি দল ছাড়া এ মুহূর্তে কেউ নির্বাচন চায় না। একটি দল বলতে তিনি বিএনপিকে ইঙ্গিত করেন।

এ সময়ে বিএনপির অনেক নেতা ইউনূস সরকার বিরোধী বক্তব্য দিতে শুরু করে। কিন্তু বেগম জিয়ার নির্দেশে তা বন্ধ হয়ে যায়। ইউনূসও দ্রুত বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন এবং লন্ডন গিয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করেন। সেখানে তারেক-ইউনূস বৈঠকের পরে, বিএনপি নেতা আমির খসরু মাহমুদ ও সরকারের প্রতিনিধি খলিলুর রহমান যৌথ বিবৃতি পাঠ করেন, ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে যে কোন সময়ে নির্বাচন। এবং এর পরে ইন্টারিম ও তার ঘোরতর সমর্থকদের মুখ থেকে আর লোকাল গভর্নমেন্ট নির্বাচনের কথা শোনা যায়নি।

Advertisement

ডাকসু নির্বাচনে শিবিরের বিজয়ের পরের দিন পরোক্ষভাবে মুহাম্মদ ইউনূস আবার লোকাল গভর্নমেন্ট নির্বাচনের বিষয়টি সামনে নিয়ে এলেন। লোকাল গভর্নমেন্টকে আরো বেশি ডেসেন্ট্রালাইজড করার কথা বলে।
বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা বলে যখনই নির্বাচন ও সংবিধান বহির্ভূত কোন সরকার যখনই বাংলাদেশে ক্ষমতা নিয়েছে, এবং তাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ রাজনৈতিক শক্তি হবার ইচ্ছে দেখা গেছে- তখন তারা আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করেছে। কারণ, স্থানীয় সরকার নির্বাচন করলে ওই নির্বাচনে প্রশাসনিক প্রভাব বেশি খাটানো যায়- যার ফলে পছন্দের ব্যক্তিদের নির্বাচনে বিজয়ী করা যায়। আর তাদের মাধ্যমে হয় নতুন দল বা পছন্দের দলের ভিত্তিকে জোরদার করা যায়। ওই ভিত্তি জোরদার হলে তারপরে সেই দলকে জাতীয় নির্বাচনে নেয়া হয় এবং দুই তৃতীয়াংশ আসনে বিজয়ী করানো হয়। এর প্রয়োজনও পড়ে ক্ষমতায় থাকা ওই দল বা গোষ্ঠীর যাবতীয় কর্মকান্ডকে সাংবিধানিকভাবে বৈধতা দেবার জন্য পার্লামেন্টের দুই তৃতীয়াংশ আসনে বিজয়ী হওয়া। সাংবিধানিক বৈধতার জন্যে সংবিধানে কোন সংশোধনী আনতে এই সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন।

বিএনপিও এই প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে আসা একটি রাজনৈতিক দল। তাই তাদের পক্ষে এ ক্ষেত্রে অনেক বেশি ভবিষ্যত দেখতে পাওয়া সম্ভব। অন্যদিকে, তাদের এতদিনের মিত্র জামায়াত-এ- ইসলামী’র সঙ্গে দৃশ্যত কিছুটা দূরত্বও দেখা যাচ্ছে। জামায়াত-এ- ইসলামী অনেকটা নিজের পায়ে দাঁড়াতে যাচ্ছে।

এ সব মিলে নির্বাচন নিয়ে সংশয় আরও বেড়ে যাচ্ছে। যে সংশয় বলে, বাংলাদেশের রাজনীতি নতুন জটিলতায় প্রবেশ করছে। আর আরো অস্বচ্ছ হচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের যে প্রতিশ্রুতি বার বার পেন্ডুলামের মতো দুলছে ওই পেন্ডুলামটি।

লেখক: সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক, সম্পাদক, সারাক্ষণ, The Present World.

বিশেষ দ্রষ্টব্য : এই লেখা লেখকের নিজস্ব মত,  bangla.aajtak.in এই দায় নিচ্ছে না।

Read more!
Advertisement
Advertisement