সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ। একটা প্রহসন। কথাটা শুনলাম বাংলাদেশে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি থেকে, গোবিন্দ প্রামাণিক সহ বৌদ্ধ ভিক্ষু ও হেফাজতের প্রধান থেকে। কথাটা যে সর্বৈব মিথ্যে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ভারতীয় গণমাধ্যম কিছু কিছু খবর প্রচার করে এই প্রথম বারের মত বিশ্বকে জানিয়েছে। এখন সভ্য দেশের মানুষেরা বিশেষ করে ইংল্যান্ড ও আমেরিকার সংসদ সদস্যরাও হিন্দু নির্যাতনের বিরূদ্ধে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের অমুসলমানদের প্রতি ( মাদ্রাসার) ঘৃণা শিক্ষা , ঘৃণা থেকে আক্রোশ ও আক্রমণ, নির্যাতন, পরিশেষে নিরাপত্তার অভাবে হিন্দুদের দেশ ত্যাগ ও প্রতিবেশী দেশ ভারতে আশ্রয়। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশে হিন্দুদের সংখ্যা ৩০ শতাংশের থেকে কমতে কমতে ৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। শুনেছি বাংলাদেশে, সুন্দরবনে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা কমে যাওয়ায় বাংলাদেশ সরকার উদ্বিগ্ন। কিন্তু বিন্দুমাত্র উদ্বেগ নেই বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যা কমে যাওয়ায়।
প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলগুলি এমনকি আওয়ামী লীগ সরকারও কোনওদিন পর্যালোচনা করেনি কেন হিন্দুদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে? হিন্দু সুরক্ষায় রাজনৈতিক দল ও সমাজের বিদ্বজ্জনেরা যেমন- বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য , নির্বাচিত জেলা বা উপজেলা চেয়ারম্যান, সচিব, আইন বিভাগের কর্মকর্তা বা ধর্মগুরুরা কেউ এগিয়ে আসেনি। প্রশাসন এমনকি সৈন্যরা ও উগ্রবাদী সন্ত্রাসবাদী মুসলমানদের সঙ্গে এক জোট হয়ে হিন্দু নির্মূলের নিশানা করেছে। চট্টগ্রামে ৫ জন হিন্দুকে গুলি করে হত্যা করেছে। এর বিচার হয়েছে বা হত্যাকারীর গ্রেফতার করেছে বলে শুনিনি। সর্বক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক বৈষম্য। হিন্দুশূন্য করার নিশানায় নেমেছে।
আপনারা অনেকেই জানেন দিন তিন চারেক আগে, সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে একজন হিন্দু যুবকের নাম, আকাশের নামে কে একজন নালিশ করেছে যে মুসলমান ধর্মের অনুভূতিতে আঘাত করেছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেক হিন্দু বাড়িঘর (১০ থেকে ১২ টা পরিবারের) লুটপাট করেছে। লোকনাথ মন্দির আক্রমণ ও লুটপাট যার বিরুদ্ধে নালিশ তাঁকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। যারা এই অন্যায়ের সঙ্গে যুক্ত নয় তাদের বাড়িঘর লুটপাট কেন?
এটাকে বলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত? শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান? বেছে বেছে নিরপরাধ হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, দোকান-পাট ও মন্দির আক্রমণকে বলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি? এটা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এ রকম ঘটনা এর পূর্বে অনেক ঘটেছে। ব্রাহ্মণবেড়িয়ার নাসিরনগর উৎসব মন্ডলের উপর শারীরিক নির্যাতন ও চোখে আঘাত করা, ভৈরবে ইসকন মন্দির হামলা ও ভাঙচুর, কুমিল্লার নানুয়া দীঘির পাড়ে হিন্দু মন্দির আক্রমণ ও হিন্দু হত্যা, যশোর মন্দিরের হিন্দু পুরোহিত হত্যা, রংপুর মন্দিরের পুরোহিত হত্যা, নারায়ণগঞ্জের স্কুলের প্রধান শিক্ষক নাম শ্যামল কান্তিকে কানে ধরে উঠ-বোস করানো, যশোরের বিজ্ঞান শিক্ষকের গলায় জুতোর মালা পরানো এমন অনেক অনেক নৃশংস ঘটনা আছে যেগুলি খবরের কাগজে থাকে না। কারণ নির্যাতিতরা হিন্দু। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি? অনুভূতির ব্যাপারে শুধু হিন্দুরাই আক্রান্ত। মুসলমান মৌলবীরা হিন্দু ধর্ম নিয়ে জঘন্য নোংরা কথা বললেও মুসলমানদের বাড়িঘর ভেঙে দেওয়া, লুটপাট বা শারীরিক নির্যাতন হিন্দুরা কখনও করে না। প্রশাসন নীরব থাকে, কাউকে গ্রেফতার করে না। পক্ষান্তরে সন্ত্রাসবাদীদেরকে উস্কে দেয়।
বাংলাদেশে উগ্রবাদী সন্ত্রাসবাদীর সংখ্যা এত বেশি যে হিন্দু মন্দির রক্ষার জন্যে পাহারা দিতে হয়। ভারত বা সভ্য দেশগুলিতে মসজিদ রক্ষার জন্যে কাউকে পাহারা দিতে হয় না। উগ্রবাদী মুসলমানেরা মন্দির ধ্বংস করলেও অনুভূতিতে আঘাতের কারণে কোন হিন্দু আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে কোনও মসজিদ ধ্বংস করেনি। কারণ হিন্দু ধর্মের শিক্ষায় ঘৃণা নেই। আছে সহমর্মিতা। বাংলাদেশের কোনও পত্রিকায় বা টেলিভিশনে এই ব্যাপক হারে হিন্দু নির্যাতনের বিরুদ্ধে কোনও কথা শুনেছেন কি? শোনেননি। কারণ প্রশাসন উগ্র মৌলবাদী সন্ত্রাসবাদীদের সমর্থক। গতরাতে ঢাকার তুরাগের ধউরে হিন্দু মন্দিরে রাতে আগুন দিয়েছে। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি একটা প্রহসন। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এই ঘটনাগুলির পরিপ্রেক্ষিতে মোটেই সম্ভব না।