Advertisement

অধর্মকারীরা যতই ক্ষমতাবান এবং প্রভাবশালী হোক না কেন তাদের বিনাশ ঘটবেই

মনে পড়ে ছোটবেলায় শারদীয়া পুজোর আগমনী বার্তায় আমাদের ঝিমিয়ে পড়া একঘেঁয়েমি স্কুলে দৈনন্দিন পাঠ্যবই বাধ্যতামূলক পড়াশুনার মাঝে হঠাৎ সবার মন আনন্দে নেচে উঠত।

আপনার পক্ষআপনার পক্ষ
Aajtak Bangla
  • নিউ ইয়র্ক,
  • 17 Oct 2023,
  • अपडेटेड 4:18 PM IST

মনে পড়ে ছোটবেলায় শারদীয়া পুজোর আগমনী বার্তায় আমাদের ঝিমিয়ে পড়া একঘেঁয়েমি স্কুলে দৈনন্দিন পাঠ্যবই বাধ্যতামূলক পড়াশুনার মাঝে হঠাৎ সবার মন আনন্দে নেচে উঠত। নতুন চকচকে রঙিন কাপড় পরিধানে এক শুভ্র আনন্দ। সঙ্গে সুস্বাদু মুচমুচে মুড়ি আর চিড়ের মোয়া, আরও থাকবে নারকেলের নাড়ু আর ক্ষীরের সন্দেশ। আনন্দ এখানেই থেমে নেই, বয়োজ্যেষ্ঠদেরকে প্রণাম করার পর মাথায় হাত দিয়ে ধান-দুর্বা দিয়ে দীর্ঘায়ু হওয়ার আশীর্বাদ ও হাসি মুখে কড়কড়ে কয়েক টাকা হাতে গুঁজে দেওয়া। মনে হত যেন হঠাৎ করে স্বর্গ দোড়গোড়ায় হাজির হয়েছে। সবার মুখে হাসি। রাগ করতে যেন সবাই কয়েক দিনের জন্যে ভুলে যেত। 
     
সব ভাই, ত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা মন্দিরে গিয়ে সমবেত হতাম। মন্দিরকে বিভিন্ন রঙিন ফুল দিয়ে সাজানো হত। পরিবেশটা হয়ে উঠত মনোমুগদ্ধকর। দেবী দুর্গার দিকে তাকিয়ে বিজয়ী হাসি আর দশ হাতে দশটি অস্ত্র সবার দৃষ্টি কেড়ে নিত। অসুরের দিকে তাকাতে ভাল লাগত না। শিশুমনে বুঝতে পারতাম দেবী দুর্গা তার অসীম শক্তি দিয়ে কুৎসিত অসুরকে বধ করেছে। ঢাকের আওয়াজ আরও আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি করত। ঢাকের তালে তালে পঞ্চপ্রদীপের আরতি সবার মনকে ছন্দময় করে তুলত। 

অসুরদের রাজা রম্ভা ব্রহ্মার বর পেয়ে নিজেকে শক্তিশালী ও স্বেচ্ছাচার রাজা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছে। যা খুশি  তাই করছে। সামাজিক নিয়মকানুন ও শৃঙ্খলাবোধকে পায়ের তলায় পিষে প্রতিনিয়ত নিরীহ প্রজাগণের ওপর অত্যাচার করে চলেছে। মর্ত্যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। মহিলাদের প্রতি নোংরামি এবং সমাজে বিশৃঙ্খলা ও অসভ্যতার চূড়ান্তে পৌঁছে গেছে। দেবতারা কিছু করতে পারছে না এই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে। সবাই অতিষ্ঠ। অসুর রম্ভা ব্রহ্মার কাছে অমর বড় চেয়েছিল। কিন্তু ব্রহ্মা অমর বড় দিতে অস্বীকার করে। ব্রহ্মা রম্ভার তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে আশীর্বাদ করেছিল যে, কোনও পুরুষ রম্ভাকে হত্যা করতে পারবে না।  ভবিতব্য করেছিল রম্ভার মৃত্যু হবে কোনও নারীর হাতে। আনন্দে রম্ভা দিশেহারা ও আত্মহারা হয়ে পরে। কারণ, অনুমান করে নিয়েছিল যে কোনও নারী তাঁকে হত্যা করতে পারবে না। নারীরা স্বভাবতই শারীরিক দিক থেকে দুর্বল আর রম্ভা শারীরিক শক্তিতে অপরাজেয়। সব দেবতারা অসুরদের এই অত্যাচারের অভিযোগ নিয়ে ব্রহ্মার শরণাপন্ন হয়।  এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্বর্গের দেবতারা সম্মিলিতভাবে সভার আয়োজন করে। 

Advertisement

ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব একত্রে তিন শক্তি মিলিয়ে নারীর রূপে দেবী দুর্গাকে সৃষ্টি করে। মর্ত্যে দুর্গার আবির্ভাব ঘটে ও অসুরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। দুর্গা দশ দিক থেকে অসুরদের আক্রমণ করে। অসুরদেরকে বধ করার পর তাদের রক্ত মাটিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও অসুরদের জন্ম হওয়ায় দেবী দুর্গা পেরে উঠতে পারছিল না। দেবতারা মা কালীকে সৃষ্টি করে। কালী অসুরদের রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই পান করে এবং বংশ বৃদ্ধি করতে না দিয়ে অসুরদের নির্বংশ এবং নিশ্চিহ্ন করে। অবশেষে দেবতাদের হাতে অসুরদের বিনাশ হয়। 
       
জানা যায়, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পূর্ব রাতে যখন অর্জুন নিদ্রাহীন অবস্থায় সময় কাটাচ্ছিল, খুব বিচলিত হয়ে পড়েন তিনি।  বাসুদেব কৃষ্ণ এসে অর্জুনের সামনে এসে বলে, একটা কর্তব্য বাকি রয়ে গেছে। অর্জুন জিজ্ঞাসা করে কী কর্তব্য করা হয়নি? বাসুদেব কৃষ্ণ তার জবাবে জানান, যুদ্ধযাত্রার পূর্বে অসুরবিনাশিনী দেবী দুর্গার আশীর্বাদ গ্রহণ অত্যন্ত আবশ্যক। পার্থ তুমি দেবী দুর্গাকে স্মরণ করে তার আশীর্বাদ প্রার্থনা করো। 

প্রার্থনায় দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে। দেবী দুর্গা বলেন,"হে অর্জুন, আমার শরণাপন্ন হওয়ার হেতু ব্যক্ত করো" অর্জুন আসন্ন মহাযুদ্ধের কথা বলেন এবং আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন।  দেবী দুর্গা বলেন, "জগতের বুকে অশুভ শক্তির দমন করে মঙ্গল প্রতিষ্ঠা হবে। তিনি অর্থাৎ ভগবান যেই পক্ষে থাকে ধর্ম সেই পক্ষেই অবস্থান করে। যারা ধর্মের পথের পথিক তাদের পরাজয় কখনওই সম্ভব নয়। জগতের বুকে ধর্ম স্থাপনের জন্য যুগে যুগে নানা রূপে তার আবির্ভাব ঘটে। তার লক্ষ্য পূরণ হবে তোমাদের মাধ্যমে। আমি তোমাদের প্রতি সদা সদয় থাকব। তোমাদের মঙ্গল হোক।" 

এই যুদ্ধের মাধ্যমে জগতের বুকে এক বিশাল যুগ পরিবর্তন ঘটেছে। দেবী দুর্গা এবং কালী ছিল এই যুদ্ধের মধ্যমণি। যুদ্ধে সমগ্র মনুষ্য জাতির হৃদয়ে একটি মাত্র ধারণাকে চিরস্থায়ী স্থান করে দিয়েছে তা হলো অধর্ম এবং অধর্মকারীরা যতই ক্ষমতাবান এবং প্রভাবশালী হোক না কেন তাদের বিনাশ ঘটবেই। ধর্ম এবং ন্যায়ের জয়  হবেই হবে।

Read more!
Advertisement
Advertisement