Advertisement

গঙ্গাবক্ষে ভেসে এসেছিল কাঠামো, সেই থেকেই পুজো দেবগ্রাম রাজবাড়িতে

এই পূর্ণচন্দ্র রায়চৌধুরীর পুত্র সদাশিব রায় চৌধুরী যখন স্বপ্নাদেশ পেলেন, যে গঙ্গাবক্ষে এক দুর্গাপুজোর কাঠামো ভেসে এসেছে, তখন থেকেই এ বাড়িতে দুর্গাপুজো শুরু হয়। ওই কাঠামোটি আজও দেবগ্রাম রাজবাড়ির নাটমণ্ডপে রাখা আছে।

অর্ঘ্য রায় চৌধুরী
Aajtak Bangla
  • কলকাতা ,
  • 12 Oct 2021,
  • अपडेटेड 12:56 PM IST
  • পূর্ণচন্দ্র রায়চৌধুরীর পুত্র সদাশিব রায়চৌধুরী যখন স্বপ্নাদেশ পান
  • জানেন, গঙ্গাবক্ষে এক দুর্গাপুজোর কাঠামো ভেসে এসেছে
  • সেই থেকেই দেবগ্রাম রাজবাড়িতে দুর্গাপুজো শুরু হয়

ত্রিপুর গুপ্ত শর্মার নাম ইতিহাস জানে না, জানার কথাও না, কিন্তু ত্রিপুর গুপ্ত শর্মার পৌত্র পূর্ণচন্দ্র গুপ্ত শর্মা যখন ভাগ্যান্বেষণে ঢাকা থেকে যশোর এলেন, তখন যশোরাধিপতি প্রতাপাদিত্যের দোর্দণ্ড প্রতাপ, এবং সে প্রতাপ এতটাই, যে দিল্লির মসনদ অবধি তাঁর নাম পৌঁছে গেছে, যার ফলশ্রুতি মান সিংহের বঙ্গদেশ আক্রমণ। সেই আক্রমণের ফলশ্রুতিতে যশোর বিধ্বংস হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু ততদিনে ত্রিপুর গুপ্ত শর্মার পৌত্র পূর্ণচন্দ্র রায় চৌধুরী দশ হাজার সৈন্যের অধীপতি, এবং মহারাজ প্রতাপাদিত্যের আদেশে ওই দশ হাজার বাঙালি সৈন্য নিয়ে মুঘল সেনাপতি মানসিংহের মুখোমুখি হওয়ার দুঃসাহস দেখিয়ে ফেলেছেন, ও মুঘল ফৌজকে বুদ্ধিবলে নাকানিচোবানিও খাইয়েছেন। যার ফলশ্রুতি হিসাবে যশোরাধিপতি তাঁকে "রায় চৌধুরী" উপাধি, এবং এক বিস্তীর্ণ ভূখণ্ডের অধিপতি হিসাবে বেশকিছু জায়গিরও প্রদান করেন। 

কিন্তু স্বয়ং যশোরেশ্বরীও মানসিংহের হাত থেকে যশোরকে রক্ষা করতে পারেননি। মুঘল ফৌজ যশোর অধিকার করলে পূর্ণচন্দ্র রায় চৌধুরীকে আবারও ভাগ্যান্বেষণে পাড়ি দিতে হয়েছিল মুর্শিদাবাদ, এবং নবাবী দরবার যশোরাধিপতির এই বিশ্বস্ত সেনাপতিটিকে নিরাশ করেনি। যে কারণে নদীয়ার লক্ষহীরা গ্রাম, যেটা এখন দেবগ্রাম বলে পরিচিত, এবং পলাশী ও কালীগঞ্জ অঞ্চলের এক সুবিশাল ভূখণ্ড ত্রিপুর গুপ্তের পৌত্র পূর্ণচন্দ্র রায় চৌধুরীর অধিকারে এসেছিল, এবং ওখানেই তিনি এক সুবিশাল প্রাসাদ নির্মাণ করেছিলেন, যেটি আজও দেবগ্রাম রাজবাড়ি বলে পরিচিত। এই রাজবংশ ত্রিপুর গুপ্ত শর্মার নাম অনুসারে ত্রিপুর বংশীয় বলে পরিচিত হন। দেবগ্রামেই পূর্ণচন্দ্র রায় চৌধুরী জীবনের শেষ দিনগুলো কেটেছিল।

দেবগ্রাম রাজবাড়ি

এই পূর্ণচন্দ্র রায় চৌধুরীর পুত্র সদাশিব রায় চৌধুরী যখন স্বপ্নাদেশ পেলেন, যে গঙ্গাবক্ষে এক দুর্গাপুজোর কাঠামো ভেসে এসেছে, তখন থেকেই এ বাড়িতে দুর্গাপুজো শুরু হয়। ওই কাঠামোটি আজও দেবগ্রাম রাজবাড়ির নাটমণ্ডপে রাখা আছে।  

Advertisement

দুর্গামূর্তিরও কয়েকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল। দুই ভাগে ভাগ করা চালচিত্রের চওড়া অংশের ওপরের দিকে লক্ষী সরস্বতী, এবং নীচের দিকে কার্তিক গনেশ। মাঝখানে সিংহের পিঠ থেকে চোদ্দ পোয়ার দুর্গামূর্তি। লক্ষী, সরস্বতী এবং কার্তিক, গণেশ আট পোয়া করে। 

এই পরিবারের কূলদেবতা স্বপ্নাদিষ্ট বাবা বুড়োশিব এবং মা ভূবনেশ্বরী। বাবা বুড়োশিব নিজের আসনে অধিষ্ঠিত থাকলেও পরমা বৈষ্ণবী মা ভূবনেশ্বরী দুর্গামূর্তির সঙ্গেই পূজিতা হন। বাবা বুড়োশিবকে আসন থেকে তোলার নিয়ম নেই। শুধুমাত্র চৈত্র সংক্রান্তির দিন নীলের সময় তাঁকে দেবগ্রাম অঞ্চলের বিখ্যাত গাজনের মেলায় নিয়ে যাওয়া হতো। তাও কোনো এক বছর ইনি রুষ্ট থাকার কারণে ছোট্ট এই শিবলিঙ্গকে একাধিক বলশালী ব্যক্তির বহুল প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আসনচ্যুত করা যায়নি। 

দেবগ্রাম রাজবাড়ির পুজো


পরমা বৈষ্ণবী মা ভূবণেশ্বরী দেবগ্রাম রাজবাড়ির বাড়ির কূলদেবী হওয়ার কারণে রাজবাড়ির পুজোয় পশুবলি নিষিদ্ধ। শুধুমাত্র নবমীর দিন আখ, এবং চালকুমড়ো বলি হয়ে থাকে।

এখন দেবগ্রাম রাজবাড়ির ভগ্নদশা, পাতাল ঘর সমেত চল্লিশটি ঘরের মধ্যে মাত্র দশটি ঘরই টিকে আছে। পরিবারের সদস্যরা প্রায় সকলেই বাইরে, তাঁরা পুজো অথবা নীলের সময় রাজবাড়িতে এসে থাকেন, কিন্তু পরবর্তী প্রজন্ম পারিবারিক ঐতিহ্য মেনে পুজোটিকে এখনও নিষ্ঠার সঙ্গে প্রতিবছর নিয়ম মেনে করে চলেছেন।

(মতামত লেখকের একান্তই নিজের, আজতক বাংলা এর দায়ভার নেবে না)
 

Read more!
Advertisement

RECOMMENDED

Advertisement