Advertisement

'কিশোর-লতা-হেমন্তদের পুজোর সেই গান কোথায় গেল!'

এই পুজোর গান আমি শুনে আসছি সেই ছোটবেলা তথা গেলো শতকের ষাটের দশকের শেষ ভাগ থেকে। বাবা তাঁর দুই হাতে আমার আর আমার দু’বছরের ছোট বোনের হাত আলতো চেপে ধরে বিকেলে হাঁটতে বেরুতেন। বন্দর নগরী চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ অফিস-পাড়ায় তাঁর সঙ্গে ঘোরার স্মৃতি আজও মনে পড়ে। বিশেষভাবে মনে পড়ে পূজামণ্ডপ পরিদর্শনের কথা। আগ্রাবাদ এলাকার দক্ষিণ প্রান্তে গোসাইলডাঙা এলাকার পূর্ব পাড়ায় পুকুরের পাড়ে আমাদের তিনজনের দুর্গা দেবী দর্শনের স্মৃতি এখনো অন্যরকম পুলক জাগায় সমগ্র সত্তায়।

খালেদ হামিদী
Aajtak Bangla
  • বাংলাদেশ ,
  • 12 Oct 2021,
  • अपडेटेड 8:01 PM IST
  • পুজোর সেই গানগুলো অজও অমর কেন?
  • সেসব গান জীবনের অর্থপূর্ণ আবেগকে উজ্জীবিত করে, তাই।
  • কিন্তু সেই সব গান আজ কোথায়?

হেনরি ও. লংফেলো বলেন, “Music is the universal language of mankind.” ভাষাগত বিভিন্নতাহেতু গানের বাণীর সীমাবদ্ধতা থাকলেও, বলা বাহুল্য, সুর সীমান্ত-অতিক্রমী কিংবা বিশ্বপ্লাবী। আর যদি হয় অভিন্নভাষী অথচ একাধিক ভিন দেশের নাগরিক এমন জনমণ্ডলির গান? তাহলে তো সোনায় সোহাগা। তখন যুক্তরাজ্যের জন লেনন আর যুক্তরাষ্ট্রের এলভিস প্রিসলিকে, একই ভাষাভাষী উভয়ের উচ্চারণগত পার্থক্য সত্ত্বেও, আলাদা শোনায় না। আবার গায়কীর স্বকীয়তার প্রশ্নে একই দেশের মাইকেল জ্যাকসন আর ম্যাডোনার পৃথকতাও অস্পষ্ট থাকে না মোটেও। এদিকে ভারতের বাংলা (সাবেক পশ্চিমবঙ্গ) আর বাংলাদেশের গানও, কথা ও সুরের প্রশ্নে, প্রায় অভিন্নই। উৎসবভিত্তিক গানের ক্ষেত্রে ভিন্নতা শুধু এই,- প্রতি দুর্গাপূজায় কলকাতা আর প্রত্যেক ঈদে ঢাকা থেকে নতুন গান প্রকাশিত হয়।

পুজোর গানে আলোকপাতের আগে বলে রাখা দরকার, ঈদ ও পুজোর গান কিন্তু বেশির ভাগই ধর্মীয় সঙ্গীত নয়। বিমান ঘোষ ঠিকই বলেন, “পুজোর গান। পূজার গান নয় কিন্তু। আরাধনার গান, উপাসনার গান, ব্রহ্মসঙ্গীত ইত্যাদি সাধারণ অর্থে পূজার গান। পূজা পর্যায়ের গান। আর ‘পুজোর গান’ হল শারদোৎসবে বাঙালির মন রঙিন-করা, স্মৃতি উদ্বেল-করা রেকর্ড সংগীত।” (বাঙালির পুজোর গান যেন গানের পুজো; আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন; ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭)

এই পুজোর গান আমি শুনে আসছি সেই ছোটবেলা তথা গেলো শতকের ষাটের দশকের শেষ ভাগ থেকে। বাবা তাঁর দুই হাতে আমার আর আমার দু’বছরের ছোট বোনের হাত আলতো চেপে ধরে বিকেলে হাঁটতে বেরুতেন। বন্দর নগরী চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ অফিস-পাড়ায় তাঁর সঙ্গে ঘোরার স্মৃতি আজও মনে পড়ে। বিশেষভাবে মনে পড়ে পূজামণ্ডপ পরিদর্শনের কথা। আগ্রাবাদ এলাকার দক্ষিণ প্রান্তে গোসাইলডাঙা এলাকার পূর্ব পাড়ায় পুকুরের পাড়ে আমাদের তিনজনের দুর্গা দেবী দর্শনের স্মৃতি এখনো অন্যরকম পুলক জাগায় সমগ্র সত্তায়। তা বিশেষত এই কারণেও যে, সেই পুষ্করিণী এখন আগের সংলগ্ন জায়গাসহ বিশাল মাঠে পরিণত যার পূর্ব দিকে আমার কর্মস্থল। কিন্তু অফিসে কর্মরত অবস্থায়, বিশেষ করে শরৎকালে, আমি শুনতে পাই, অর্ধ শতাব্দীরও বেশি কাল আগে থেকে পূজামণ্ডপের মাইকে প্রচারিত সেই অমর গানগুলি, লতা মঙ্গেশকর, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, কিশোর কুমার ও মান্না দেসহ আরও অনেকের অসামান্য সব গান। যেমন গীতিকাব্য, তেমন সুর। বিস্ময়কর সামঞ্জস্য। সেসব সঙ্গীত ছোটবেলা থেকে ভেসে ভেসে আসে আমার এই বয়সের তীরে। না, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আবাসন বদলায়নি। এখনো পূজা হয় আমার অফিসের সামনে, মাঠে। পাঁচ বছর আগেও কিংবদন্তি শিল্পীদের গান মাইকে শুনেছি। কিন্তু এখন দৃশ্য পাল্টেছে। বিরাট সব স্পিকারে বাজানো হয় সাম্প্রতিক বাংলা ব্যান্ড মিউজিক। তাই আমার মতো শ্রোতার মর্ম থেকে গেয়ে ওঠেন প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়ঃ স্মৃতির জানলা খুলে চেয়ে থাকি/ চোখ তুলে যতটুকু আলো আসে/ সে আলোয় মন ভরে যায়।

Advertisement

পুজোর সেই গানগুলো অজও অমর কেন? সেসব গান জীবনের অর্থপূর্ণ আবেগকে উজ্জীবিত করে, তাই। লিরিকে প্রকাশিত নারী-পুরুষের চিরায়ত সম্পর্কের আনন্দ-বেদনার সীমানা ডিঙিয়ে গানগুলোর সুর ও সংশ্লিষ্ট শিল্পীদের কিন্নর কণ্ঠের জাদু সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকল বাঙালির চিত্ত জয় করে। আরও একটি কারণে পুজোর আলোচ্যমান গান অক্ষয়, তা হলো এর মহিমান্বিত ইতিহাস। বিমান ঘোষ জানান, “তবে গ্রামোফোন কোম্পানির ঝুলিতে এবার একটা চমকপ্রদ উপহার আছে। তা হল, উস্তাদ আলি আকবর খাঁ ও পণ্ডিত রবিশঙ্করের সুরে হৈমন্তী শুক্লার একটি আধুনিক বাংলা গানের লং-প্লেইং রেকর্ড। বাণী

পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের, দুটি গানের কথা আবার রবিশঙ্করের। ঘটনাটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ আধুনিক বাংলা গানকে ফের জনপ্রিয় করে তুলতে বিশ্ববিখ্যাত ও অতিব্যস্ত দু’জন উচ্চাঙ্গ শিল্পী ফের আগ্রহী হলেন। আলি আকবর ও রবিশঙ্কর দু’জনেই গানে সুর দিতে ভালবাসেন এবং এক কালে খুব সুন্দর সুন্দর গানও তাঁরা তৈরি করেছেন। লতা গেয়েছেন আলি আকবরের সুরে, আর বহু দিন আগে আলপনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাওয়া ও আলি আকবরের সুর করা একটা গান তো অসম্ভব জনপ্রিয় হয়েছিল। [...] মাত্র দশ-এগারো বছর আগের ঘটনাও বেশ রোমাঞ্চকর। কিশোরকুমারের পুজোর গানের সুর করলেন লতা মঙ্গেশকর। আর লতার গানের সুর? কিশোরকুমার! আর একটু পিছনে গিয়ে ১৯৪১ সালের পুজো মরশুমে পৌঁছই। সে বার গিরীন চক্রবর্তীর পুজোর গান ছিল কাজী নজরুল ইসলামের ‘নারী’ কবিতাটিকে সুরারোপিত করে। বড় কবিতায় সুর দেওয়ার রীতি তখনও ছিল। কবিতার সুর সংযোজনা করলেন গিরীনবাবু নিজেই। কাজী নজরুল তার আগেই স্বকণ্ঠে রেকর্ড করেছিলেন ওই কবিতাটির আবৃত্তি।

পুজোর গান তো ইদানীং লতা মঙ্গেশকর ছাড়া ভাবাই কঠিন। শিল্পী ব্যস্ত, প্রতি বছর সম্ভব হয় না রেকর্ড করা। তাঁর সমস্ত পুজোর গানই জনপ্রিয়, তবে সলিল চৌধুরীর সুরে ওঁর গাওয়া ‘না যেও না’, ‘সাত ভাই চম্পা’ যেন কোনও দিনও পুরনো হবার নয়। যত দূর মনে পড়ে, লতার প্রথম পুজোর গান ‘রঙ্গিলা বাঁশিতে’ ও ‘মনে রেখো’ প্রকাশিত হয় ১৯৫৭ সালে। বাণী রচনা করেছিলেন পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়, সুর করেছিলেন ভূপেন হাজারিকা। তার আগেও বাংলা গান রেকর্ড করেছিলেন লতা— ‘আকাশ প্রদীপ জ্বলে দূরের তারার পানে চেয়ে’। সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের সুরে। কিন্তু সে গান পুজোর সময় প্রকাশিত হয়নি। শিল্পীর প্রথম বাংলা গানের রেকর্ড অবশ্য রবীন্দ্রসংগীতের; হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দ্বৈত কণ্ঠে জনপ্রিয় সেই দুটি নিবেদন— ‘মধু গন্ধে ভরা’ ও ‘তোমার হল শুরু’। এ গান দুটিও পুজোর গান নয়।

পুজোয় বাঙালিকে মাতিয়ে রাখেন কিশোরকুমার। কিশোরের সেই সব গান কে ভুলতে পারে? ‘এক দিন পাখি উড়ে যাবে যে আকাশে’ কিংবা ‘নয়ন সরসী কেন’। কথা মুকুল দত্ত, সুর রাহুল দেববর্মণ ও কিশোর স্বয়ং। কিশোরের কোনও কোনও গানে পাশ্চাত্য-প্রভাব থাকলেও ওঁর সহজ সুন্দর অভিব্যক্তি শ্রোতাকে বশ করে।

Advertisement

পুজোয় বাঙালি শুনতে চায় আশা ভোঁসলেকে, কারণ তিনি আমাদের উপহার দিয়েছেন ‘ফুলে গন্ধ নেই’, ‘কথা দিয়ে এলে না’, ‘কিনে দে রেশমি চুড়ি’র মতো গান। ওঁর গানের সঙ্গে সঙ্গে আমরা পেয়ে যাই রাহুলের মনোহারী সব সুর।”

(প্রাগুক্ত)

এই বাংলায়ও, সত্তরের দশকের শেষের দিকে, যার গান হাই স্কুলের ছাত্রদেরও কণ্ঠে উঠে আসে সেই মান্না দে’র কথাও (সঙ্গে অন্য কিংবদন্তি শিল্পীদের তথ্যও) শ্রী বিমান জানান এই বলেঃ “এক কালে বাঙালিকে মাতিয়ে রাখতেন অন্ধ গায়ক কৃষ্ণচন্দ্র দে, আর বিগত বহু বছর ধরে সেই পারিবারিক দায়িত্ব সম্পাদন করে যাচ্ছেন তাঁর সুযোগ্য ভ্রাতুষ্পুত্র, প্রতিভাধর গায়ক মান্না দে। তিনি বহুদিন থেকেই বম্বে নিবাসী। পুজোয় রেকর্ডের জন্য তিনি খুব চিন্তিত হয়ে পড়েন বছরের গোড়া থেকে। জনপ্রিয় তো তিনি আছেনই, আর সেই জনপ্রিয়তাকে অক্ষুণ্ণ রাখতে তাঁর চেষ্টায় অন্ত নেই। গান নির্বাচনের সময় শ্রোতার রুচির প্রতি ভয়ানক সজাগ মান্না দে। তাঁর বিশেষ পছন্দ রোমান্টিক ধাঁচ, বিশেষ করে পুজোর গানের জন্য। ওঁর গাওয়া ‘ও আমার মন যমুনার অঙ্গে অঙ্গে’, ‘ললিতা ওকে আজ চলে যেতে বল না’, ‘আমায় আকাশ বলল’, ‘দীপ ছিল শিখা ছিল’ এখনও শ্রোতার স্মৃতিতে অক্ষয়। পুজোর রোম্যান্টিক গান করার অভিলাষী মান্নাকে অনেক অনুরোধ-উপরোধে রাজি করানো গিয়েছিল ১৯৭৭-এর পুজোতে দ্বিজেন্দ্রসংগীত রেকর্ড করানোয়। সে ভাবে আমরা পেয়েছিলাম ‘ওই মহাসিন্ধুর ওপার থেকে’,

‘ঘন তমসাবৃত অম্বর ধরণী’ ইত্যাদি গান। সেই সঙ্গে জলধর চট্টোপাধ্যায়ের ‘স্বপন যদি মধুর এমন’ আর হেমেন্দ্রকুমার রায়ের ‘অন্ধকারের অন্তরেতে’। চারটি গানই বাংলা রঙ্গমঞ্চের সুবর্ণযুগের গান। কৃষ্ণচন্দ্রের স্মৃতির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে এই গানগুলি, যে কারণে মান্নার এত দ্বিধা ছিল সেগুলির পরিবেশনায়। [...] পুজোর গানকে এক কল্পলোকে উত্তীর্ণ করেছেন যে দু’জন বাঙালি তাঁদের এক জন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, অপর জন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। বাঙালির হৃদয়াসনে এঁদের চিরকালীন অবস্থান। হেমন্ত যখনই কোনও গান গেয়েছেন, তাতে হৃদয়ের পূর্ণ দরদ, মস্তিষ্কের পূর্ণ দ্যুতি মিশ্রিত করেছেন। প্রেমের কবিতার মতো উচ্চারণ করে গেছেন তাঁর গানগুলি। কী সুর, কী কথা, সর্বত্রই সতর্ক নজর হেমন্তর। ওঁর গানের যাত্রা শুরু সেই সুদূর ১৯৩৭-এ এবং সেই থেকেই ফি বছর কিছু কিছু আধুনিক, রবীন্দ্রসংগীত, (এমনকি এক বার একটি ভাটিয়ালিও) উপহার দিয়ে এসেছেন আমাদের। ১৯৪৩ সালে ওঁর ‘সেদিন নিশীথে’ ও ‘জানি জানি এক দিন’ সম্ভবত ওঁর প্রথম পুজোর গান। ১৯৪৮-এর পুজোর গান ছিল হেমন্তর ‘শুকনো শাখার পাতা’ এবং ‘প্রিয়ার প্রেমের লিপি’, যা কোনও দিন বাঙালির স্মৃতি থেকে মুছে যাবে না। আজও শুনলে মনে হয় অপূর্ব। তাতে হীরেন বসুর কথা আর অনুপম ঘটকের সুর। এর পর তো ১৯৫১ সালের পুজোর গান হিসেবে আবির্ভাব ‘রানার’-এর। সুকান্ত-সলিল-হেমন্তর কালজয়ী সৃষ্টি। তার আগে ১৯৪৯ সাল থেকে রেকর্ডের মাধ্যমে শ্রোতাদের পরিচয় ‘গাঁয়ের বধূ’-র সঙ্গে। ১৯৫২-য় ফের শোনা গেল ‘পাল্কি চলে’। কথা কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের, সুর, বলাই বাহুল্য, সলিলের। এর পর পুজোর গানে হেমন্ত-সলিল জুটি একটি প্রতিষ্ঠান হয়ে যায়।

সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের প্রথম পুজোর গান ১৯৪৮ সালে। ‘কার বাঁশি বাজে’ আর ‘কেন তুমি চলে যাও গো’। দুটি গানই পবিত্র মিত্রর লেখা এবং সুধীরলাল চক্রবর্তীর সুরে। যত দূর জানি শিল্পীর প্রথম গানের রেকর্ড ১৯৪৫-এ। ১৯৫০ সালে কমল ঘোষের কথায় আর রবীন চট্টোপাধ্যায়ের সুরে ‘ওগো মোর গীতিময়’ দারুণ সাড়া জাগায়। আর ১৯৫৩-র পুজোতে যে দুটি গান গাইলেন সন্ধ্যা, তা এক কথায় ঐতিহাসিক, বাংলা আধুনিক গানের দুটি হিরের টুকরো। প্রথম গান কবি বিমলচন্দ্র ঘোষের কথায় ও সলিল চৌধুরীর সুরে অবিস্মরণীয় ‘উজ্জ্বল এক ঝাঁক পায়রা’। আর দ্বিতীয়টি সলিলেরই কথায় ও সুরে ‘আয় বৃষ্টি ঝেঁপে’।” (প্রাগুক্ত)

Advertisement

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত বছর বাংলা গানের সম্রাট হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের জন্মশতবর্ষ উদযাপিত হয় কলকাতায় (হয়তো সাড়ম্বরে নয়)। আমার অকৃত্রিম সঙ্গীতপ্রেমী বন্ধু এনামুল কাদের খান সারোয়ার ( পেশাঃ অতিরিক্ত সচিব, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার), একজন প্রচারবিমুখ গায়ক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক সঙ্গীত-গবেষক, হেমন্তর গাওয়া দুর্লভ কিছু গানও সম্প্রতি আমাকে শোনান। আমরা এখনো শুনি ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য ও তাঁর প্রতিভাধর ভাই পান্নালাল ভট্টাচার্যসহ মৃণাল চক্রবর্তী, নির্মলা মিশ্র, উৎপলা সেন, সুপ্রীতি ঘোষ, অনুপ ঘোষাল, মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, অজয় চক্রবর্তী, সুপ্রকাশ চাকী, জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, গীতা দত্ত এবং আরও আরও শিল্পীর অসামান্য সব গান। রবীন্দ্রসঙ্গীতের অপার ভুবন তো রয়েছেই। সারোয়ার সম্প্রতি ম্যাসেঞ্জারে আমাকে লেখেনঃ ‘চট্টগ্রামে দুর্গা পূজার সময় সারা শহর গানে গানে মুখরিত থাকত। বাংলা বাজারের বাসায় যেসব গান একেবারে কমন থাকত সেসবের কয়েকটি পাঠালাম। বিশেষ করে সুপ্রীতি ঘোষের বাজলো তোমার আলোর বেণু... গানটি তো এখনো অনিবার্য।’ প্রসঙ্গত অবশ্যউল্লেখ্য, হেমন্তর গাওয়া ‘তুমি যাবার পর মনে হলো’ গানটা, সারোয়ারের মতো আমারও প্রথম শোনা হয় সম্প্রতি। সেই সাথে ফের ইতিহাস প্রসঙ্গে বিমান ঘোষের ভাষায় বলতে হয়, “পুজোর পরিবেশের সঙ্গে সতীনাথ মুখোপাধ্যায়, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, উৎপলা সেন, আলপনা বন্দ্যোপাধ্যায়, তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ইলা বসু, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় প্রমুখের আধুনিক এমন মিলেমিশে থাকত যে ওই গান রেডিয়োর ‘অনুরোধের আসর’-এ বেজে যেন দেবীর আবাহন করত। সতীনাথ, মানবেন্দ্র, শ্যামলের সেই সব রোম্যাান্টিক বাংলা গান আজও সেই প্রথম দিনের মতো নতুন।

পুজোকে একটা ভিন্ন স্বাদ দিয়েছে ভূপেন হাজারিকার গানও, যা সারা বছরের উপযোগী এবং বরাবরের মতো সংরক্ষণযোগ্য। পুজোয় চাহিদা আছে অনুপ ঘোষালের, যিনি নানান রকম গান গেয়ে পুজোকে জমজমাট রাখেন। এবং পুজোর আরতি ছাড়া যেমন পুজো অসম্পূর্ণ, তেমনই আরতি মুখোপাধ্যায়ের গান ব্যতীত বাঙালির পূজো পূর্ণ নয়। আর এই এক শিল্পী—আরতি মুখোপাধ্যায়। কী কণ্ঠ। কী সুর। আর কত রকম যে গাইতে পারেন। বাঙালির খুব প্রিয় গায়িকা তিনি।” (প্রাগুক্ত) শেষে ভূপেন হাজারিকার রাজনৈতিক অবস্থান বদলে গেলেও তাঁর এই গান কখনো ভুলবার নয়ঃ ‘ব্যক্তি যদি ব্যক্তিকেন্দ্রিক/সমষ্টি যদি ব্যক্তিত্বরহিত/তবে শিথিল সমাজকে ভাঙো না কেন/ও গঙ্গা তুমি গঙ্গা বইছো কেন...’

আরেকটি ঐতিহাসিক তথ্য পুজোর গানের আনন্দকে ত্বরান্বিত করে, প্রাগুক্ত গদ্যে বিমান যেমন জানানঃ “১৯৭৭— পুজোর গানের মহলে বিশাল চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল একটি ইপি রেকর্ড। সে বছর বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় গাইতে এসে তুমুল উত্তেজনার সৃষ্টি করেছিলেন রুণা লায়লা। ইপি ডিস্কটি তাঁর। ইনডোর স্টেডিয়ামে রুণার প্রোগ্রামের পর শহর তোলপাড়, সবাই চাইছে তাঁর আরও প্রোগ্রাম, আরও গান। অতএব অবধারিতভাবে আমরাও চাইলাম তাঁর করা একটি ডিস্ক। আমাদের রেকর্ডিং বিভাগের এক কর্তাব্যক্তি যোগাযোগ করলেন রুণার সঙ্গে দমদম স্টুডিয়োতে, কিন্তু রুণা কিছুতেই রাজি নন। আমাদের লোকটিও নাছোড়বান্দা। অবশেষে রাজি হতেই হল গায়িকাকে এবং আমরা পেলাম চারটি অনবদ্য গান। যার মধ্যে ‘সাধের লাউ বানাইল মোরে বৈরাগী’ অচিরে ঘুরতে লাগল জনগণের ঠোঁটে ঠোঁটে।” এই ঘটনায় দুই বাংলার সাঙ্গীতিক বিশ্বভাষা প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

যতো দূর জানা যায়, ১৯১৪ সাল থেকেই পুজোর গানের সূচনা। “তাছাড়া, বিশ ও তিরিশের দশকে পুজোর সময় প্রকাশিত গানে পাওয়া গেল অবিস্মরণীয় কিছু শিল্পী। যাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম আশ্চর্যময়ী দাসী, আঙ্গুরবালা, ইন্দুবালা, কৃষ্ণচন্দ্র দে, পঙ্কজ কুমার মল্লিক, কমল ঝরিয়া ইত্যাদি। [...] দেশাত্মবোধক গানও তখন পুজোর গানের রেকর্ডে জায়গা পেত। ১৯৩৮ সালের পুজোয় দিলীপকুমার রায় রেকর্ড করেন ‘বন্দেমাতরম’ ও ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা’, ১৯৪৭ সালের পুজোয় করেন ‘বঙ্গ আমার জননী আমার’ ও ‘ধাও ধাও সমরক্ষেত্রে’। ১৯২৫-এর পুজোয় নজরুলের গানের প্রথম রেকর্ড ছিল ‘জাতির নামে বিজ্জাতি’, গানটি গেয়েছিলেন হরেন্দ্রনাথ দত্ত। এর আগেও ১৯২২-এর পুজোতে প্রকাশিত হয় ‘সেকালের বাংলা’, ‘চরকার গান’ও ‘দেশ দেশ নন্দিত করি’। দিলীপ কুমার রায়ের পুজোর গানের রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল আগেই; ১৯২৫ সালে ‘ছিল বসি সে কুসুমকাননে’-(কীর্তন) ও ‘রাঙ্গাজবা কে দিল তোর পায়ে’-(মিশ্র সিন্ধু), গান দু’টির রেকর্ড খুবই উল্লেখযোগ্য। দিলীপ কুমার রায়ের গানের প্রসঙ্গে আরেকটি নাম এসেই পড়ে; তিনি উমা বসু। দিলীপ কুমারের কথা ও সুরে ১৯৩৯ সালে উমা বসুর পুজোর গান ‘জীবনে মরণে এস’ সুপারহিট। সে কালে পুজোর গানে অন্যান্য গানের মতোই রেকর্ড হত অতুলপ্রসাদ সেনের গানও। ১৯২৫-এর পুজোয় বিখ্যাত শিল্পী সাহানা দেবীর গাওয়া ‘কত গান তো গাওয়া হল’ ও ‘শুধু দুদিনেরি খেলা’ জনপ্রিয় হয়েছিল। বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী কনক দাস ১৯৩২-এ পুজোর গানে রেকর্ড করেন অতুলপ্রসাদের দু’টি গান।” (সূত্রঃ কবে থেকে কিভাবে শুরু হয়েছিল পুজোর নতুন বাংলা গান; তপন মালিক; asianet news বাংলা; ১৭ অক্টোবর ২০২০)

Advertisement

খুব সংক্ষেপে আরেকটি ব্যক্তিগত স্মৃতি উল্লেখ না করলেই নয়। চট্টগ্রামের রহমতগঞ্জে, নানাবাড়ির উল্টোদিকে, ‘জে. এম. সেন হল’ মাঠে অনুষ্ঠিত সরস্বতী পূজা ও দুর্গোৎসব আমার হাই স্কুল এবং কলেজের ইন্টারমিডিয়েট পর্যায় পর্যন্ত আমাকে চুম্বকের মতো টেনে রাখে প্রায়। নানাবাড়ি কিছুদিনের জন্যে বেড়াতে গেলে, কমপক্ষে ছয় ফুট দীর্ঘ ও আড়াই ফুট চওড়া অফ হোয়াইট একটা পাতলা কম্বলকে ধুতি হিসেবে পরতাম। নানাভাই তা দেখে সানন্দে বলতেনঃ ‘ব্রাহ্মণের নাতি! ব্রাহ্মণের নাতি!!’ নানাবাড়ির দু’পাশেই ছিলো দুই সনাতন ধর্মাবলম্বী পরিবারের নিজস্ব আবাসন। এখন সেই দৃশ্যপট বদলে গেলেও ওই মাঠে পূজা-অর্চনা আজও অব্যাহত রয়েছে। আমার মাও শুরু থেকেই অসাম্প্রদায়িক। বোনের স্কুলের হিন্দু নারী দপ্তরি

এলে মা তাঁকে বাড়ির গাছের নারিকেল উপহার দিতেন। চা-নাশতা খেয়ে বিদায় নেয়ার সময় তাঁকে টাকাও দিতেন। কপালে সিঁদুর, পরনে নীল বা সবুজ পাড়ের শাড়ি, সেই সমীহ-জাগানিয়া চেহারার নারী আমার মায়ের সঙ্গে বিদায়ী কোলাকুলিও করতেন। চট্টগ্রামে মায়েদের আলিঙ্গন পুরুষদের কোলাকুলির মতো ছিলো না। তাঁরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরতেন বুকের একপাশ থেকে। একজনের ডান, অপরজনের বাম বক্ষ এক হতো। মনে পড়ে, সেই দপ্তরি আসতেন পূজার আগে নয়, ঈদের আগে, রমজান মাসে। আসলে ভাষা, সঙ্গীত এবং সংস্কৃতিই মানুষকে মেলায় অন্য কিছু নয়। যদিও, অর্থনীতিই সবকিছুর মূল নিয়ামক।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি, জাতির পিতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে চার মূল নীতির ভিত্তিতে দেশ শাসন করতে শুরু করেন ধর্মনিরপেক্ষতা সেগুলোর একটি, পরে যা আক্রান্ত হয়। তবুও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু-কন্যা, জননেত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে আমরা সকল সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব পালনের উদার ও মনোরম পরিবেশ ফিরে পেয়েছি। দুর্গা পূজার দিন ঘনিয়ে আসছে। কাশবনে জেগেছে সফেদ তরঙ্গ। শুভবোধের আনন্দসঞ্চারী এই বাতাবরণে মনে পড়ছে আরেক অসামান্য বক্তব্য ও স্মৃতি, আমার নয়, মুক্তিযোদ্ধা ও লেখক অজয় দাশগুপ্তরঃ “ধর্ম যার যার, উৎসব সবার এ কথার তাৎপর্য দুর্গাপূজার মতো আর কোনো উৎসবে উপলব্ধি করা যায় না। হিন্দু-মুসলিম-খ্রিস্টান-বৌদ্ধ ধর্মের সামাজিক ও পারিবারিক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সব ধর্মের নারী-পুরুষ-শিশু অংশ নিলেও দুর্গাপূজার মতো তার ব্যাপ্তি নয়। এর একটি কারণ হতে পারে এই পূজা চলে টানা পাঁচদিন। গ্রামীণ জীবনের দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অন্য ধর্মের অনুসারী এমন নারী-পুরুষ কমই মিলবে, যারা শৈশবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িতে গিয়ে নারিকেলের নাড়ু, মুড়ি-খৈয়ের মোয়া আর লুচি-ভাজি খায়নি। এ সব যে জীবনেরই অংশ।

Advertisement

অন্যদিকে, ঈদের সময় হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা যায় মুসলিম বন্ধুদের বাড়িতে। আমার শৈশবের কথা বলতে পারি, বরিশালের গৈলায় শৈশব কেটেছে। বাবা সত্যরঞ্জন দাশগুপ্ত আমাদের তিন ভাইকে প্রতি ঈদে যেতেন তার মুসলিম বন্ধুদের বাড়ি। এক বাড়ি খেয়েই পায়ে হেঁটে আরেক বাড়ি।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে যাই আমরা তিন ভাই। সেসময় এলাকার অনেক মুসলিম পরিবার বাবা-মাকে আশ্রয় দিয়েছে। তিন মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে আশ্রয় দেওয়ার প্রচণ্ড ঝুঁকি ছিল। রাজাকাররা কেবল হুমকি দেয়নি, আক্রমণের ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু দুষ্টবুদ্ধির লোকদের কাছে তারা হার মানেনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় দুর্গা পূজায় ছিলাম ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পালাটোনা নামের এক বনে।” (সূত্রঃ একাত্তরে দুর্গা মন্দিরে; চ্যানেল আই অনলাইন; channelionline.com; ৫ অক্টোবর ২০১৯)

আমাদের ইতিহাসের বিশেষভাবে স্মরণীয় সোনার চাবি এই ঘটনায় নিহিতঃ “আশপাশের শরনার্থী শিবিরগুলোতে দুর্গা পূজা হচ্ছে। যারা যেতে ইচ্ছুক, তাঁর পেছনে লাইনে যেন দাঁড়িয়ে যাই। আমরা প্রায় একশ’ জন তাঁর অনুগামী হই। পালাটোনার বনের আশপাশে যে বাংলাদেশ থেকে আসা শরনার্থীদের শিবির রয়েছে, সেটা জানা ছিল না। প্রকৃতপক্ষে, ট্রেনিংয়ে আসার পর এই প্রথম আমাদের মুক্ত জীবনের স্বাদ মিলল।প্রথম মন্দিরে গিয়েই আমরা অভিভূত। দেবী দুর্গার দশ হাতে দশ অস্ত্র, যে হাতে অসুরকে বিদ্ধ করা লেজা বা বল্লম। সে হাতেই ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি। আমাদের ব্যারাকের মাইকে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বাজানো হয়। কিন্তু অনেক দিনের মধ্যে এই প্রথম বঙ্গবন্ধুর ছবি দেখলাম। সেটাও আবার মন্দিরে, যেখানে পবিত্র আচার-অনুষ্ঠান মেনে পূজা হচ্ছে! চোখ দিয়ে জলের ধারা নেমে এলো। মন্দির দর্শনে

বের হওয়া আমাদের দলের প্রায় সকলে মুসলিম ধর্মাবলম্বী। তারাও অভিভূত। [...] সব মন্দিরেই দেবী দুর্গা ও অন্য দেবদেবীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ছবি। যুগ যুগের সংস্কার কীভাবে ভেঙে গেল, সাহস করে দুয়েকজনকে এ প্রশ্ন রাখি। উত্তর অভিন্ন। মানুষের মনে জাতির পিতা যে সুউচ্চ অবস্থানে অধিষ্ঠিত। তিনি একটি দেশের জন্ম দিয়েছেন। বাঙালির স্বপ্ন-আশা আবর্তিত হচ্ছে, পরিপূর্ণতা পাচ্ছে তাকে কেন্দ্র করেই। মন্দিরে মন্দিরে পাকিস্তানের কারাগার থেকে তাঁর মুক্তির জন্য প্রার্থনা করা হয়।” (প্রাগুক্ত)

কবিতা, সঙ্গীত, সাহিত্য ও শিল্পের কিছুই তো ইতিহাস-বিচ্ছিন্ন নয়। উপরে ঘটনাপুঞ্জের উল্লেখ সেজন্যেই। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের গানে কলকাতার স্বনামধন্য গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীতশিল্পীদের অবদান চিরস্মরণীয়। মুক্তিযুদ্ধের আগে, নানা সময়ে জেলখানা থেকে ফিরে বঙ্গবন্ধু পান্নালালের ‘মা আমার সাধ না মিটিল, আশা না পুরিল’ গানটা শুনতেন (সূত্রঃ রেজাউর রহমান খান পিপলু নির্মিত প্রামাণ্য চিত্র Hasina: A Daughter’s Tale) মনে পড়ে। গান কোথায় নেই? কবিতা যেহেতু থাকে মনে আর এই মন সর্বত্র যায় বলে কবিতাও সর্বত্র থাকে গানও তদ্রূপ। ফ্রেডারিক নীৎসে বলেন, সঙ্গীত না থাকলে জীবন হয়ে উঠবে একটা ভুল। ঈদ, পূজা, পুজো এবং অন্য সব ধরনের গানই এ ক্ষেত্রে বিবেচ্য। প্লেটো ঢের আগে বুঝতে পারেন সঙ্গীতের অনিবার্যতা এই ব’লেঃ “Music gives a soul to the universe, wings to the mind, flight to the imagination, and life to everything.”

(মতামত লেখকের একান্তই নিজের, আজতক বাংলা এর দায়ভার নেবে না)
 

Read more!
Advertisement

RECOMMENDED

Advertisement