কথাতেই আছে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ, সেই মত ১৪৪ বছরের মহাকুম্ভে সাহি স্নানে ২৯ই জানুয়ারি মৌনি অমাবস্যায় যোগ দিতে মা, প্রিয় বন্ধু অভীক আর আমার প্রাণ প্রিয় মোহনবাগানকে সঙ্গে নিয়ে পথ শুরু করেছিলাম হাওড়া থেকে। এমন অব্যবস্থার মধ্যে পড়তে হবে তা স্বপ্নেও ভাবিনি।
ট্রেনের টিকিটের সমস্যা তো ছিলই, ততকাল ওয়েটিং লিস্টের টিকিট কনফার্ম না হওয়ায়,জেনারেল টিকিট কেটে কোনো রকমে স্লিপার কোচে চেপে উঠে পড়লাম বিভূতি এক্সপ্রেসে। মাকে ভিতরে পাঠিয়ে দিয়ে আমি আর অভীক ছিলাম কোনও রকমে বাথরুমের কাছে। দুই কামরার সংযোগস্থলে দাঁড়িয়ে। স্লিপার কোচের অবস্থা জেনারেল কোচের থেকেও বাজে ছিল। ভারতীয় রেলের তরফ থেকে আরও বেশি ট্রেনের আশা করেছিলাম।
যাই হোক ঝুসি (Jhusi) স্টেশনে নেমে খাওয়া দাওয়া করে রাত কাটানোর জন্য ঘর দেখতে বেড়িয়ে পড়লাম, অবশেষে প্রায় ৬ ঘণ্টা পরে স্থানীয় এলাকায় ৮০০০ টাকা দিয়ে এক রাতের জন্য মেঝে তে চার জনের ব্যবস্থা হলো। সঙ্গে বয়স্ক মা থাকায় তাঁবুর যোগাযোগ আমরা কেউ করিনি। কিন্তু হ্যাঁ অবশ্যই অনেক তাঁবু চোখে পড়েছে স্নান করতে যাওয়া এবং ফেরার সময়। রাত ২-২:৩০ টের সময় রওনা দিলাম শাহী স্নানের উদ্দ্যেশ্যে। আমাদের থাকার জায়গা থেকে দূরত্ব ছিল ৩ কিমির মত। সময় যত বেড়েছে মানুষের ঢল তত গাঢ় হয়েছে।
প্রাচীন সঙ্গম ঘাটের উদ্দেশ্যে স্নানের জন্য হাঁটতে গিয়েও বয়স্কা মায়েদের কথা ভেবে আমি আর অভীক পিছুপা হলাম। হয়তো সত্যিই ভগবান আমাদের বাঁচিয়ে নিলেন, না হলে পদপিষ্ট হয়ে যাওয়া মৃতের তালিকায় আমাদের নাম থাকতো। অনেক পরিশ্রমের পর অবশেষে স্নান করেছি ব্রিজ নম্বর ২৬ থেকে ২৭ এর মাঝামাঝি সেক্টর ২২ এর মধ্যে। ঠিক যেভাবে মোহনবাগান গত বছর ISL Shield এর final-এ কামিন্সের পা দিয়ে জয়ের গোলটি করেছিল আমরাও অনেক প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে সময়মতো ব্রহ্ম মুহূর্তে সবাই এক এক করে পুণ্য স্নান সেরে নিলাম।
তবে কিছু ব্যর্থতা আমার চোখে বেঁধেছে :—
১) প্রশাসন সমস্ত ভিড় সামলাতে ব্যর্থ।
২) নদীর ধারে ধারে আরও গার্ডের ব্যবস্থা করা, আরও বেশি মাইকিং ও প্রতি ২০-৩০ মিটার অন্তর প্রত্যেক সেক্টরে বড় ম্যাপ লাগানো থাকলে অনেক যাত্রীদের বুঝতে আরও বেশি সুবিধা হত
৩) ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। যেখানে যেখানে ক্রসিং বা গাড়ি লেন চেঞ্জ করছে সেখানে পর্যাপ্ত বাহিনী ও তাদের দ্বারা সেটা নিয়ন্ত্রণ ততটা চোখে পড়েনি; ছিলনা বলা বাহুল্য।
৪) আর যদি ঠিক ম্যাপের মতই বড় বড় ডিজিটাল স্ক্রীন-এ কিছু দূরত্ব অন্তর animated videography দ্বারা ব্যবস্থাটা একটু পরিচালনা করা হতো তাহলে আশা করি ভিড় একটু হলেও সঠিকভাবে পরিচালনা করা যেত।
এগুলো ঠিক প্রশাসনের ব্যর্থতা বলবো না ফুটবলের ভাষায় লাল কার্ড তা আপনারই ঠিক করুন।
ফেরার সময় যে স্টেশনে ( Jhusi) নেমেছিলাম সেখানে মানুষ ঢুকতেই পারছেনা। অনেক আগে থেকে পুলিশ আটকে দিচ্ছে, স্টেশন চত্বরে প্রবেশ করতেই দিচ্ছে না, একমাত্র ট্রেন এলে তবেই যেতে দিচ্ছে, তাও ২-৩ মিনিট আগে ব্যারিকেড খুলে দিচ্ছে। স্টেশন চত্বর থেকে প্রায় ১৫০-২০০ মিটার দূরে এই আটক করা হয়েছে, পুলিশের দাবি এটি ভিড় আটকানোর জন্য। কিন্তু তার ফলে কতটা আটকানো গিয়েছে সেটা প্রশ্ন।
প্রয়াগরাজ চেওকি বা রামবাগ বা প্রয়াগরাজ স্টেশনের কথা জানিনা, কতটা কি বা কত দূরত্বে এই আবরণীর সৃষ্টি হয়েছিল সেটিও আমাদের কাছে অধরা। এই প্রতিবেদন লেখার সময় আমি পাটনা যাওয়ার পথে লিখছি। আমাদের বাসের টিকিট ছিল, কিন্তু বাস আগের দিন আসেনি। কেটে কেটে আমরা গাড়ি ভাড়া করে এগোচ্ছি বাড়ির উদ্দেশ্যে।
তাই আগামী শাহি স্নানের জন্য যারা আসবেন খুবই ভেবে চিনতে আসবেন। চেষ্টা করবেন JHUSSI রেল স্টেশনের কাছে থাকতে আর সেক্টর ২২ এর মধ্যে ব্রিজ নম্বর ২৬ থেকে ২৯ এর মধ্যে কোথাও একটা স্নান করতে কারণ ওইদিকে জল পরিষ্কার ও ভিড় অনেকটাই কম।
ধন্যবাদ।