Advertisement

Roi Roi Binale Review: কলকাতার সিনেমা হলেও জুবিনের নামে জয়ধ্বনি, 'আধা-বাঙালি' শিল্পীর শেষ সিনেমা কেমন হল?

কলকাতায় অসমীয়া সিনেমা কারা দেখতে আসবে? মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল প্রশ্নটা। অ্যাপে টিকিট বুক করতে গিয়ে দেখলাম প্রায় ফাঁকা হল। সিনেমা হলের 'সুবিধেজনক' জায়গাগুলোতে দুটো করে টিকিট বুক করা রয়েছে। এলেবেলে সিনেমার ক্ষেত্রে কলকাতায় সাধারণত যেমনটা হয়। কিন্তু রবিবার সামান্য দেরিতে নিউমার্কেটের পুরোনো সিঙ্গলক্রিনের অন্ধকারে পৌঁছে সেই ভুল ভাঙল।

গ্রাফিক্স: সৌমিক মজুমদারগ্রাফিক্স: সৌমিক মজুমদার
সুকমল শীল
  • কলকাতা ,
  • 03 Nov 2025,
  • अपडेटेड 6:07 PM IST
  • জুবিনের সিনেমায় নাম রাহুল। ছোট্ট রাহুলকে স্কুলের গানের মাস্টারের কাছে দিতে আসেন জুবিনের মা।
  • গানের মাস্টার ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়। জুবিনের গান শুনে মুগ্ধ হয়ে যান ভিক্টর।

কলকাতায় অসমীয়া সিনেমা কারা দেখতে আসবে? মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল প্রশ্নটা। অ্যাপে টিকিট বুক করতে গিয়ে দেখলাম প্রায় ফাঁকা হল। সিনেমা হলের 'সুবিধেজনক' জায়গাগুলোতে দুটো করে টিকিট বুক করা রয়েছে। এলেবেলে সিনেমার ক্ষেত্রে কলকাতায় ছুটির দিনে সাধারণত যেমনটা হয়। কিন্তু রবিবার সামান্য দেরিতে নিউমার্কেটের পুরোনো সিঙ্গলক্রিনের অন্ধকারে পৌঁছে সেই ভুল ভাঙল। শো রীতিমতো হাউসফুল। নিজের সিট খুঁজে পেতে পেতে পর্দায় তাকিয়ে যা বুঝলাম, প্রথম সিনই চলছে। নিজেকে 'আধা বাঙালি' বলা জুবিন গর্গ এক বৃষ্টিভেজা রাতে নতুন শহরে পা রাখছেন। 

চারদিকে প্রায় সকলেই অসমের ভাষায় কথা বলছেন। সপরিবারে এসেছেন জুবিন গর্গের শেষ সিনেমা দেখতে। এত নর্থ ইস্টের মানুষ কলকাতায় থাকেন! একটু অবাক লাগল। একটু পর যা বুঝলাম, রয়েছেন কলকাতার বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মরত মানুষ। কারও দেশের বাড়ি শিলচর, কারও গুয়াহাটি। রয়েছেন শহরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পড়তে আসা জুবিনের 'দেশে'র ছাত্র-ছাত্রীরাও। 

এবার সিনেমার বিষয়ে আসা যাক। জুবিনের সিনেমায় নাম রাহুল। ছোট্ট রাহুলকে স্কুলের গানের মাস্টারের কাছে দিতে আসেন জুবিনের মা। গানের মাস্টার ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়। জুবিনের গান শুনে মুগ্ধ হয়ে যান ভিক্টর। বলেন, জুবিন ওরফে সিনেমার বালক রাহুলকে রোজ যেন স্কুলে পাঠায় তার মা।সিনেমার প্রথমার্ধে উঠে আসে সম্ভবত উলফা গোষ্ঠী আক্রান্ত অসমের প্রসঙ্গ। স্কুলে বিস্ফোরণ হয়। দৃষ্টি হারান বালক জুবিন। এরপর সিনেমা এগোয়।

যুবক দৃষ্টিহীন জুবিন গর্গের ঘরের পাশে মদের আসর বসায় অসমের এই সময়ের সবথেকে বড় সঙ্গীতশিল্পীর দল। জুবিন ঘুম থেকে উঠে গিটার বাজায়। ঘটনাচক্রে আলাপ হয় এই সঙ্গীতশিল্পীর। সিনেমা পুরোটাই মিউজিক্যাল। একটি ট্যালেন্ট হান্ট সংস্থার কর্ণধার মউয়ের (মৌসুমি আলিফা) সঙ্গে আলাপ হয় দৃষ্টিহীন জুবিনের। মউ আবার ওই সঙ্গীতশিল্পী জয় কাশ্যপের বাগদত্তা। গল্প এগোয়। 

এরপর একজন অন্ধ সঙ্গীতশিল্পীর সম্পর্কের টানাপোড়েন। গান, ঈর্ষা, প্রেম, সাফল্য ইত্যাদি নিয়ে ছবি এগোয়। তবে ছবি বিয়োগান্তক নয়। মিলনান্তক। অভিনয় সকলেই মোটামুটি ভালোই। বিশেষ করে মৌসুমি আলিফা ভালো অভিনয় করেছেন। ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের চরিত্রে ঠিকঠাক। শুধুমাত্র ৫ শতাংশ দেখতে পাওয়া যাবে, এমন একটা সাদা লেন্স চোখে লাগিয়ে জুবিন গর্গ কাজ করেছেন একজন দৃষ্টিহীন গায়কের ভূমিকায়। তাঁর অভিনয়ও ভালো। বহু অসমীয়া সিনেমায় কাজ করেছেন। জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন সঙ্গীত পরিচালনার জন্য। আমার মতে, সিনেমার সেরা গান 'মোর মন'। মিউজিক লাভাররা চাইলে এই সিনেমা দেখতে আসতেই পারেন। দুর্দান্ত ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক। 

Advertisement

'শেষ বলে কিছু নেই' ছবি শেষ হওয়ার পর স্ক্রিনে লেখা উঠল। এরপর রই রই বিনালে টাইটেল সং-এর একটা অন্য ভার্সন, সঙ্গে শুটিংয়ের বিভিন্ন দৃশ্য। সমাজমাধ্যমে বহু রিল দেখা যাচ্ছে নর্থ ইস্টের মানুষরা হলে বসে কাঁদছেন। কলকাতার হলে তেমন কিছু হচ্ছে, দেখতে হলের চারদিকে চোখ ঘোরাতে হল। তাজ্জব! চোখ মুছছেন বহু মহিলা-পুরুষ। ভারাক্রান্ত। আমার পাশের সিটের দুজন তরুণী চোখ মুছছেন। চোখে রুমাল চেপে বলতে শুনলাম, 'দাদা তোমাক খুব ভাল পাউ। জয় জুবিনদা...।' 

বেরোনোর সময় একজন দর্শক সুমিত বড়ুয়াকে জানতে চাইলাম 'রই রই বিনালে' কথাটার মানে কী? তিনি বললেন, 'রই মানে কাঁদা। রই রই বিনালে মানে কাঁদতে কাঁদতে চলে যাওয়া, বা ফুরিয়ে যাওয়া।' এক লোকজন কাঁদছে কেন, শিল্পীর মৃত্যুর শোক? সুমিত বললেন, 'আমার মনে হয়, জুবিনদা আরও একটাও নতুন গান গাইবেন না। জুবিনদা আর নেই। এটাই শেষ কাজ। এটা ভেবেই মানুষ কাঁদছেন।'

সিনেমা হলের পুরোনো কর্মী রাজু বললেন, 'কলকাতায় শেষ করে অসমীয়া সিনেমা লেগেছে আমার মনে নেই। এটা লাগানো হয়েছে, রোজই ভিড় হচ্ছে। কলকাতার যারা জুবিনের ফ্যান তাঁরা আসছেন।'

Read more!
Advertisement
Advertisement